1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

মোদীর আসন বারাণসী বিপর্যস্ত, ক্ষোভে ফুটছে মানুষ

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১
  • ২২৮ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক: ভারতে এখন কোভিডের যে তাণ্ডব চলছে, তার অন্যতম প্রধান শিকার হিন্দু তীর্থস্থান বারাণসী এবং তার আশপাশের অঞ্চল। শুধু বারণসী শহরে নয়, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রামেও। চিকিৎসা ছাড়াই ঘরে বসে ঐ সব গ্রামের বাসিন্দারা মারা যাচ্ছেন। উত্তর প্রদেশ রাজ্যের এই অঞ্চলের ক্রুদ্ধ বাসিন্দাদের অনেকে এখন খোলাখুলি প্রশ্ন করছেন এই চরম দু:সময়ে তাদের এমপি নরেন্দ্র মোদী- ভারতের প্রধানমন্ত্রী – লাপাত্তা কেন।

কোভিডের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ২,২০,০০০। কোভিডে সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম বারাণসীতে হাসপাতাল অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে, রোগীরা হাসপাতালে গিয়ে বেড পাচ্ছেন না, অক্সিজেন নেই, অ্যাম্বুলেন্স নেই। এমনকি কোভিড টেস্টের ফলাফল পেতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। গত দশদিনে, বারাণসী এবং আশপাশের অঞ্চলের ওষুধের দোকানগুলোতে ভিটামিন, জিংক বা প্যারাসিটামলের মত মামুলি ওষুধ পর্যন্ত মিলছে না।”হাসপাতালে একটা জায়গা এবং অক্সিজেনের জন্য সাহায্য চেয়ে মিনিটে মিনিটে টেলিফোন আসছে,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন স্থানীয় একজন ডাক্তার। ”খুব সাধারণ ওষুধও দোকানে পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে অনেক রোগী মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও খাচ্ছেন। ক্ষুব্ধ মানুষজন বলছেন যে মানুষটিকে ভোট দিয়ে তারা এলাকার এমপি নির্বাচিত করেছিলেন সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিকে পা পর্যন্ত মাড়াচ্ছেন না।

কীভাবে হলো এই ট্রাজেডি?

বারাণসী শহরের বাসিন্দারা বলছেন মার্চে প্রথম অশনি সঙ্কেত দেখা দিতে শুরু করে। দিল্লি এবং মুম্বাইতে সংক্রমণ বাড়ার পর ঐসব শহরে যখন বিধিনিষেধ আরোপ শুরু হয়, হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক ভিড় উপচে পড়া বাসে, ট্রাকে, ট্রেনে করে বারাণসী এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে তাদের বাড়িতে ফিরে আসে। অনেক মানুষ আবার ২৯শে মার্চ হোলি উদযাপনের জন্যও আসে। এরপর ১৮ই এপ্রিল গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতেও শত শত মানুষ দিল্লি, মুম্বাই থেকে হাজির হয়। বিশেষজ্ঞরা বার বার সাবধান করলেও কেউ তাদের কথায় কান দেয়নি। এখন তার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে বারাণসী অঞ্চলকে। উত্তর প্রদেশ রাজ্যে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাজ্যের কমপক্ষে ৭০০ শিক্ষক।

সংক্রমণ বাড়া শুরু হলে বারাণসীর হাসপাতালগুলো দ্রুত কোভিড রোগীতে ভরে যায়। ফলে সিংহভাগ মানুষকে এখন নিজ দায়িত্বে এই মহামারি সামলাতে হচ্ছে। শহরের ২৫ বছরের ব্যবসায়ী রিশাব জৈন বিবিসিকে বলেন তার ৫৫ বছরের পিসি অসুস্থ হয়ে পড়লে অক্সিজেন সিলিন্ডার রি-ফিল করে আনতে তাকে প্রতিদিন ৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ”সিলিন্ডারে অক্সিজেন ৮০ শতাংশ কমে গেলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। যখন হাসপাতালে কোনো জায়গা পেলাম না, পরিবারের সবাই টেলিফোন করে করে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড়ের চেষ্টা শুরু করি। ১২/১৩ ঘণ্টা ধরে ২৫টি নম্বরে ফোন করেও কোন লাভ হয়নি। পরে সোশ্যাল মিডিয়া এবং জেলা প্রশাসনের সাহায্যে একটি হয়। পিসি এখন ভালো হয়ে উঠছেন।করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই উত্তর প্রদেশ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। ১৯শে এপ্রিল নয়ডায় একটি ভোট কেন্দ্রের দৃশ্য। ভোটের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজ্যে কয়েকশ শিক্ষক কোভিডে প্রাণ হারিয়েছেন।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে ১৯শে এপ্রিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট বারাণসী এবং উত্তর প্রদেশের আরো চারটি শহরে এক সপ্তাহের লক-ডাউন দেওয়ার আদেশ দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকার তাতে কান দেয়নি, বরঞ্চ সুপ্রিম কোর্টে ঐ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তারা। রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল – ”তাদেরকে জীবন বাঁচানোর সাথে জীবিকাও বাঁচাতে হবে। কিন্তু সমালোচকরা এখন বলছেন সরকার জীবন ও জীবিকা কোনোটাই বাঁচাতে পারছে না। বারাণসী জেলা প্রশাসন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কিছু সময়ের জন্য কারফিউ জারি করছে। আতঙ্কে অনেক দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে হাজার হাজার মানুষের কাজ নেই, এবং ভাইরাস এখনও ছড়িয়ে পড়েছে।

মৃত্যু চাপা দেয়া হচ্ছে?

বারাণসীতে সরকারি হিসাবে মোট রোগীর সংখ্যা ৭০,৬১২, আর মৃত্যুর সংখ্যা ৬৯০। কিন্তু সংক্রমণের সংখ্যার ৬৫ শতাংশই রেকর্ড করা হয়েছে পহেলা এপ্রিল থেকে। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন মারা যাছে ১০ থেকে ১১ জন। রোববারের মৃতের সংখ্যা ছিল ১৯। কিন্তু সেখানে যাদের সাথেই বিবিসি কথা বলেছে তারা বলেছে সরকারের এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি ভুয়া, বানোয়াট, অসত্য। শহরের মনিকার্নিক ঘাটের কাছে বহুদিনের পুরনো এক বাসিন্দা বললেন গত এক মাস ধরে শ্মশান ঘাটে বিরতিহীনভাবে মরদেহ পোড়ানোর কাজ চলছে। ”যেদিকে তাকাবেন অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ এবং মরদেহ”। আগে, বারাণসীর দুটো প্রধান শ্মশান ঘাটে দিনে ৮০ থেকে ৯০টি দাহ হতো। কিন্তু, ঐ বাসিন্দার কথায়, গত এক মাস ধরে দিনে ৩০০-৪০০ দাহ হচ্ছে। “হঠাৎ দাহ বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? মানুষ কি অন্য কোনো কারণে বেশি মরছে? মৃত্যুর কারণ হিসাবে অধিকাংশ সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কি করে এমনকি কম বয়সীদেরও হঠাৎ এত বেশি সংখ্যায় হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে? সম্প্রতি বারাণসীর একজন বাসিন্দার তোলা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে শ্মশান ঘাটে যাওয়ার একটি সরু রাস্তার দুই ধারে এক কিলোমিটার পর্যন্ত সার ধরে রাখা রয়েছে মরদেহ। গত দশদিনে নগর প্রশাসন নতুন দুটো শ্মশান তৈরি করেছে। সেগুলোও রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত বলে খবর রয়েছে।

গ্রামে গ্রামে ছড়িয়েছে ভাইরাস

এই ট্রাজেডি এখন শুধু বারণসী শহরে সীমাবদ্ধ নেই। আশপাশের ছোট ছোট শহর ছাড়িয়ে এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি। বারাণসীর অদূরে ১১০টি গ্রামের একটি ব্লক রয়েছে যার মোট জনসংখ্যা ২৩০,০০০। চিরাবগাঁও নামে ঐ ব্লকের প্রধান সুধীর সিং পাপ্পু বিবিসিকে জানান গত কয়েকদিনে তার ব্লকের প্রতিটি গ্রামে পাঁচ থেকে ১০ জন মানুষ মারা গেছে। কোনো কোনো গ্রামে, তিনি বলেন, মৃত্যুর এই সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০। “এই ব্লকে কোনো হাসপাতাল নেই। অক্সিজেন নেই, ওষুধ নেই,” সুধীর সিং বলেন। “সরকারি হাসপাতালে কোনো জায়গা নেই, বেসরকারি হাসপাতালের কাছে গেলে রোগীর অবস্থা দেখার আগেই দুই থেকে পাঁচ লাখ রুপি অগ্রিম চাইছে। আমাদের কোথাও আর যাওয়ার জায়গা নেই। বারাণসীর কাছে আইধে নামের একটি গ্রামের বাসিন্দা কমল কান্ত পাণ্ডে বিবিসিকে বলেন, তার মনে হচ্ছে গ্রামের পরিস্থিতি এখন শহরের চেয়েও খারাপ। তিনি বলেন, “আমার গ্রামের ২৭০০ বাসিন্দার সবাইকে যদি আপনি টেস্ট করেন, কমপক্ষে অর্ধেক লোক পজিটিভ হবে। গ্রামের বহু মানুষ কাশিতে ভুগছে, গায়ে জ্বর, পিঠে ব্যথা, শরীর দুর্বল, খাবারের কোনো গন্ধ-স্বাদ তারা পাচ্ছে না।

আইধে গ্রামে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর কথা সরকারি পরিসংখ্যানে জায়গা পাচ্ছে না। “কারণ গ্রামে কোনো টেস্টিংই হচ্ছে না,” বলেন মি পাণ্ডে যিনি নিজেও কোভিডে ভুগে সবে সেরে উঠেছেন। “আপনি ভাবতে পারেন এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা! সেই জায়গাতেও আমরা শ্বাস নেওয়ার জন্য কষ্ট করছি।“

‘মোদী গা ঢাকা দিয়েছেন’

নরেন্দ্র মোদী প্রায়ই বলেন বারণসী, এখানকার মানুষ এবং গঙ্গা নদীর সাথে তার ”বিশেষ সম্পর্ক”। কিন্তু করোনাভাইরাসের তোড়ে যখন শহরের দুর্গতি চরমে দাঁড়ায়, তারপর তাকে তার এই নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায়নি। অথচ এই শহরের বাসিন্দারা দেখেছেন তাদের এমপি ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ১৭ বার পশ্চিমবঙ্গে গেছেন। শহরের ক্ষুব্ধ একজন রেস্তোরাঁ মালিক বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে ১৭ই এপ্রিল বারাণসীর কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা সভা ছিল ”একটি প্রহসন”।“প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী গা ঢাকা দিয়েছেন। তারা বারাণসীকে ত্যাগ করেছেন, এখানকার মানুষকে তাদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন,” বলেন ঐ রেস্তোরা মালিক।”স্থানীয় বিজেপি নেতারাও গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের ফোন বন্ধ। অথচ এই সময় হাসপাতালে বেডের জন্য, অক্সিজেনের জন্য তাদের সাহায্য প্রয়োজন। পুরো অচলাবস্থা চলছে এখানে। মানুষজন ভীষণ রেগে আছে।”’সমস্ত দায় প্রধানমন্ত্রীর, আর কারো নয়,” বিবিসিকে বলেন বিরোধী দল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা গৌরব কাপুর। ”তাকে এই দায় নিতে হবে। গত দেড় মাস বারাণসীতে এবং ভারতে যত মৃত্যু হয়েছে তার দায় প্রধানমন্ত্রীর।’শহরের অনেক বাসিন্দার মত মি. কাপুরও ব্যক্তিগতভাবে কোভিডের শিকার। ১৫ দিন আগে তিনি তার এক চাচা এবং এক চাচীকে হারিয়েছেন। তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ভাই হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। শুক্রবার সাক্ষাৎকারের জন্য ফোন করলে তিনি জানান, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বাড়ির একটি ঘরে তিনি আইসোলেশনে আছেন।

বারাণসীর অবস্থা খুব শিগ্রি ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ তো নেইই, বরঞ্চ আরো খারাপ হচ্ছে। শহরের পরিস্থিতি সঙ্গিন। সেই সাথে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের গ্রামে-গঞ্জে যেখানে চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে।“ছোট ছোট গঞ্জের ডাক্তাররা আমাকে বলছেন সেখানে এমনকি অক্সিমিটার পর্যন্ত নেই। সুতরাং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে অনেক মানুষ ঘুমের মধ্যে মারা যাচ্ছে,“ বিবিসিকে বলেন বারাণসী শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক। ”আমার স্ত্রী এবং ছেলের যখন কোভিড হলো, আমরা ডাক্তারকে জানালাম। তিনি যা করতে বলেছেন, তা করেছি। কিন্তু গ্রামের একজন নিরক্ষর মানুষের কী হবে? সেখানে কোনো ডাক্তারও নেই। আপনি জানেন সে কীভাবে বেঁচে আছে? ভগবানের দয়ায়।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..