সাকের আহমদ: ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এবারও মৌলভীবাজারে শুরু হয়েছে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সহচর হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) এর ৬৮৩ তম ওরস মোবারক।

আজ সোমবার (১৫জানুয়ারি) সকালে প্রতা অনুয়ায়ী মহান এই ওলির মাজারে গিলাফ চড়ানোর মধ্যদিয়ে কনকনে শীতের মধ্যে শুরু হয়েছে বার্ষিক ওরস। ওরস-কে কেন্দ্র করে মাজারের পাশের পুরো শাহমোস্তফা সড়ক জুড়ে শুরু হয়েছে তিনদিন ব্যাপী মেলা। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে। ওরস ও মেলা ঘিরে পুলিশের তরফেও নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ওরস উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য ও মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান জানান, শিরনীর জন্য রবিবার বিকেলে ১৮টি গরু জবাই করা হয়েছে, সোমবার সকালে মাজারে গিলাফ চড়ানোর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে তিনদিন ব্যাপী ওরস। ওইদিন বাদ এশা দরগাহ প্রাঙ্গণে মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, আমরা ওরস ও মেলা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ওরসের পাশাপাশি শহরের শাহ মোস্তফা সড়ক ও শ্রীমঙ্গল সড়কের বেড়িরপাড়সহ আশপাশের এলাকাজুড়ে গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য লোকজ মেলা বসেছে। মেলায় দূরদূরান্ত থেকে আসা বেপারীরা নানা পণ্য’র পসরা সাজিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে শিশুদের নানা ধরনের খেলনার দোকান। রয়েছে মুখরোচক অস্থায়ী খাবারের রেস্তুরাও। ক্রোকারিজ সামগ্রী থেকে শুরু করে কুটির শিল্প,ফার্নিচার ও শীতের কাপড় কী নেই এই মেলায়।

মেলার একপাশের বেড়িবাঁধের একটি অংশের উপর বসেছে বাংলা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ নাগরদোলা, ঘোড়া ও ইলেক্ট্রিক নৌকা। মেলায় আসা এসব বিনোদনের মাধ্যমগুলো শিশুদের জন্য হলেও আনন্দে ভাগ নিতে বড়দেরও দেখা যায়। সবমিলিয়ে যাদের শৈশবে জড়িয়ে আছে মেলা আর ওরসের নানা স্মৃতি তারাও এখন বড় হয়ে নিজের ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মেলায়। শতশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলাকে কেন্দ্র করে জেলা সদর ও আশপাশের নানা বয়সী বিশেষ করে শিশুদের মাঝে একধরণের উন্মাদনা তৈরি হয়। মেলায় মৌলভীবাজার জেলাসহ সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর দর্শনার্থীরা আসেন।

এদিকে শতশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা-কে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারীও। এবিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম জানান, ওরস ও মেলা ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেলাস্থলে দ্বায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য। তিনি জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে জুয়াসহ যেকোন ধরণের অবৈধ কর্মকাণ্ড যাতে না চলে সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।