রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৭ অপরাহ্ন
বিনোদন ডেস্ক : ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তই একগুচ্ছ সিনেমার রিলিজের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন। হু-হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। আর ঠিক এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বিগ বাজেট সিনেমাগুলি রিলিজ করার পক্ষপাতী নন নির্মাতারা। গত দেড় বছরে অতিমারীর কোপে প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা বেজায় লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। একুশে আশার আলো দেখতে না দেখতেই ফের তা নিভন্ত! কারণ, ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে মোটা অঙ্কের তারকাখচিত ছবিগুলি রিলিজ করতে চাইছেন না নির্মাতারা। দর্শক-ই বা হলমুখো হবেন কোন আশায়?
যে সমস্ত বলিউড-টলিউড সিনেমাগুলি দেখার অপেক্ষায় মুখিয়ে রয়েছেন দর্শকরা। ফের অতিমারীর কোপে সেই ছবিগুলির রিলিজে খাঁড়ার কোপ ঝুলছে। প্রথমেই আসা যাক বাংলা ছবির কথায়।
গতবারের মহামারির কোপ কাটিয়ে জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে বহুপ্রতীক্ষিত ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’র। দর্শকরাও অপেক্ষায় রয়েছেন এই সিনেমার জন্য। কারণ, ছবির গল্পের প্রতিপাদ্য বিষয় ধর্ম, জাতি আর দ্বিধাবিভক্ত সমাজ। জ্বলন্ত বাস্তব সমস্যার প্রেক্ষাপটে তৈরি সিনেমা যে রাজের ফিল্মি কেরিয়ারের মোড় ঘোরাবে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বাদ সেধেছে করোনা। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আপাতত প্রচারের কাজ বন্ধ রেখেছেন।
অন্যদিকে, ১৪ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার কথা আবীর চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় ও তনুশ্রী চক্রবর্তী অভিনীত ‘আবার বছর কুড়ি পরে‘। ২১ তারিখ প্রেক্ষাগৃহে আসছে ‘স্বস্তিক সংকেত‘। যে ছবিতে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, নুসরাত জাহান, গৌরব চক্রবর্তীর মতো অভিনেতারা। রাজ্যে হু-হু করে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে প্রেক্ষাগৃহের দরজায় ফের তালা ঝুলবে নাকি, সেই আশঙ্কায় রয়েছে টলিপাড়াও। আগামী ১৫ তারিখ অবধি আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এরমাঝে পরিস্থিতি বেগতিক হলে ফের অতিমারীর প্রথম ঢেউয়ের মতো হল বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও, মায়াকুমারীর (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, আবীর চট্টোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত) মতো বড় বাজেটের ছবিও অতিমারীর কোপে মুক্তির আলো দেখতে পারেনি এখনও। সবমিলিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে টলিপাড়া।
আপাতত জানুয়ারিতে এই তিনটে ছবিই রিলিজের কথা রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে রিলিজের অপেক্ষায় দিন গুণছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত তথা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন‘ এবং যিশু সেনগুপ্ত অভিনীত ‘বাবা বেবি ও‘র মতো ২টি ছবি। করোনার রোষে এই ছবিগুলির রিলিজেও খাঁড়া ঝুলছে।
বলিউডে লোকসানের পরিমাণ আরও চারগুণ। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল, বিহার, হরিয়ানার মতো একাধিক রাজ্যে প্রেক্ষাগৃহের দুয়ার বন্ধ। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিলনাড়ুতে ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে চলছে হলগুলো, এমতাবস্থায় বলিউড ছবি রিলিজ করলে যে বক্স অফিসে খুব বেশিদূর দৌড়নো যাবে না, সেটাই স্বাভাবিক।
‘আরআরআর‘, ‘রাধে শ্যাম‘, ‘পৃথ্বীরাজ‘-এর মতো তিন-তিনটে বিগ বাজেট সিনেমার রিলিজ পিছিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে শাহিদ কাপুরের বহু প্রতীক্ষিত স্পোর্টস ড্রামা ‘জার্সি‘ও। আলিয়া ভাট, রামচরণ, এনটি রামা রাও জুনিয়রের মতো একাধিক বড় তারকা মুখ, উপরন্তু একশো কোটির ওপর বাজেট, এই ছবি এমতাবস্থায় রিলিজ করলে যে লোকসানের মুখ দেখতে হবে, সেই হিসেবে গলদ করেননি প্রযোজক। অতঃপর, উৎসুক দর্শকরা বর্তমানে কেবল ছবির ট্রেলার দেখেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন!
অন্যদিকে সালমান খান অভিনীত ‘রাধে শ্যাম’ও মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অতিমারীর কোপে সিদ্ধান্ত বদল করেছেন ভাইজান। পাশাপাশি অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘পৃথ্বীরাজ’-এর ট্রেলার দেখে সিনেদর্শকরা ঠিক যতটা ফুটছিল, করোনা তাঁদের সব আনন্দ মাটি করে ফেলেছে। উল্লেখ্য, এই ছবির দৌলতেই বলিউডে পা রাখতে চলেছিলেন মানুষী চিল্লার। অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর ডেবিউ-ও পিছল। কারণ, এমতাবস্থায় ‘পৃথ্বীরাজ’ আপাতত রিলিজ করছে না।
পাশাপাশি, ‘জার্সি’তে এক ব্যর্থ ক্রিকেটারের গল্প বলতে নিজেকে পুরো নিংড়ে দিয়েছিলেন শাহিদ কাপুর। গত ২ বছর ধরে নিজের সেই কসরত বড়পর্দায় দেখার অপেক্ষায় তিনি। কিন্তু এবারও শিকে ছিঁড়ল না শাহিদের ভাগ্যে। ৩১ ডিসেম্বর রিলিজের কথা ছিল। কোভিডের বাড়বাড়ন্তের জন্য সেটা এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছল। কারণ, নির্মাতারা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে এই ছবি রিলিজ করতে নারাজ।