শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে নতুন রেকর্ডের কথা জানিয়েছেন ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের কাছে পরীক্ষা চালানোর পর এ তথ্য জানিয়েছে জয়েন্ট ইউরোপিয়ান টোরাসের বিশেষজ্ঞদের একটি দল।
ব্রিটেনের অ্যাটমিক এনার্জি অথরিটি বলেছে, পাঁচ মিনিটের ওই পরীক্ষায় ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, যা ১৯৯৭ সালে চালানো পরীক্ষায় উৎপাদিত শক্তির দ্বিগুণ।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ফিউশন বিক্রিয়া ব্যবহার করে কম দামে ও পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদন সম্ভব। বিজ্ঞানীদের আশা, অদূরভবিষ্যতে শক্তির উৎস হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে।
বিবিসি লিখেছে, সত্যি সত্যি যদি পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটানো যায়, তার মধ্য দিয়ে দৃশ্যত অসীম পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করা যাবে পরিবেশবান্ধব উপায়ে। এ প্রক্রিয়ায় কার্বন নির্গামন বা তিজস্ক্রিয় নিঃসরণের ঝুঁকিও তেমন বাড়বে না।
জেইটি ল্যাবের গবেষকরা তাদের এবারের গবেষণায় ৫ সেকেন্ডে ৫৯ মেগাজুল (১১ মেগাওয়াট) শক্তি তৈরি করতে পেরেছেন, যা ১৯৯৭ সালে তাদের একই ধরনের গবেষণায় উৎপাদিত শক্তির দ্বিগুণেরও বেশি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের গবেষণায় যে পরিমাণ শক্তি তৈরি করা গেছে, তা দিয়ে ৬০ কেটলি পানি গরম করা যাবে। সেই অর্থে এটা অনেক বড় পরিমাণ শক্তি হয়ত নয়, তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিজ্ঞানীরা একটি কৌশল উদ্ভাবন করতে পেরেছেন, যা দিয়ে আরও বড় আকারের ফিউশন রিঅ্যাক্টর তৈরি করা যাবে।
রিঅ্যাক্টর ল্যাবের হেড অব অপারেশনস ড. জো মিলনেস বলেন, ‘জেইটির এই গবেষণা আমাদের ফিউশন পাওয়ারের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিল। এ গবেষণায় আমরা এটাই দেখাতে পেরেছি যে, আমাদের যন্ত্রের মধ্যে আমরা অতি ক্ষুদ্র একটি নক্ষত্রের জন্ম দিতে পেরেছি এবং ৫ মিনিট সেটাকে ধরে রাখতে পেরেছি। এখানে যে পারফরম্যান্স আমরা দেখাতে পেরেছি, তা আমাদের পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে।’
জেইটি ল্যাবরেটরির এ গবেষণা চলছে ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টরের (আইটিইআর) কর্মসূচির অধীনে। দক্ষিণ ফ্রান্সে ওই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের গবেষণা এগিয়ে নিতে সমর্থন দিচ্ছে বেশ কয়েকটি দেশের একটি কনসোর্টিয়াম, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনও রয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, এই শতকের দ্বিতীয় ভাগেই নিউক্লিয়ার ফিউশন একটি নির্ভরযোগ্য জ্বালানি উৎস হয়ে উঠতে পারে, এই গবেষণার সাফল্য হয়ত সেটাই প্রমাণ করল।
ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদুৎকেন্দ্র তৈরি করলে তাতে গ্রিনহাউস গাস নির্গমণ হবে না। স্বল্পস্থায়ী তিজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হলেও তার পরিমাণ হবে খুবই সামান্য।
জেইটি ল্যাবরেটরির সিইও অধাপক ইয়ান চ্যাপমান বলেন, ‘যে গবেষণা আমরা শেষ করলাম, তা বাস্তবেও কাজ করার কথা। যদি তা কাজ না করে, তাহলে আইটিইআর লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন উঠবে।’