1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

কোভিড থেকে পাকাপাকি মুক্তি মিলবে কবে? – মৃন্ময় চন্দ

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১৯৬ বার পঠিত

ভ্যাকসিন-সংক্রমণ-অ্যান্টিভাইরালের গুঁতোয় নভেলকরোনা এমনিতেই কোণঠাসা, বিবর্তনকে হাতিয়ার করে সে ‘ফিটনেস ল্যান্ডস্কেপ’ খোঁজার চেষ্টা করবে টিকে থাকার ধান্ধায়। মানুষের শরীর হল সেই ‘ফিটনেস ল্যান্ডস্কেপ’।

ভাইরাস টিকে থাকতে চায়। তার অবলম্বন মানবশরীর। মাস্ক না পরার মতো আত্মঘাতী আচরণ থেকে মানুষ বিরত হলেই করোনাকেও পিছু হটতে হবে।

কোভিড পজিটিভ! তিন দিনের সামান্য জ্বর-সর্দি-কাশি। তার পরই ছুটি। ছাপোষা মানুষ মালুম পাচ্ছে না কেমন খেলা হল আজি ওমিক্রনের সনে? বেচারা করোনা, হালে পানি না পেয়ে লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে! ক’দিন আগেও রাস্তার মোড়ে লালবাতি জ্বেলে শকুনেরা সন্ধে দিচ্ছিল। আর আজ সন্ধে-টিভির আসরে সবজান্তা চিকিৎসকরা দা-ঠাকুরের মতো নিদান হাঁকছেন বরণডালা হাতে দুয়ারে দাঁড়িয়ে নাকি সাক্ষাৎ ‘হার্ড ইমিউনিটি’! ‘হার্ড ইমিউনিটি’র বান ডেকেছে বলেই না প্রায় সবাই দুটো প্যারাসিটেমল খেয়েই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন! একটু জ্বর-সর্দি-কাশি হবে, মধু দিয়ে দুটো তুলসীপাতা বেটে খেলেই দু’দিনে ফিট! সব শুনে, আঁতকে উঠে, বিশ্ববরেণ্য অতিমারি বিশারদরা বলছেন, মিসটেক, মিসটেক।

বছর দু-তিনেক ধ্বংসলীলার পর ১৯১৮-র ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ বা ২০০৯-এর ‘সোয়াইন ফ্লু’ রণে ভঙ্গ দিয়েছিল। ২০০৩-এর ‘সার্স’ বা ২০১২-র ‘মার্স’ও বছর তিনেকের বেশি স্থায়ী হয়নি। ইবোলা কিছুকাল বিরতি দিয়ে আবার আবির্ভূত হয়েছে। কাজেই কোন ভাইরাস কখন কী ধরনের আচরণ করবে তা বলা মুশকিল। নভেলকরোনার মত কোনও ঘাতক ভাইরাস সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে মানেই সে পাততাড়ি গোটাচ্ছে এমনটা ভাবা বাতুলতা। কোভিড তখনই এনডেমিক হবে সংক্রমিতের সংখ্যা যখন হবে নগণ্য, বহু-মানুষকে একলপ্তে পেড়ে নাভিশ্বাস ওঠাবে না হাসপাতালের, হাটবাজার-স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারি নিঃসংশয়ে খোলা যাবে। গুটিবসন্ত-পোলিও–ম্যালেরিয়া-হাম-মাম্পস, এনডেমিক সবই। কোভিড জাঁতাকলে টিকাকরণের গতি একটু শ্লথ হতেই পোলিও থেকে মাম্পস-মিজলস-রুবেলা দাঁতনখ বের করে আবার স্বমূর্তি ধারণ করতে শুরু করেছে। কোভিডের তুলনায় সব কটিরই মৃত্যুহার বহু গুণ বেশি।

হাম বা গুটিবসন্তের ভ্যাকসিন ‘স্টেরিলাইজিং ইমিউনিটি’ মারফৎ সারা জীবনের জন্য সুরক্ষা জোগায়। ছেলেবেলার কামড়টুকু বাদ দিলে পরবর্তীতে ভোগান্তির সম্ভাবনা থাকে না। মিউটেশন মারফৎ হাম বা গুটিবসন্তের ভাইরাস মুহুর্মুহু ভোল বদলায় না। এইচআইভি, হেপাটাইটিস-সি বা সার্স কোভ-টু, মিউটেশনে, প্রতি মুহূর্তে ভোল বদলাচ্ছে। ফলে কস্মিনকালেও কোভিডের বিরুদ্ধে ‘স্টেরিলাইজিং ইমিউনিটি’ মারফৎ জীবনবিমা সম্ভব নয়। সার্স কোভ-টু যে ভাবে বদলাবে, ভ্যাকসিনকেও তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বদলাতে হবে। ফাইজার/মডার্নার এমআরএনএ বা নোভাভ্যাক্স-এর মত স্বল্পমূল্যের ‘পিউরিফায়েড প্রোটিন ভ্যাকসিন’-এর সজ্জাক্রমকে কোভিডের ভোলবদলের সঙ্গে বদলানো সহজ। কোভিশিল্ড (অ্যাডেনোভাইরাল ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন) বা কোভ্যাক্সিনকে (ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভাইরাস ভ্যাকসিন) নিত্যনতুন কোভিড ভেরিয়েন্ট অনুসারী করে তোলা দুরূহ।

অনেকের অনুমান, ঋতুপরিবর্তনের সময়ে বাকি চার বিটা-করোনাভাইরাস ভাইবোন-কৃত ইনফ্লুয়েঞ্জার মত, নিরীহ-নিরুপদ্রব হতে চলেছে সার্স কোভ-টু। ২০১৯-২০-তে বাধ্যতামূলক ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকরণের পরেও খোদ আমেরিকায় ২২ হাজার জন মারা গেছেন সেই ইনফ্লুয়েঞ্জার সস্নেহ চুম্বনেই। দুবলা-পাতলা হয়ে কোভিড এনডেমিকে পর্যবসিত হলেও তার বিষদাঁত কিন্তু ভাঙবে না! ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হীনবল হয়ে কোভিড, সাধারণ রোগে পরিণত হলেও কিছু অভাগা তখনও গুরুতর অসুস্থ হবেন এবং মারাও যাবেন।

ওমিক্রন ঝড়ে পূর্ববর্তী কোভিড সংক্রমণ বা উৎকৃষ্ট এমআরএনএ ভ্যাকসিনের সৌজন্যে যে ধরনের ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’ মিলেছিল তা খড়কুটোর মত উড়ে গেছে। তাই তৃতীয় বুস্টার বা প্রিকশন ডোজের প্রয়োজন পড়ছে। ‘মেমরি বি সেল’ ওমিক্রনের ধাক্কায় বেপথু হয়ে পড়ায় পাততাড়ি গুটিয়েছে ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’। তার অনুপস্থিতিতে ‘সিডি-ফোর বা এইট প্লাস টি’ সেল গুরুতর অসুস্থতার সঙ্গে যুঝছে। শুধু ‘টি সেল’ নয়, IFI27 নামে একটি প্রোটিনও ডেল্টা বা ওমিক্রনকে খাপ খুলতেই দিচ্ছে না। ইউকে-র একটি হাসপাতালের ৬০ জন নার্স দিনরাত মরণাপন্ন কোভিড রোগীর সেবাশুশ্রূষা করার পরেও কোভিডে আক্রান্ত হওয়া তো দূরঅস্ত, কখনও কোভিড পজিটিভও হননি। ২০ জন সেরোনেগেটিভ নার্সের ‘টি সেল’-এর অভূতপূর্ব প্রাচুর্য পরিলক্ষিত হয়েছিল। ১৯ জনের শরীরে স্বাভাবিকের থেকে কিঞ্চিৎ বেশিই মিলেছিল IFI27 প্রোটিন। ‘টি সেল’ আর IFI27 প্রোটিনের সুরেলা যুগলবন্দিতে কী ভাবে হার মানল করোনা, তার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ ১০ই নভেম্বর ২০২১-র ‘নেচার’-এ।

শুরু থেকেই প্রচারের চড়া আলোর সবটাই শুষে নিয়েছে অ্যান্টিবডি, ‘টি সেল’ রয়ে গেছে নাথবতী অনাথবৎ হয়ে। অ্যান্টিবডি, কোষের যে আনাচেকানাচে ঢুকে কব্জা করতে পারছে না করোনাকে, টি সেল হরবখত সেখানে হানাদারি চালাচ্ছে। কোভিড-আক্রান্ত মুমূর্ষু কোষকে ধ্বংস করে, ‘টি সেল’ পাশের কোষে করোনার সিঁদ কাটা রোধ করছে। তাই ভ্যাকসিনের ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’ ফেল মারলেও রামদা হাতে ওমিক্রনকে কচুকাটা করছে ‘টি সেল’। অসুস্থতার হার সে কারণেই নগণ্য। চটজলদি ‘টি সেল’-এর হদিশ মেলা শক্ত। সিয়াটল, ওয়াশিংটনের ‘অ্যাডাপ্টিভ বায়োটেকনোলজি’র মতো কিছু সংস্থা ‘টি সেলের’ তত্ত্বতালাশে ঝাঁপিয়েছে। এর পর ‘টি সেল’-এর কর্মক্ষমতার চিত্রটা আরও সুস্পষ্ট হবে। অনুসিদ্ধান্ত সুতরাং, কোভিড কবে এনডেমিক হবে তা বলা একেবারেই অসম্ভব। আর ‘হার্ড ইমিউনিটি’ নেহাতই ভিত্তিহীন কপোলকল্পনা।

প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কোভিডের জ্বালায় কি দু’দণ্ড শান্তি কোনও দিনই মিলবে না? আরএনএ নভেলকরোনা একতন্ত্রী হওয়ায় মানুষের দেহে প্রতিলিপিকরণের সময় তাড়াহুড়োয় অজস্র ভুলভ্রান্তি বা মিউটেশন স্বাভাবিক। কিন্তু সার্স কোভ-টু, ডিএনএ ভাইরাসের মতো ‘প্রুফ-রিডিং’-এ সক্ষম। বর্তমানে নভেলকরোনার মতো আরএনএ ভাইরাসদের ‘সোয়ার্ম’ বা ঝাঁক বেঁধে ‘মিউট্যান্ট ক্লাউড’ তৈরির অদ্ভুত প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে অজস্র মিউটেশনের সবটাই প্রায় নিখুঁত লক্ষ্যভেদী হয়ে উঠছে। ভয়/বিপদ/আশঙ্কার কারণ সেটাই। আমাদের দেশে বা অন্যত্রও গায়ে ডোরাকাটা ‘এডিস অ্যালবোপিক্টাস’ মশা কখনও চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস বহন করত না। এই ভাইরাসও ‘মিউট্যান্ট ক্লাউড’ তৈরির পরে ‘এডিস ইজিপশাই’কে ছেড়ে অ্যালবোপিক্টাস-এর দেহে বাসা বাঁধছে। কেনিয়া ছেড়ে অবলীলায় অ্যালবোপিক্টাসকে সঙ্গী করে পাড়ি জমাচ্ছে মাদাগাস্কার, এমনকী সুদূর আমেরিকাতেও। এবং সেখানকার ৯৯ শতাংশ মানুষের শরীরে কেনিয়ার আদি অকৃত্রিম চিকুনগুনিয়া স্ট্রেনটিই মিলছে। কুকুরকে ছেড়ে র৵াবিস ভাইরাস, সান ফ্রান্সিসকোর হামবোল্ট কাউন্টির ধূসর শেয়ালদের পেড়ে ফেলছে। চিক বা র৵াবিস ভাইরাস যে কোনও সময় অতিমারি সৃষ্টি করতে পারে স্রেফ ‘মিউট্যান্ট ক্লাউড’-এর গ্রহবৈগুণ্যে।

বিরুদ্ধ পরিবেশকে মানিয়ে ‘ইভোলুশনারি ফিটনেস’-এ ভাইরাসরা অবধ্য-অদম্য হয়ে উঠছে। তবে আদিগন্ত বিস্তৃত অন্ধকারের মধ্যে ‘ফ্রেড হাচিনসন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টার’-এর টাইলর স্টার বা জেসি ব্লুমরা সার্স কোভ-টুর ‘ডিপ মিউটেশনাল স্ক্যানিং’-এ হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মত কিছু রুপোলি রেখার ঝলকানি দেখতে পেয়েছেন। ভ্যাকসিন বা সংক্রমণজাত অ্যান্টিবডির কষাঘাত এড়াতে, স্পাইকপ্রোটিন, মিউটেশনের আশীর্বাদে ক্ষুরধার হয়ে উঠলেও ‘রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন’ থেকে যাচ্ছে অপাপবিদ্ধ। অ্যান্টিবডির গোলাগুলিকে সামলাতে স্পাইকপ্রোটিনের মিউটেশনের ঢাল প্রায় সম্পৃক্তিতে উপনীত। স্পাইকপ্রোটিনের নতুন মিউটেশন প্রায় অসম্ভব। বাকি থাকল ‘রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন’। ‘ডিপ মিউটেশনাল স্ক্যানিং’-এ পরিস্ফুট সর্বাধিক ৪০০০টি আপাদমস্তক নিরীহ ‘আরবিডি’ মিউটেশনে, নভেলকরোনা কখনওই খুনে মারকুটে হয়ে প্রলয় বাঁধাতে পারবে না। মাত্রাতিরিক্ত স্পাইক মিউটেশন নভেলকরোনার সংক্রমণকে ঊর্ধ্বগামী করলেও অসুস্থতা বাড়াতে পারছে না। পোলিও-মাম্পস-হামের মতো হয়তো বা একটা ভ্যাকসিনেই ভবিষ্যতে জব্দ হবে কোভিড। শৈশবে একটু ভোগালেও তার পরে চিরতরে নিষ্কৃতি মিলবে করোনার হাত থেকে।

সার্স কোভ-টুর মূল উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব বংশবিস্তার, দলে দলে মানুষ মারা পড়লে কখনওই তার স্বার্থসিদ্ধি হবে না। ভ্যাকসিন-সংক্রমণ-অ্যান্টিভাইরালের গুঁতোয় নভেলকরোনা এমনিতেই কোণঠাসা, বিবর্তনকে হাতিয়ার করে সে ক্রমাগত ‘ফিটনেস ল্যান্ডস্কেপ’ খোঁজার চেষ্টা করবে স্রেফ টিকে থাকার ধান্ধায়। মানুষের শরীর হল সেই লোভনীয় ‘ফিটনেস ল্যান্ডস্কেপ’। মাস্ক পরে, দূরত্ব বজায় রেখে, সাবানে হাত ধুয়ে, আত্মঘাতী আচরণ থেকে বিরত থাকতে পারলেই নভেলকরোনা তার ঈপ্সিত ‘ফিটনেস ল্যান্ডস্কেপ’-এর নাগাল পাবে না। পিছু হটা ছাড়া তখন কোনও গত্যন্তর থাকবে না নভেলকরোনার।

 

লেখক: জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কোভিড স্বাস্থ্যবিধিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..