বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৪১ অপরাহ্ন
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বেশির ভাগ ফুটপাত ধরে হাঁটার উপায় নেই। এখানকার রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট-স্থাপনা। ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারীরা বাধ্য হন রাস্তায় নেমে চলতে। যত্রতত্র গাড়ি ও রিকশা পার্কিং তো রয়েছেই। এ কারণে যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে হাটবাজারগুলো। তাই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজারের চৌমুহনী, রেল স্টেশন রোড, উপজেলা চৌমুহনা, আদমপুর ও শমশেরনগর পঞ্চমোহনা দিয়ে ভারতের কৈলাশহরের সঙ্গে চাতলাপুর স্থল শুল্ক সড়ক, শ্রীমঙ্গল-কুলাউড়া ও মৌলভীবাজারের সঙ্গে রয়েছে সরাসরি যোগাযোগ। প্রতিটি রুটের দু’পাশে সিএনজি অটোরিকশা, টমটম ও ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ফলমুলের দোকানের স্থান করে নিয়েছে। ফলে সড়ক দিয়ে দুটি গাড়ি ক্রস করার সময় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে। দোকানপাটকে আড়াল করে যানবাহনের কারণে অতিষ্ঠ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।
এদিকে উপজেলার শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশন, চা বাগান, পুলিশ ফাঁড়ি, ব্যাংক-বীমা, পোস্ট অফিস, বিএএফ শাহীন কলেজ, সুজা মেমোরিয়াল কলেজ, এএটিএম বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আব্দুল মছব্বির একাডেমি, মাদরাসা, আইডিয়াল কেজি স্কুল ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও রয়েছে এ বাজারে। শিক্ষার্থী পথচারী এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। এই বাজারে সড়কের দুপাশে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠছে কয়েক শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা জানান, ‘যানজটের মূল কারণ হচ্ছে শহরের প্রধান সড়কগুলোর পাশে অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাঠ গড়ে উঠেছে। আবার সেগুলোর নির্দিষ্ট কোনো পার্কিং নেই, রেস্তোরাঁ ও ব্যাংকে আসা গ্রাহকদের গাড়ি পার্কিং করা হয় সড়কেই। এতে পথচারী ও যান চলাচলে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। তারা বলেন, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে পৌরসভা ও প্রশাসনের একার পক্ষে শহরের যানজট নিরসন ও সৌন্দর্য্য ধরে রাখা সম্ভব নয়। পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে চলে যাওয়ার পর আবারও কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী ফুটপাত ও সড়কের পাশে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসে। যেসব ব্যবসায়ী নিষেধ অমান্য করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
ভানুগাছ বাজারের বিশিষ্ট ফার্মেসির ব্যবসায়ী আব্দুল মুমিন বলেন, সিএনজি অটোরিকশা ও টমটম দোকান আড়াল করে রাস্তায় রাখায় ক্রেতাদের যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না বলে তাদের রয়েছে অভিযোগ। তিনি বলেন, যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। তাছাড়া অভারলোডের বালুবোঝাই ট্রাক ঘনঘন চলাচলের কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।
শমশেরনগর বাজারের ব্যবসায়ী প্রেমানন্দ দেবনাথ জানান, নানা কারণে কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা হচ্ছে শমশেরনগর বাজার। এই বাজারে ফুটপাত দিয়ে চলাফেরার কোন উপায় নেই। পথচারী, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের খুবই দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিশেষ করে মহিলারা তীব্র যানজটের ক্রাণে রাস্তা পারাপারা হতে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। এই বাজারে অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদসগ যানজটমুক্ত করা জরুরী।
ভানুগাছ বাজার পৌর বণিক কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তারপরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ’
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘সড়কে যানজট নিরসনে ব্যবসায়ী সমিতিকে বলা হয়েছে রাস্তার আশপাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও যানজট কমানোর জন্য। তাছাড়া রাস্তা ক্লিয়ার রাখার জন্য পুলিশ কাজ করছে। কোনোভাবে যানজট তৈরী করা যাবে না। চেকপোষ্ট বসিয়ে পুলিশ যানজট নিরসনের জন্য কাজ করছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘যানজট নিরসনের জন্য প্রশাসন কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান করে দখলমুক্ত করা হবে। তিনি বলেন কোনোভাবে রাস্তায় যানজট তৈরী করা যাবে না।’