বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা সবজি, ডিম ও মুরগির দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আজ শুক্রবার (১২ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে।
বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৭ টাকায়। আর প্যাকেট চিনি ৯২ টাকায়। এ ছাড়াও এসব বাজারে দেশি মসুরের ডালের কেজি ১৪০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
প্যাকেট আটার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। খোলা আটা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। ভোজ্য তেলেও কোনো সুখবর নেই। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২০৫ টাকা।
বাজারে মিনিকেট চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৯ থেকে ৭০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা। বিরি-২৮ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায়। আগে দাম ছিল ৫৩ টাকা কেজি। নাজিরশাইল চালের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। আর পোলাওর চাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়।
কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এতে এক সপ্তাহে ৪০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা ছুঁয়েছে।
বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ২০০ টাকা। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ১৯০ টাকা কেজিও বিক্রি করছেন। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম। এর সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম এমন বেড়ে গেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণে সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম না বাড়লে মুরগি আর একটু কম দামে পাওয়া যেতো বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।
এদিকে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা। আর খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। ২৫০ গ্রাম শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। তবে কেউ এক কেজি কিনলে ১৯০ টাকা রাখা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম শিম বিক্রি হয় ৪০ টাকা।
শিমের পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকা টমেটোর। গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর গাজর গত সপ্তাহের মতো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বরবটিও গত সপ্তাহের মতো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে শসার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসা এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ডিম, মুরগি ও সবজির দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। তবে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমে কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৩০০ টাকায় উঠেছিল।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ইলিশও। এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
কারওয়ানবাজারে আনিসুর রহমন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সব পণ্যের দাম বাড়লেও আমাদের বেতন একই জায়গায় রয়েছে। কীভাবে সংসার চালাব? কিছুই বুঝতে পারছি না। বাজারে এসে কিছুই মনমতো কিনতে পারছি না। এত দাম দিয়ে বাজার করে সংসার চালানো অনেক কঠিন।’
আক্রাম হোসেন নামের আরেক ক্রেতা জানান, একটি মেসে কয়েকজন মিলে থাকেন। আজ তাঁর বাজারের দিন। যে টাকা আজ বরাদ্দ রয়েছে, তা দিয়ে পুরো বাজার করা সম্ভব না। তিনি বলেন, বাসা থেকে বাবা যে টাকা পাঠান, তা দিয়ে কোনো রকমে পড়ালেখা বা খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এখন বাবার পাঠানো টাকায় ঢাকায় টিকে থাকতে কঠিন হয়ে যাবে।