শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: চল্লিশোর্ধ্ব অপ্রকৃতিস্থ একজন ভাবলেশহীন নারী। উষ্কখুষ্ক চুল। ছয় দিনের নবজাতককে বুকের সঙ্গে লেপ্টে ধরে মা দুধ খাওয়াচ্ছেন কর্তব্যরত গাইনি চিকিৎসকের কক্ষে। উৎসুক রোগীরা দেখছেন আর আফসোস করছেন। তাদের কাছে ‘পাগলি’ হিসেবে পরিচয় পাওয়া নাম-ঠিকানাহীন ওই নারী কোনো পুরুষের লোলুপের শিকার তা নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছিলেন। অজ্ঞাতনামা পুরষটিকে গালমন্দও করছিলেন তারা। ওই নারীর চেয়ে তার নবজাতক কন্যাসন্তানটিকে নিয়েই উদ্বিগ্ন সবাই। অনেকে কন্যাটিকে দত্তক নিতে চাইলেও আইনি জটিলতার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারী ও তার সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছে। তার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষ ছেড়ে দিলেও মা ও সন্তান বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করছেন। শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন। তাই স্থানীয় থানায় নারীর জন্য সাধারণ ডায়েরিসহ সমাজসেবা অফিসকেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। অন্যান্য রোগীর সমস্যা হওয়ায় গাইনি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষেই বিছানা পেতে তাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। তার দেখভাল করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্সের পাশাপাশি আয়াদেরও তাকে নজরদারিতে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১টায় সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নবজাতককে দুধ খাওয়াচ্ছেন ওই নারী। কথা বলতে চাইলে শুধু হাসছিলেন। নাম ও পরিচয় কী জিজ্ঞেস করা হলেও শুধু হাসেন। এ সময় কয়েকজন রোগী তাকে দেখছিলেন। সদর উপজেলার শ্রীনাথপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, পাগল নারীটি রাতে সন্তান রেখে দুইবার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা তাকে ফিরিয়ে এনে সন্তানের পাশে রেখেছি। তার নাম ও পরিচয় জানার চেষ্টা করলেও কিছু বলেননি। শুধু হাসেন। আবোলতাবোল বকেন। শিশুটির কী হবে এটা নিয়ে আমরাও চিন্তিত।
ওই ওয়ার্ডে পুত্রবধূ নিয়ে আসা আমেনা বিবি বলেন, যে এই পাগলির সর্বনাশ করছে আল্লা তার সর্বনাশ করুক। এত সুন্দর শিশুটির এখন কী হবে। নারীর অভিভাবক খুঁজে অন্তত শিশুটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া উচিত। না হলে ফুটফুটে শিশুটির সমস্যা হবে বলে জানান তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অজ্ঞাতনামা ওই নারীকে তারা সিজোফ্রেনিয়া রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার পরিচয় উদ্ধারের জন্য সমাজসেবা অফিসের সঙ্গে কথা বলেছেন। নিজেরাও স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে কোনো অভিভাবকের সন্ধান মেলেনি এখনো। সুনামগঞ্জ সমাজসেবা অফিসের বালিকা এতিমখানা থাকলেও এখানে নবজাতক রাখার কোনো সুযোগ নেই বলে জানা গেছে।
সদর হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিজা বলেন, আমরা শিশুটি ও নবজাতকের খোঁজখবর নিচ্ছি। নারীর অভিভাবককে খোঁজা হচ্ছে। তা ছাড়া অনেকে নবজাতক শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এভাবে মায়ের কোল থেকে নবজাতককে দত্তক দিতে হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চিকিৎসকের সামনে তাকে ভবঘুরে হিসেবে প্রত্যয়ন করতে হবে। তারপর আদালতের মাধ্যমে দত্তক দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা যাবে। আমরা সবাই মিলে এই প্রক্রিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছি। ২৫০ শয্যার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের উপপরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ওই নারী ও তার চিকিৎসার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষ ছেড়ে দিয়ে তাদের সেবা চলছে। তবে বাথরুম ব্যবহারের বদলে ওই নারী বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা সমাজসেবা অফিস, থানা ও প্রশাসনকে অবগত করেছি।