1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের গ্রামীন পরিবেশে মণিপুরি কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ২৪৯ বার পঠিত

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ: দেশী বিদেশী পর্যটকরা সাধারণত পর্যটন এলাকার ভারতের হোটেল বা রিসোর্টে অবস্থান করেন। তবে একেবারে গ্রামের পরিবেশে পরিবারের মাঝে অবস্থান করে পর্যটকরা পর্যটন এলাকা ঘুরতে পারেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রাম। ২০১৮ সালের ৩ জুন সিলেটের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার নাসমানা খাঁনম এ গ্রামের নিরঞ্জন সিনহা রাজুর বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন মণিপুরি কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম। শুরুতে ১০ মণিপুরি পরিবার সদস্যদের নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন এ গ্রামের ৭৫টি বাড়িতে গড়ে উঠেছে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম। দেশী বিদেশী পর্যটকরা এতে একেবারে পারিবারিকভাবে অবস্থান করে একে অন্যের খাবার, সামাজিকতা, সংস্কৃতি আচর-আচরণ, সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদি বিনময় করার সুযোগ পাচ্ছেন। করোনা কালীন সময়ে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম অনেকটা থমকে গেলেও আবারও পর্যটকদের পছেন্দের তারিখ রয়েছে মণিপুরি কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম।
যেভাবে শুরু হয়েছে :
নিরঞ্জন সিনহার ভগ্নিপতি থৌরেম রবিন, তিনি ঢাকায় মণিপুরি তাঁতবস্ত্রের একটি কারখানা করেন। সেখানে থেকে তিনি তাঁতবস্ত্র রপ্তানি শুরু করে জাপানে। জাপানি ক্রেতারা সেখান থেকে সরাসরি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুরের ভানুবিল মাঝের গাঁও এসে একেবারে গ্রামীন পরিবেশে মণিপুরি তাঁতবস্ত্র তৈরী ও এখানকার সামাজিক অবস্থান দেখে মুগ্ধ হয়। তাদের এ আসা যাওয়ার সূত্র ধরে নিরঞ্জন সিনহা নিজ বাড়িতে বিদেশী (জাপনি) পর্যটকদের রেখে তাদের আদর যতœ করে এখানকার পর্যটন এলাকা ঘুরিয়ে দেখাতেন। এরপর বিদেশী পর্যটকরা মণিপুরি বাড়িতে বসবাস করে মণিপুরি খাবার দাবার, সামাজিকতা, আচার আচরণ, সংস্কৃতি, আতীথেয়তা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়। আর মণিপুরি পরিবারগুলোও বিদেশী পর্যটকদের খাবার দাবার, সামাজিকতা, সংস্কৃতি, আচার আচরণ ও পরিবেশ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।
নিরঞ্জনের পরিচিত ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ তাদের প্রয়োজনে ভানুবিল গ্রামে এসে মণিপুরী পরিবারে পর্যটকদের রেখে পর্যটন উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ হয়ে বিষয়টি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারকে অবহিত করলে বিভাগীয় কমিশনার নাসমানা খানম ২০১৮ সালের ৩ জুন এখানে এসে মণিপুরি কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের উদ্বোধন করেন। সাথে সাথে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সাথে এটিকে যুক্ত করে প্রথমে ১০টি মণিপুরি পরিবার নিয়ে পর্যটন উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। এখন ভানুবিল গ্রামে ৭৫টি পরিবারে গড়ে উঠেছে মণিপুরি কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম। ট্যুরিজম বোর্ডের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন ট্যুর গাইডদের সাথেও মণিপুরি কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম যুক্ত হয়েছে। পর্যটকরা এখানে গ্রাম্য পরিবেশে দুষনমুক্ত ভাবে বেড়ানোর ও খাবার দাবারের সুযোগ পায়। এখানে পর্যটকদের প্রয়োজেন স্বল্পকারে মণিপুরি সংস্কৃতি তুলে ধরে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজনও করা হয়।
একই সাথে প্রতিটি কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম পরিবারে রয়েছে মণিপুরী তাঁত বস্ত্র, তাঁতবস্ত্র তৈরীর প্রদর্শণী তাঁত, মণিপুরি মিনি যাদুঘর। অবসর সময়ে ঘরে বসে পড়ার মত সু-ব্যবস্থা।
পর্যটকদের ব্যয় :
মণিপুরি বাড়িতে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমে ৪ জনের পারিবারিক পরিচ্ছন্ন কক্ষে মাত্র ২ হাজার টাকায় থাকতে পারছেন। ৩ বেলা খাবারে আগে ৭শত টাকা ব্যয় হলেও দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতিতে এখন খাচ্ছেন ৯শত টাকায়। এ ট্যুরিজমে একেবারে ভিন্ন পরিবেশে পর্যটকদের মুড়ির মোয়ার সাথে হারবাল চাও পরিবেশন করা হয়। খাবারে নিজেদের উৎপাদিত বিষমুক্ত শাক সবজি ব্যবহার করা হয়। ৪ জনের কক্ষে যদি একজন পর্যটক থাকেন তা হলে তাকে দিতে হয় মাত্র ১ হাজার টাকা। তবে সেটা আলোচনার মাধ্যমে।
নিরাপত্তা :
কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমে প্রশাসনিক সহায়তার সাথে পর্যটন পুলিশেরও নজরদারি থাকে। এখানে অহেতুক প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। মণিপুরি পরিবারের নারীরা বাড়িতে পর্যটকদের সেবাযতœ ও রান্নার কাজ করেন। আর পুরুষ সদস্যরা হাট বাজার করার সাথে পর্যটকের পছন্দের মাধবপুর লেক, বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি সৌধ, স্মৃতি যাদুঘর, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম জলপ্রপাত এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরতে ব্যবস্থা করা ছাড়াও সাথে থাকেন। এছাড়াও সামান্য দূরে ত্রিপুরা সীমান্ত এলাকা থাকায় এসব গ্রামের সবুজ পরিবেশও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
কৃষি প্রধান এলাকা উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল গ্রামে গেলে মণিপুরি কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের নিরঞ্জন সিনহা বলেন, এ ব্যবস্থাপনায় পর্যটকরা এ পরিবেশে থাকতে বেশী পছন্দ করে। করোনার থাবা কাটিয়ে উঠে এখন বিদেশী পর্যটকরা এখানে আসতে চাচ্ছে। পারিবারিকভাবে পর্যটকদের থাকা খাওয়ার সুযোগে নেই কোন নেশা গ্রহনের সুযোগ। পর্যটক ও মণিপুরি পরিবার সদস্যরা সবাই নিজ নিজ একটি অবস্থান থেকে অবস্থান করায় উভয় পক্ষের থাকে সামাজিকও পারিবারিক নিরাপত্তা।

 

 

তিনি আরো বলেন, ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে ১৭০ জনের একটি পর্যটক দল আসার জন্য বুকিং করেছে। তিনি মনে করেন আগামী এক বছরে এখানে ১ হাজার পর্যটক আসবে ভারত থেকে। এর মাঝে বেশী আসবে ভারতের মণিপুর থেকে।
আসবেন কিভাবে :
দেশের যে কোন স্থান থেকে আন্তনগর ট্রেনে কমলগঞ্জের ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন ও অথবা শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে অভতরণ করে প্রাইভেট কার, সিএনজি বা অটোয় করে আদমপুরের ভানুবিল গ্রামে যাওয়া যায়। সড়ক পথেও সহজে ভানুবিল গ্রামে যাাতায়াত করা যায়। কমলগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরত্বের ভানুবিল গ্রামে যাওয়া যায়।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..