রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: বাস বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে ট্রেনের ওপর। দূরের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা রেলস্টেশনে ভিড় করেছেন। ফলে ট্রেনের টিকিটের সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকা যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কিনতে সকালে সিলেট রেলস্টেশনে এসেছেন শাহ আমিনুর রহমান। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও টিকিট পাননি তিনি।
আমিনুর বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে আজ রাতে আমার ঢাকা যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু টানা দুদিন রেলস্টেশনে এসেও টিকিট পাইনি।’ধর্মঘটের কারণে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে জানিয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বলেন, দুইদিন ধরে ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী টিকিটের সরবরাহ নেই।
সড়ক পথে সিলেটের আশপাশে জেলাতে পৌঁছাতেও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। শনিবার সকালে নগরের হুমায়ুন রশিদ চত্বরে গিয়ে দেখা যায় সড়কের পাশেই দাঁড় করিয়ে রাখা গোটা বিশেক মাইক্রোবাস ও সিএনজি অটোরিকশা। মোটরবাইকও আছে কয়েকটি।গাড়িগুলোর পাশে দঁড়িয়ে চালকরা হাঁক দিচ্ছেন- ‘এই মলইবাজার, মলইবাজার’। মলইবাজার মানে মৌলভীবাজার। কেউ কেউ আবার সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ছেন- কই যাইতা?ধর্মঘটের কারণে শনিবারও বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল। ফলে এসব গন্তব্যে পৌঁছাতে এসব গাড়িতেই ভিড় করছেন যাত্রীরা। এই সুযোগে ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা চালকরা।
সিলেট থেকে মৌলভীবাজারের বাস ভাড়া ৯০ টাকা। অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া লাগে ২০০ টাকা। তবে শনিবার মৌলভীবাজার যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাস চালকরা জনপ্রতি ৩৫০, অটোরিকশা চালকরা ৪০০ ও বাইক রাইডাররা ৭০০ টাকা করে ভাড়া দাবি করছেন।মৌলভীবাজার যাওয়ার জন্য সকালে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে এসেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুতপা দাশ। তিনি বলেন, ‘কালীপূজার জন্য বুধবার সিলেটে বাবার বাড়ি এসেছিলাম। ধর্মঘটের বিষয়টি তখন জানতাম না। এখন এসে বিপদে পড়ে গেছি। আজ দিগুণের চেয়েও বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ যাওয়ার জন্য হুমায়ুন রশিদ চত্বরে আসা আব্দুল কাদির বলেন, ‘এক আত্মীয়ের মৃত্যুর খবরে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, একে তো বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে। তারওপর মহাসড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই অটোরিকশায় করে দূরের গন্তব্যে যেতে হবে।’
একইভাবে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এই এলাকায়ও ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন মাইক্রোবাস, অটোরিকশা চালক ও বাইক রাইডাররা। সুনামগঞ্জ যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ভিড় করেছেন এখানে। যথারীতি এই রুটের চালকরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগে মাইক্রোবাসে করে সুনামগঞ্জ যেতে জনপ্রতি ভাড়া লাগত ২০০ টাকা। তবে শনিবার মাইক্রোবাস চালকরা জনপ্রতি ৪০০ টাকা, অটোরিকশায় ৫০০ টাকা ও বাইক রাইডাররা ১০০০ টাকা দাবি করছেন।
চৌহাট্টায় যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মোটরসাইকেল রাইডার সেবুল আহমদ। ধর্মঘটের কারণে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত নগরের ভেতরেই যাত্রী পরিবহন করি। দূরের গন্তব্যে যাই না। একবার সুনামগঞ্জ যাওয়া আসা করলেই সারা দিন শেষ হয়ে যাবে। তাই সারা দিনের আয় এই এক ট্রিপেই তুলতে হবে। এ কারণে কিছু বাড়তি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে।কেবল এই দুই এলাকা নয়, শনিবার সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। বাস ট্রাক বন্ধ থাকায় সড়কজুড়ে মাইক্রোবাস অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের রাজত্ব। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যক্তিগত যানবাহনই ব্যবহৃত হচ্ছে গণপরিবহন হিসেবে।
সকালে সিলেটের কদমতলি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, আগের দিনের মতো আজও টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। দূরপাল্লার বাসের পাশাপাশি আন্ত জেলা বাস-মিনিবাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে।টার্মিনাল এলাকার বেশিরভাগ বাস কাউন্টারও বন্ধ রয়েছে।ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সারা দেশের মতো সিলেটেও শুক্রবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকেন বাস মালিকরা।
মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার কথা জানিয়েছেন সিলেট বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম।তিনি বলেন, ‘ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী। এতে গরিব মানুষ সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়বে। মানুষের স্বার্থেই আমরা ধর্মঘট ডেকেছি।’
তিনি বলেন, যে হারে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে তাতে গাড়ি চালিয়ে লাভের চেয়ে লোকসানই হবে। সিলেট থেকে জকিগঞ্জ বাস নিয়ে যেতে এখন প্রায় তিন হাজার টাকার ডিজেল লাগবে। অথচ পুরো গাড়ি ভর্তি করে যাত্রী তুললেও ৩ হাজার টাকা উঠবে না। যেহেতু লোকসান হবে তাই আমরা বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।