1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

এইডস কালান্তক ও সর্বগ্রাসী

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩
  • ২৫১ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী
এইচআইভি কথাটির অর্থ হল হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। আর এইডস এর অর্থ হল অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম অর্থাৎ অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব জনিত রোগসমূহ। ১৯৮০-৮১ সালে ইউনাইটেড স্টেটসের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনে কয়েকজন সমকামীর মধ্যে এক ধরণের নতুন নিউমোনিয়া দেখা দেয়। পরবর্তীকালে নিউইয়র্কে সমকামীদের মধ্যে এক ধরণের ক্যান্সার লক্ষ্য করা গেল। ইতিমধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশার ঔষধ ব্যবহার করেন এমন কয়েকজনের মধ্যে এক ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। ১৯৮৩ সালে সম্পূর্ণ নতুন এক প্রকার ভাইরাস আবি®কৃত হল, যা আজকের মারণ ভাইরাস এইচআইভি। ১৯৮৫ সালে এ রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার নাম এলিজা আবি®কৃত হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে ৪০০ লক্ষ লোক এইচআইভি/এইডস-এ আক্রান্ত হন।
পৃথিবীর সর্বত্র এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। দেখা গেছে এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৪৯। ৩২ শতাংশ হল ১৫-২৯ বছর বয়সের পুরুষ-মহিলা। এ রোগে ধনী-গরিব, শিশু-বয়স্ক নির্বিশেষে সমাজের যে কোন স্তরের যে কোন বয়সের ব্যক্তি যে কোন মূহুর্তে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হন। এ রোগে তুলনামূলকভাবে মহিলাদের থেকে ৭০ শতাংশের বেশী আক্রান্ত পুরুষ।
এইডস হল একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। ভাইরাসের নাম হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। এ জাতীয় ভাইরাসটির প্রথমে নাম রাখা হয় এলএভি বা লিম্ফ্যাভিনোপ্যাথি অ্যাসোসিয়েটেড ভাইরাস। তারপর নাম হয় এইচটিএলভি থ্রি বা হিউম্যান টি লিম্ফোসাইট ভাইরাস-৩। ১৯৮৬ সালের মে মাসে এর নাম হল এইচআইভি। এ ভাইরাসের ব্যাস হল এক মিলিমিটারের দশ হাজার ভাগের এক ভাগ। তাপ প্রয়োগে অল্পেই মারা যায় এ ভাইরাস এবং ইথার ও ইথানলে এর সক্রিয়তা নষ্ট হয়।
এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে, বীর্যে, স্পাইনাল ফ্লুইডে লুক্কায়িত থাকে। এ ছাড়া খুব কম মাত্রায় চোখের পানি, লালা, স্তনদুগ্ধ, মূত্র, জরায়ুর সাদা স্রাবে থাকতে পারে তবে এখন অবধি রক্ত ও বীর্যের ভাইরাস রোগ সংক্রমণে সক্ষম বলে দেখা গেছে। যৌন সংসর্গের মাধ্যমে রক্ত ও রক্তজাত পদার্থের মাধ্যমে, গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে শিশুতে এ রোগ সংক্রামিত হতে পারে।
এখনো অজানা থেকে গেছে তার রোগ ব্যাপ্তির সঠিক সময়। তবে কয়েক মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে এ রোগের লক্ষণ পেতে, ধারণা এমনই। এ রোগের লক্ষণ/উপসর্গ সমূহকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক. প্রারম্ভিক সংক্রমণ এবং অ্যান্টিবডি তৈরি, খ. উপসর্গহীন বাহক, গ. এইডস সম্পর্কিত জটিলতা, ঘ. এইডস।
প্রথমে জ্বর, গলা ব্যথা, শরীরের চামড়ায় দাগ দেখা দেয় ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে। অনেকের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত কোন উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। তারা সাধারণ নীরোগ মানুষের মতো প্রথমত উপসর্গহীন থাকতে পারেন এবং স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী থাকেন, যদিও তারা এ রোগ বহন করে অন্যকে সংক্রমণ করতে সক্ষম। একবার সংক্রামিত হলে সারা জীবন সংক্রামিত থাকেন। এ রোগকে নির্মূল করার জন্য এখন অবধি কোন ঔষধ বের হয়নি। এর পরে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং শরীরের গ্রন্থিগুলো দুলতে থাকে। পরবর্তী ধাপে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হবার জন্য নানারকম জীবাণু শরীরে বাসা বাঁধে। দেখা দেয় ডায়রিয়া, জ্বর, গা-হাত-পা ব্যথা, ওজন কমা, প্লীহা বেড়ে থাকা আর রোগ লক্ষণ সমূহের শেষ স্তর হল এইডস। এ ক্ষেত্রে সুযোগ সন্ধানী জীবাণুর মারাত্মক সংক্রমণ ঘটে এবং ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত হন রোগী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মক কমে যায় এবং রোগী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্তের মাধ্যমে এ রোগের আক্রমণ ঘটে।
এ রোগে আক্রান্ত কোন রোগীর রক্ত যদি কোন সুস্থ ব্যক্তির রক্তের সান্নিধ্যে আসে সে ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির রক্তে এর জীবাণু প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে একশো শতাংশ।
হিউম্যান ইমিউনো ভাইরাস রক্তে ঢুকে কি কাণ্ড ঘটায় তা জানতে রক্তের চিত্রটি একবার দেখে নেয়া যায়। সাধারণত রক্তের দুটো অংশ তরল ও কঠিন। কঠিন অংশে থাকে লোহিতকণিকা, শ্বেতকণিকা ও প্লেটলেট। শ্বেতকণিকার আবার কয়েকটি ভাগ এর মধ্যে অন্যতম একটি হল টি লিম্ফোসাইট। এ টি লিম্ফোসাইট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সব থেকে বৈশিষ্টপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইচআইভি ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে রক্তের দেয়াল ফুটো করে তাতে ঢুকে পড়ে এবং এ অবস্থায় সেখানে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। এমনভাবে থাকার সময় বারো বছর হতে পারে এবং শুরু হয় তাদের বংশবৃদ্ধি। যার ফলে লক্ষ লক্ষ ভাইরাস টি লিম্ফোসাইটে বেড়ে ওঠে এবং রক্তের মাধ্যমে থাকা টি লিম্ফোসাইট ফাটিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে নতুন করে নতুন নতুন টি লিম্ফোসাইটে আক্রমণ হানে। পরিণামে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায় এবং দেহে নানা রোগের প্রকাশ ঘটে, সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যেহেতু প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের লোপ পায় সে জন্য এ রোগের নাম এইডস। এ রোগ নির্ণয় করার সময় এলিজা পরীক্ষা করে, স্ক্রিনিং করে, ওয়েস্টার্ন ব্লট পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়।
এইডস একটি কালান্তক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। এইডস থেকে মুক্তির সম্ভাবনা যেখানে প্রায় নেই সেক্ষেত্রে এ রোগে যাতে আক্রান্ত হতে না হয় সেদিকে বেশি করে যতœশীল হওয়া প্রয়োজন। এ রোগকে প্রতিহত করতে হলে-
 কারো শরীরে রক্তের প্রয়োজন হলে প্রাপ্ত রক্ত পরীক্ষা করার পর এইচআইভি মুক্ত প্রমাণিত হলে কেবল সে রক্ত গ্রহীতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।  সংক্রামিত পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে যৌন মিলন এড়িয়ে চলতে হবে।  ইনজেকশন নেবার সময় একমাত্র ব্যবহারযোগ্য সিরিঞ্জ ও সুচ ব্যবহার করতে হবে।  কোন সুস্থ লোকের কাটা বা ছেঁড়া জায়গায় যেন এইডস রোগীর রক্ত বা তদ্রুপ কোনো সংক্রামণ ছড়াতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।  এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দাঁত তোলার সময় সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করে অন্য সুস্থ ব্যক্তির শরীরে সে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না।  সুস্থ ব্যক্তির মুখে ঘাঁ থাকলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে চুম্বন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।  আক্রান্ত ব্যক্তির দাড়ি কাটার পর সে ক্ষুর অন্য কারো মুখে লাগানো যাবে না।  উল্কি করা কান বা নাক বেঁধানোয় ব্যবহৃত সুঁচ অন্য কারো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অনুচিত। এ রোগের শিকার না হবার জন্য যা প্রয়োজন, বিশেষ করে বিয়ের আগে নারী-পুরুষের কাউনসেলিং অত্যন্ত জরুরি। আর সবশেষে এইডস সচেতনতা নিয়ে লাগাতার শিবির, বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে একমাত্র এ মরণব্যধি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কেননা এ রোগ কালান্তক ও সর্বনাশী।
লেখক-সাংবাদিক ও কলামিষ্ট। ২৯.১১.২০২৩

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..