সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :গুজরাট টাইটান্সের দেওয়া ২০৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তড়তড় করে জয়ের পথে এগোচ্ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ভেঙ্কটেশ আইয়ার এবং নিতিশ রানার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে কলকাতা হাঁটছিল সহজ জয়ের পথে। তবে এক ওভারেই ম্যাচের সব সমীকরণ পাল্টে দিলেন রশিদ খান। হ্যাটট্রিক করে গুজরাটকে ম্যাচে ফেরালেন তিনি।
কিন্তু কপাল মন্দ তার। তার বিশ্বরেকর্ডের দিনে টানা পাঁচ ছক্কায় কলকাতাকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন রিংকু সিং।
রশিদের হ্যাটট্রিকের পর কলকাতা ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই পড়েছিল। শেষ ওভারে দলটির প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। যশ দয়ালের প্রথম বলে উমেশ যাদব নেন সিঙ্গেলস। ওভারের পরের পাঁচ বলে যা ঘটেছে তা হয়তো আজীবনের জন্য ভুলে যেতে চাইবেন দয়াল। কেননা পরের পাঁচ বলের সবকটিতেই ছক্কা হজম করেছেন তিনি। টানা তিন ফুলটাসকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠানোর পর শেষ দুই বলেও রিংকু উড়িয়ে বল পাঠান বাউন্ডারির বাইরে। ফলে অবিশ্বাস্য এক জয় জোটে কলকাতার কপালে।
আইপিএল ইতিহাসে শেষ ওভারে সফলভাবে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করার রেকর্ড এখন এটি। রিংকুর ঐতিহাসিক পাঁচ ছক্কায় কলকাতার জয় ৩ উইকেটের।
অথচ পাগলাটে শেষ ওভারের আগে ম্যাচের আলো পুরোটাই কেড়ে নেন রশিদ। হার্দিক পান্ডিয়া অসুস্থ থাকায় গুজরাটের হয়ে কলকাতার বিপক্ষে টসে নামেন রশিদ। অধিনায়কত্ব পাওয়ার ম্যাচে প্রথম তিন ওভারে ৩৫ রান দেন তিনি। যা তার নামের সঙ্গে মোটেও মানানসই নয়। তবে এই লেগ স্পিনার একটি ওভার তুলে রেখেছিলেন। ১৭তম ওভারে নিজের বোলিং কোটা পূরণ করতে এসে প্রথম তিন বলেই হ্যাটট্রিক করেন এই আফগান স্পিন জাদুকর।
ওভারের প্রথম বলে তার গুগলিতে পরাস্ত আন্দ্রে রাসেল। ১ রানে এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার ফেরেন শ্রীকর ভারতকে ক্যাচ দিয়ে। পরের বলে আবারও গুগলি। এবার ব্যাট-বলে হলো না রাসেলের স্বদেশী সুনীল নারাইনের। তিনি খালি হাতেই ফিরলেন জয়ন্ত যাদবকে ক্যাচ দিয়ে। রশিদ হ্যাটট্রিক করেন আগের ম্যাচেই ২০ বলে ফিফটি করা শারদুল ঠাকুরকে ফিরিয়ে। শারদুলকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে আইপিএলে প্রথমবার হ্যাটট্রিকের কীর্তি দেখান রশিদ।
প্রতিযোগিতামূলক টি২০তে এটি রশিদের চতুর্থ হ্যাটট্রিক। বিশ্বের আর কোনো বোলারের নেই এই কীর্তি। বিশ্বরেকর্ড করার দিনে তিনি পেছনে ফেলেছেন অ্যান্ড্রু টাই, মোহাম্মদ শামি, অমিত মিশ্র, আন্দে রাসেল এবং ইমরান তাহিরকে। এই পাঁচ বোলারেরই তিনটি করে হ্যাটট্রিক আছে টি২০ ফরম্যাটে।
রশিদ শেষ ওভার করতে আসার আগে শেষ ৪ ওভার কলকাতার দরকার ছিল ৫০ রান। টি২০ ক্রিকেটে যা আহামরি বড় কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। উল্টো উইকেটে যখন রাসেল, ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায় নারাইনরা থাকে, তখন তো স্বস্তিতেই থাকার কথা দলের। তবে রশিদের ঘূর্ণি জাদুতে কলকাতা শেষের দিকে চোখে দেখেছে সর্ষে ফুল। কিন্তু এক রিংকু গুজরাটের হাতের মুঠোয় থাকা জয় শেষ পর্যন্ত ছিনিয়ে নেন।
যশ দয়ালকে টানা পাঁচ ছক্কা মারার আগে ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলেও ১০ রান নেন রিংকু। প্রথম ১৪ বলে মাত্র ৮ রান করা রিংকুর নামের তাই ইনিংস শেষে ২১ বলে ৪৮ রান! রশিদকে দূরে ঠেলে তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের হাতে।
রশিদ-রিংকুদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের আগে আহমেদাবাদে বিজয় শঙ্করের ২৪ বলে ৬৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস এবং সাই সুদর্শনের ৩৮ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২০৪ রান তোলে গুজরাট। সেই রান তাড়ায় নেমে ২৮ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ৪০ বলে ৮৩ এবং নিতিশ রানার ২১ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে জয়ের পথে এগিয়ে যায় কলকাতা। অবশ্য জয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত রিংকু জাদুর দরকার পড়ে কলকাতার।