বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:১৭ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : নয় মাস পর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর মাটিতে ফিরলেন মহাকাশে আটকে পড়া নাসার দুই মহাকাশচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামস। তাদের বহনকারী স্পেসএক্স ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ফ্লোরিডার উপকূলে প্যারাসুটের সাহায্যে অবতরণের পরপরই ক্যাপসুলের চারপাশে দেখা গেল ডলফিনের ঝাঁক।
পরে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ক্যাপসুলটি পানি থেকে তোলে। বুচ ও সুনি ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে হাসিমুখে হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই সহযাত্রী, নাসার নিক হেগ এবং রাশিয়ার নভোচারী আলেকজান্ডার গোরবুনভ।
এটি ছিল এমন একটি মিশন, যার পরিকল্পনা ছিল মাত্র আট দিনের জন্য। কিন্তু নানা নাটকীয় ঘটনায় মিশনটি দীর্ঘায়িত হয়ে দাঁড়ায় নয় মাসে।
২০২৪ সালের জুনে শুরু হয়েছিল বুচ এবং সুনির এই অভিযান। তারা বোয়িং নির্মিত স্টারলাইনার মহাকাশযানের প্রথম মানববাহী পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের অংশ হিসেবে আইএসএস-এ যাচ্ছিলেন। কিন্তু যাত্রাপথে যানের কারিগরি সমস্যা দেখা দিলে সেটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় স্টারলাইনার খালি অবস্থায় সেপ্টেম্বরের শুরুতে ফিরে আসে। ফলে বুচ এবং সুনিকে আইএসএস-এ থেকে যেতে হয় এবং ফেরার জন্য নতুন একটি যান খুঁজতে হয়।
নাসা পরে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তাদের পরবর্তী স্পেসএক্স মিশনেই বুচ ও সুনিকে ফেরানো হবে। সে অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আসা স্পেসএক্স ক্যাপসুলটি ছিল চারজনের জন্য, তবে দুটি আসন খালি রাখা হয় তাদের জন্য।
তবে এই মিশনের মেয়াদ ছিল ছয় মাস, ফলে বুচ এবং সুনির মহাকাশযাত্রা আরও দীর্ঘায়িত হয়।
এই দীর্ঘ সময়কে বুচ এবং সুনি ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেন। তারা মহাকাশের ল্যাবে নানান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালান এবং স্পেসওয়াকও করেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, সুনি সবচেয়ে বেশি সময় মহাকাশের বাইরে কাটানো নারী হিসেবে নতুন রেকর্ড গড়েন।
কিন্তু দীর্ঘসময় মহাকাশে থাকার শরীরের উপর একটি বড় চাপ। হাড় ক্ষয়, পেশি দুর্বল হয়ে পড়া, রক্ত চলাচলে পরিবর্তন, এমনকি দৃষ্টিশক্তিতেও প্রভাব পড়ে।
তাই পৃথিবীতে ফিরে আসার পর বুচ এবং সুনির জন্য বিশেষ ব্যায়ামের একটি কঠোর রুটিন ঠিক করা হয়েছে, যাতে তারা ধীরে ধীরে আবার পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারেন।
এটি ছিল দুজনের জন্য যেমন দীর্ঘ অপেক্ষার, তেমনি দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতার একটি অধ্যায়।