আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলছেন, রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চাইছেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন এবং এ লক্ষ্যে একটি ‘উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ’ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা থেকে তার এ ধারণা তৈরি হয়েছে যে রুশ প্রেসিডেন্ট ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি (যুদ্ধ) শেষ করতে চান’।

এই লড়াইয়ে ইউক্রেন চলতি মাসে তাদের ভূখণ্ডের কিছু অংশ রুশ দখল থেকে পুনরুদ্ধার করেছে।

তুর্কি নেতা ইঙ্গিত করেন যে পরিস্থিতি রাশিয়ার জন্য ‘বেশ সমস্যা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত সপ্তাহে উজবেকিস্তানে এক শীর্ষ সম্মেলন চলার সময় পুতিনের সঙ্গে তার ‘ব্যাপক আলোচনা’ হয়েছে বলে এরদোয়ান জানান।

মার্কিন টিভি চ্যানেল পিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট দ্রুত ওই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি চান বলে তার ধারণা।

তিনি আরও বলেন, শিগগিরই দুই পক্ষের মধ্যে ২০০ জন ‘জিম্মি’ বিনিময় করা হবে। তবে এই ধরনের বন্দি বিনিময়ে কারা অন্তর্ভুক্ত হবে সে সম্পর্কে তিনি কোনো বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতার পাশাপাশি নেটোর সদস্য হিসেবে ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ অবস্থানের কথা প্রচার করে এরদোয়ান বারবার ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছেন।

ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি আবার শুরু করার লক্ষ্যে তিনি জাতিসংঘকে মধ্যস্থতা করতে সহায়তা করেছিলেন এবং গত সপ্তাহে জানান, তিনি একটি সরাসরি যুদ্ধবিরতি আলোচনার আয়োজন করার চেষ্টা করছেন।

এদিকে রুশ বাহিনী লুহানস্কের পুরো পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দখলের দুই মাস পর ইউক্রেন তার হারানো ভূখণ্ডের কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করেছে।

লুহানস্কের ইউক্রেনীয় নেতা সেরহি হাইদাই বলছেন, রুশ বাহিনী বিলোহোরিভকা গ্রাম থেকে পিছু হটে গেছে।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ ‘দখলকারীরা স্পষ্টতই আতঙ্কে রয়েছে।’

চলতি মাসের শুরুর দিকে এরদোয়ান রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর ‘উসকানিমূলক’ নীতির অভিযোগ করেন। সে সময় তিনি সতর্ক করেছিলেন এই বলে যে ওই যুদ্ধ ‘শিগগিরই শেষ হবে’ এমন সম্ভাবনা নেই।

গত সপ্তাহে রুশ নেতা বলেছিলেন যে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করতে তৈরি, কিন্তুজেলেনস্কি তৈরি নন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেছিলেন যে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ ওই যুদ্ধ তিনি শেষ করতে চান।

তবে ২০১৪ সালে দখল করা এলাকাসহ ইউক্রেনের সব ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাওয়ার প্রশ্নে রাশিয়ার তরফ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

সে সময়ে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া অঞ্চল দখল করেছিল এবং এখন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলছেন, সম্মিলিতভাবে ডনবাস নামে পরিচিত লুহানস্ক ও দনিয়েৎস্ক অঞ্চলগুলিকে যুক্ত করার বিষয়ে প্রশ্নে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের উচিত সেখানে ‘গণভোট’-এর আয়োজন করা।

প্রেসিডেন্ট পুতিন বারবার ডনবাস অঞ্চলের মুক্তিকে রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বলে আসছেন। ‘ডনবাসে গণভোট অপরিহার্য,’ বলছেন মেদভেদেভ, যিনি এখন নিরাপত্তা পরিষদে রুশ প্রতিনিধিদলের উপপ্রধান।

লুহানস্ক ও দনিয়েৎস্কের স্থানীয় রুশ-সমর্থিত নেতারাও জরুরি গণভোটের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অলেক্সি কোপ্টিকো বলছেন যে এসব হচ্ছে মস্কোর সরকারে ‘হিস্টিরিয়ার লক্ষণ’ এবং একই সঙ্গে পুতিনকে পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করার একটা প্রচেষ্টা।
খবর বিবিসি