শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন
মুজিবুর রহমান মুজিব
কালামুল্লাহ মহাপবিত্র আলকোরআনের অমোঘ চিরন্তন আইন মোতাবেক সফল মানব জীবন শেষে প্রায় পরিনত বয়সেই পরলোক গমন করেছিলেন ষাটের দশকের শুরুতে আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় আদর্শ শিক্ষাগুরু, সরকারের সাবেক প্রভাবশালী আমলা একাধিক রাষ্ট্রয়াত্ব বানিজ্যিক ব্যাংক এর খ্যাতিমান পরিচালক সহজ সরল সাদামনের মানুষ- মহৎ মানুষ, সৎ মানুষ সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির। ছঅব্বিশে অক্টোবর তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যোবার্ষিকী। মরহুমের প্রিয় জীবন সঙ্গিঁনী অধ্যাপিকা সৈয়দা শওকত আরা বেগম ও জান্নাত বাসিনী। মুক্তাদির- শওকত আরা দম্পতির সুসন্তান দ্বয় সৈয়দ তানজিল মুক্তাদির রাফি এবং সৈয়দ তানভির মুক্তাদির নাফি আঠাইশে অক্টোবর বাদ জুম্মা তাঁদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলাধীন বরই উরি গ্রামের সৈয়দ বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন। মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির স্বপরিবারে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে বসবাস করেলেও চীরশয়ানে আছেন পিতা মাতার পাশে বরই উড়ি বড় বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে। বিগত দিনে করনা ক্রান্তি ভয় ভীতির মাঝে কর্মবীর সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির রাজধানী ঢাকায় ইন্তিকাল করলে পারিবারিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক মরহুমের সুপুত্র দ্বয় লাশ দাফন কাফনের জন্য হেলিকাপ্টার যোগে মৌলভীবাজার নিয়ে আসেন। মরহুমের পরমাত্বীয় জেলা সদরের মাননীয় সংসদ সদস্য জন নেতা নেছার আহমদ আনুষ্টানিক ভাবে সসম্মানে মরহুমের মরদেহ গ্রহন করেন। হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা বোগদাদী (রঃ) শেরে শওয়ার চাবুক মার এর মাজার প্রাঙ্গঁনে মরহুমের নামাজে জানাজায় মাননীয় সাংসদ নেছার আহমদ সহ জেলার গন্য মান্য নাগরিক মরহুমের প্রাক্তন ছাত্র ও আত্বীয় স্বজন অংশগ্রহন করেন- বিষন্নবদনে শেষে বিদায় জানান। নাজিরাবাদ ইউনিয়নাধীন ঐতিহ্যবাহী বরই উড়ি গ্রামে মরহুমের চেহলামে তাঁরই কতেক প্রাক্তন ছাত্র, আমাদের প্রিয় বন্ধু বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লাহ ও রাসুল প্রেমে ফানাফিল্লাহ আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদের নেতৃত্বে, মরহুমের ভায়রা ভাই প্রফেসর সৈয়দ ফজুলুল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইজ্ঞিনিয়ার কফিল উদ্দিন, শেখের গায়ের বন্ধুবর শহীদুর রাজা এবং অধম আমি সহ মরহুম সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির এর কবর জিয়ারত করতঃ তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছিলাম। মাঝারি উচ্চতা, সুঠাম শরীর, গোলবাটা মুখ, মাথায় বাবরিরচুল আর শ্যমলা চেহারার পোষাক সচেতন সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির এর মুখে এক চিলতে মুচকি মিষ্টি হাসি লেগে থাকত সবসময়। ষাটের দশকের শুরুতে মৌলভীবাজার কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে তাঁর বর্নাঢ্য কর্ম জীবনের শুভ সূচনা। স্বচ্ছল, শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবার এর সুসন্তান উচ্চ শিক্ষিত এস.এ. মুক্তাদির এর কোন অহংকার কিংবা অহংবোধ কি হুনুরে ভাব ছিল না। বরং তিনি ছিলেন বন্ধু বৎসল, বিনয়ী, একজন ছাত্র প্রিয় অধ্যাপক। আমরা তখন ছাত্র রাজনীতেতে মহাব্যস্থ হলেও তাঁর ক্লাশের প্রতি একটা আকর্ষন ছিল। তিনি যতœ সহকারে সহজ সরল ভাবে তার প্রিয় ছাত্র ছাত্রীগন কে শিক্ষাদন করতেন। যদিও তাঁর মরহুম পিতা ছিলেনবৃটিশ ভারতের একজন জাদরেল পুলিশ অফিসার। তৎকালীন কলেজ শাখা ছাত্র লীগের সভাপতি এবং কলেজের বার্ষীক নাটক ও সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের কারনে তাঁর সুনজরে পড়ি। সান্নিধ্যে যাই। ¯েœহ মমতা পাই। তিনি আমার সহপাঠি বন্ধু দেওয়ান গেলাম ছরোওয়ার হাদি গাজি, এন.আই আজিজুলহক ইকবাল এবং সৈয়দ মতিউর রহমান ছানি প্রমুখকে খুব ভালোবাসতেন। আফসোস আমার এই তিন সতীর্থই আর আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই- পরলোকে। মহান মালিক তাঁদের বেহশত নসীব করুন- এই মোনাজাত করছি। স্যার সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির উচ্চ ভিলাশি না হলেও উচ্চ কাংখী ছিলেন। ন্যায় ও সৎ পথে থেকে তিনি জীবনে বড় হবার স্বপ্ন দেখতেন। আমাদের কলেজে অধ্যাপনা কলেই তিনি প্রতিযোগীতা মূলক পরিক্ষা দিয়ে সিভিল সার্ভিসে যোগ দান করেন। তাঁর বিদ্যানুরাগ, দেশপ্রেম, কঠোর পরিশ্রম, কর্তব্য নিষ্টা, মেধা ও মনের গুনে সরকারি পদস্থ পদে আসীন হয়ে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেনারেল এর্শাদ সরকারামলে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আতাউর রহমান খান এর একান্ত সচিব এর দায়িত্ব পালন কালে একদিন ফোন করে আমাকে ঢাকায় যেতে বল্লেন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আইন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে আছেন। তাঁর একান্ত সচিব হিসাবে পি.পি.জি.পি নিযোগ স্যার এর হাত দিয়েই হচ্ছে। প্রসঙ্গঁত উল্লেখ্য আমি কলেজ ভার্সিটির ডিগ্রী এবং যুদ্দ শেষে বিজয়ীবীর হিসাবে সরকারিচাকরিতে যোগ না দিয়ে আইনে ¯œাতক ডিগ্রী নিয়ে স্বাধীনতা উত্তর কালে আইনজীবী হিসাবে মৌলভীবাজার বারে যোগ দেই। রাজনৈতিক সামাজিক কারনে স্বল্প সময়ে মশহুর মরহুম আইন জীবী পরম শ্রদ্ধেয় আব্দুল মোহিত চৌধুরীর যোগ্য জুনিওর হিসাবে খ্যাতি অর্জন করি। রাজনীতি গত ভাবে আমি তখন সমরীক স্বৈর শাসক লেঃ জেঃ এইচ.এম এর্শাদবিরোধী পনেরো দলীয় জোট এর একজন সক্রিয় নেতা। আমার শুভাকাংখীগনের সঙ্গেঁ মত বিনিময় করলাম। জাপা ও এর্শাদ পহ্ণীগন নেতি বাচন মনোভাব প্রদর্শনকরে সরকারি আইনজীবী হতেহলে সরকারের প্রতি মৌনং সম্পতির প্রস্তাব দিলেন এর্শাদ বিরোধী আন্দোলনে নীরব থাকতে বল্লেন। আমি ঘৃনাভাবে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম। দৈনিক আড়াইশ টাকাভাতার চাকরির বিনিময়ে আমি সামরীক সরকারকে সমর্থন জানাতে ভিন্নমত পোষন করলাম। ইতি পূর্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকশ মেজর আলী (অবঃ লেঃ কর্নেল সৈয়দ আলী আহমদ। জালালাবাদ ক্যেন্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ্য) আমার বাসায় এসে আমার কিছু সহযোগি মুক্তিযোদ্ধা, আইন জীবী সাংবাদিক নিয়ে জেনারেল এর্শাদ সরকারকে সমর্থন এবং প্রতিমন্ত্রীর মর্য্যাদায় দায়িত্ব নিতে অনুরোধ জানালে আমি বিনয়ের সঙ্গেঁ প্রত্যাখ্যান করে ছিলাম। স্যার এস.এ. মুক্তাদিরকে জানিয়ে দিলাম, রাজনৈতিক কারনে আমার পক্ষে এ দায়িত্ব নেয়া সম্ভব নয়। এক দশকের মধ্যেই মহান আল্লাহর মেহের বানী এবং দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রী সভার ট্যেকনো ক্র্যাট অর্থ মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান এর বদৌলতে আমাদের জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর হয়ে কোন সাইলেন্স ফি এবং লাশ বিক্রি ছাড়াই শতকরা এক শত ভাগ সততা, বিশ্বস্থতা ও নিরপেক্ষ তার সাথে দায়িত্ব পালন করে সকল মহলের প্রশংসা প্রাপ্ত হয়েছিলাম। স্যার ও খুব খুশী হয়েছিলেন। সরকারি চাকরির কারনে স্যার এস.এ মুক্তাদির ঢাকাবাসি হলেও তিনি আমাকে আমাদেরকে ভূলেন নি যোগাযোগ ছিল। আমি একাশি সালে মহামান্য হাইকোর্ট বারে এডভোকেট হিসাবে তালিকা ভূক্ত হই। অতঃপর সামাজিক কারনে ঢাকাস্থ মৌলভীবাজার জেলা সমিতি, সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদ এবং এবং জলালাবাদ এসোসিয়েশন এর আজীবন সদস্য পদ নেই। সংস্থা সমূহের অনুষ্টানাদি, বার্ষীক সাধারন সভা ও নির্বাচনে ঢাকায় যাই, কখনওকখনও আলোচনা সভা বক্তৃতায় অংশ গ্রহন করি, এসব বলাবলি কিছু লেখা লেখিতে আমার কিঞ্চিত নাম ডাক ও আছে। স্যার আমার এসব কর্ম কান্ডে খুব খুশী হতেন। স্বগর্বে বলতেন মুজিব আমার ছাত্র ছিল। আমি সবিনয় সংশোধনী আনতাম বলতাম স্যার ছিল নয় আছে। পরিনত বয়সে পক্ককেশী সত্তোরোর্ধ এই আমি দৃশ্যত তাঁর বয়োঃজ্যেষ্ট লাগত। কারন তাঁর সুঠাম শরীরে, পোষাক সচেতনতায় তর তাজা যৌবন ও তারুন্য বিদ্যমান ছিল। স্যার এস.এ মুক্তাদির এর প্রয়ানের পর এমসি, কলেজে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষা শুরু সাবেক সচিব ও হাই কমিশনার এ.এইচ, মোফাজ্জল কমির ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। পুরুষালি গোঁফ, ঝাকড়া বাবরি চুলের অধিকারি উজ্জল ফর্সা ছাফ গুরিয়ানা মোফাজ্জল করিম স্যার কিছুদিন পূর্বেও আমার কনিষ্ট দেখাত। ইদানিং তাঁর চেহারায় বার্ধক্ষের ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আল্লাহ তাঁর হায়াত দরাজ করুন। রাষ্ট্র ও সমাজ চিন্তক সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির একসময় সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদ ত্যাগ করে সমাজ উন্নয়নে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার মহান মানষে এন.জি.ও.তে যোগদান করেন। একসময় জন্ম নিয়ন্ত্রন, জন সংখ্যা রোধে বাংলাদেশ স্বেচ্ছাবন্ধা করন সমিতি ইঅইঠঝ, ঢ়ড়ঢ়ঁষধঃরড়হ ঈড়ঁহপরষ গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা পালন করে।ইঅইঠঝ- এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিচালক হিসাবে তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রনকে দেশ ব্যাপী একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করেন। মানবতাবাদি মরহুম চিকিৎসাবিদ শ্রদ্ধেয় ডা. এস.এ হকের অনুরোধে আমি ও মধ্য বয়সেই এই জেলার সেক্রেটারির দায়িত্ব ভার নেই। বলাবহুল্য ডা. এস.এ. হক হন সভাপতি। এক সময় স্যার একজন জাতীয় এন.জি.ও বিষেষজ্ঞ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। একজন সমাজ সংঘটক হিসাবে তিনি ঢাকাস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশন এবং মৌলভীবাজার জেলা সমিতির সভাপতি হিসাবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। দারিদ্রের বিমোচন কর্ম সংস্থান দেশীয় আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যাংকিং সেক্টারে তাঁর কৃতিতৃপূর্ন ভূমিকা সবিশেষ উল্লেখ্য যোগ্য। দেশের রাষ্ট্রয়াত্ব তিনটি বানিজ্যিক ব্যাংকে অগ্রনী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক এবং শিল্প ব্যাংক এর পরিচালক হিসাবে সাবেক আমলা সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির প্রতিভার ছাপা রেখেছেন। মানুষ মরনশীল। কথার মানুষ বেঁচে থাকেন তাঁদের কাজের মাঝে। বহু মাত্রীক প্রতিভার অধিকারি, কথার মানুষ, কাজের মানুষ সহজ সরল সাদা মনের মহৎ মানুষ সৎ মানুষ সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদির বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মাঝে। বেঁচে থাকবেন তাঁর ইমানেও আমলে। ছুন্নতেও মেহনতে। তাঁর বরযকি জীবন সুখময় হউক মহান মালিক তাকে বেহেশত বাসি করুন তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যোবার্ষীকিতে এই মোনাজাত সহ, আমীন। ছুম্মা আমীন।
[ মরহুমের প্রাক্তন ছাত্র। মুক্তিযাদ্ধা। এডভোকেট হাই কোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার, প্রেসক্লাব।]