শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
: মুজিবুর রহমান মুজিব:
সেকাল থেকে একালে ইতিহাস ঐতিহ্য গৌরবময় অতীত ঐতিহ্যের অধিকারি কমলগঞ্জ উপজেলাধীন সমশেরনগর ইউনিয়ন এলাকা ও একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্য মন্ডিত জনপদ। হাল আমলের বাংলা লোকগানের লোক প্রিয় কন্ঠ শিল্পী গানের পাখি সেলিম চৌধুরী সমশেরনগর এর-ই সু-সন্তান। বৃটিশ ভারতে সর্ব্ব ভারতীয় আজাদী আন্দোলন এবং একাত্তোরে আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামে এই জনপদের কৃতিত্বপূর্ন ভূমিকাও বীরত্বপূর্ন অবদান ইতিহাসের অংশ। অত্র এলাকাধীন খুশালপুর এর শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত বংশের উচ্চ শিক্ষিত সু-সন্তান হর হামেসা খুশমেজাজি মোহাম্মদ ইলিয়াস যেমনি বায়ান্নের ভাষা সৈনিক তেমনি একাত্তোরের অকুতভয় বীরও বটেন। মোহাম্মদ ইলিয়াস সত্তোরে এম,এন,এ এবং একাত্তোরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শক্তি মান সংঘটক হিসাবে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখেন। একজন এম,সি,এ হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় ইতিহাসের অংশহয়ে আছেন। ঐতিহ্যবাহী জনপদ কমলগঞ্জের রাজনীতি, রাষ্ট্রপরিচালনা এবং সমাজ বিকাশের ইতিহাসে গৌরবময় অধ্যায় এর সংযোজন সম্প্রতি সাতবার এর সাংসদ, সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ডক্টর এম,এ শহীদ এম,পির কৃষি মন্ত্রালয় এর পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্তি। ষাটের দশক থেকে একজন নির্ভীক মুজিব সৈনিক হিসাবে কি সরকার দল কিংবা কি বিরোধী দল সার্বক্ষনিক রাজনীতিবিদ হিসাবে মাঠে ময়দানে ছিলেন। পেশা হিসাবে মহান পেশা শিক্ষকতাকে বেছে নিয়ে আজীবন নিজেকে শিক্ষাও জ্ঞানার্জনে বিলিয়ে দিয়েছেন, নামের শুরুতে অধ্যক্ষ ও ডক্টরেট দুটি সম্মানজনক ডিগ্রী সংযুক্ত হয়েছে। কমলগঞ্জ মৌলভীবাজার জেলা সদরেও বইছে আনন্দের বন্যা বিকশিত জীবনের জয় গান। এই অস্থির সময় ও মূলবোধের অবক্ষয়ের মাঝেও সুঠাম শরীরের অধিকারি সদাহাসি খুশী সুদর্শন ডক্টর আব্দুস শহীদ একজন সহজ সরল সাদা মনের মানুষ। বন্ধু বৎসল বিনয়ীও বটেন। সমশেরনগরের শের সব্য সাচী লেখক লিয়াকত আলী মীর একজন বারো মেসে বীর। অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামের একজন নিরন্তর সৈনিক হিসাবে আজীবন বলছেন। লিখছেন। স্বদেশ দেশের মাটিও মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত সব্য সাচী লিয়াকত আলী মীর স্বাধীনতা উত্তর কাল থেকেই সাহিত্যও সংস্কৃতি পত্র বিকিরন প্রকাশ করতঃ বৃহত্তর সিলেটের সমাজ ও জীবনকে কিরন ছড়িয়ে স্থায়ীভাবে সপরিবারে এখন ঢাকাবাসি লিখছেন দু’হাতে। জীবন ঘনিষ্ট এই আধুনিক কবির কাব্য গ্রহ্ণ অর্ধ শতাধিক। কবিতা আর গানই লিয়াকত আলী মীর এর প্রান। স্বীয় জন্মও কর্ম স্থল সমশেরনগর থাকাকালে তিনি সাংবাৎসরিক ভাবে দিবসে উৎসবে সাংস্কৃতিক কর্ম কান্ড চালাতেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের এই উন্নত জনপদে জেলা সদরের চাইতেও অত্যাধিক পরিমানে শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্ম কান্ড হয়। আমার প্রিয় কবিও সাংবাদিক লিয়াকত আলী মীর এর আমন্ত্রনে আমার আরেক প্রিয় ভাজন অনুজপ্রতিম সৈয়দ বুলন্দ মুনির দানিয়াল সহ বিগত দিনে একটি শুভানুষ্টানে যোগদান করে ছিলাম। লিয়াকত আলী মীর এবং সদর উপজেলাধীন আদপাশা গ্রামের মীরের বাড়ির সৈয়দ মুনির এর মধ্যে পরিচয় ও সখ্যতা ছিল। দুজনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য ছিল। শুধু মাত্র বয়সের ক্ষেত্রে বেশ বৈসাদৃশ্য ছিল। সৈয়দ মুনির দানিয়াল পেশাগত ভাবে শিক্ষক হলেও স্কাউটিং শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি জীবন মুখী নাটক, রচনা, পরিচালনা অভিনয়ে পারদর্শি ছিলেন। দু’জনেই শ্যমলা চেহারার সুঠাম শরীরের অধিকারি ও বিনয়ী ও বন্ধু বৎসল। সৈয়দ বুলন্দ মুনির দানিয়াল আমার বেশবয়োঃ কনিষ্ট হলেও আমার সঙ্গেঁ খুবই সু-সম্পর্ক যুক্ত ছিলেন। তাঁর শিষ্টাচারও সৌজন্য বোধের কারনে আমি তাকে খুব ¯েœহ করতাম। তাঁর পিতা শিক্ষাবিদ সৈয়দ ফুল আলীও আমার শ্রদ্ধা ভাজন ব্যাক্তি ছিলেন। আমার যৌবনকালে আমি জেলা সদর ও শহরের বাহিরে ও সভা সমাবেশে যেতাম। উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রন গ্রহন করতাম বক্তৃতা দিতাম। সমশেরনগরে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন আমার মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা বন্ধু ক্যেপ্টেন সাজ্জাদুর রহমান। তিনি অসুস্থ তাকে দেখতে যাওয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। সমশেরনগরের আরেকবীর আব্দুল গফুর অবশ্য এখন পরলোকে। সমশেরনগরে প্রখ্যাত পীর ইয়াসিন শাহের মাজার অবস্থিত। মাজার এর প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও দূর্বলতা আছে মাজার জিয়ারতও আমার ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। সেবার মীর লিয়াকত এর আমন্ত্রনে সমশেরনগরে এক বিকেল হাসি খুশী ও আনন্দে কাটালাম। বক্তৃতার সময় আমি- “লিয়াকত আলী মীর গায়ে গতরে ছোট হলে কাজে কর্মে বীর তাৎক্ষনিক ভাবে ছড়া কাটলাম। তিনি আমার নামে তার এক খানা কাব্যগ্রহ্ণ যুগ্ম ভাবে উৎসর্গ করেছেন। আমি তাকে নিয়ে নিদেনপক্ষে একটি কবিতা লিখতে পারি। লেখা উচিত। ক’বছর আগে একুশের বই মেলায় মীর লিয়াকত আমার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষনা গ্রহ্ণ “আমার দেখা একাত্তোর, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কথা” প্রকাশ করে আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। স্কাউট লিডার শিক্ষাবিদ সৈয়দ বুলন্দ মুনির দানিয়াল ছিলেন স্কুল ক্যেম্পাস ও খেলার মাঠের প্রান। মাত্র বছর পঞ্চাশ পেরিয়ে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে বড় অসময়ে অবেলায় সবাইকে কাঁদিয়ে চীর তরে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ভাল মানুষ সৈয়দ মুনির দানিয়াল। এখন তিনি আদপাশা মীরের বাড়ি পারিবারিক গোরস্থানে চীরশয়ানে শ্যামল মাটির কোমল বিছানায় বাঁশ ঝাড়ের ছায়ায় মায়ায়। পাশেই আদপাশা জামে মসজিদ আদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মসজিদে মোয়াজ্জিন সাহেব রোজ পাছ ওয়াক্ত আজানদেন “ আল্লাহু আকবর-আল্লাহু আকবর”। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় সঙ্গীত গীত হয়- “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, চীর দিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস, আমার প্রানে বাজায় বাশি”। বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশু কিশোর বিদ্যার্থীর পদভারে প্রকম্পিত কলকাকলিতে মুখরিত হয়। প্রেম ও বিদ্রোহের কবি কাজি নুজরুল ইসলাম লিখেছিলেন- “মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই—–মোয়াজ্জিনের ওই আযান ধ্বনি শুনতে পাই”। ভাগ্য বান কবি নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গঁনে সমাহিত। রোজ কিয়ামত পর্য্যন্ত তিনি মোয়াজ্জিনের আযান ধ্বনি শুনতে পাবেন। এক্ষেত্রে সৈয়দ মুনির দানিয়াল ও ভাগ্যবান। তিনি পিতা সহ মসজিদের পাশেই সমাহিত। একদিন আমার ¯েœহ ভাজন দেলোয়ার হোসেন আলকাদরিকে নিয়ে আদপাশা গিয়েছিলাম, নামাজ আদায় শেষে তাঁর জন্য দোয়া করেছি-করিয়েছি- কবর জিয়ারত করেছি তাঁর রুহের মাগফিরাত চেয়েছি। দেলোয়ার হোসেন আলকাদরির ওয়াজ, মিলাদ এবং দোয়া আমার খুবই পছন্দ হৃদয় গ্রাহী আবেগ ঘন। গত একুশে জানুয়ারী ছিল সৈয়দ মুনির দানিয়াল এর মৃত্যোবার্ষিকী মহান মালিক তাঁর বেহেশত নসীব করুন। সব্য সাচী লেখক মীর লিয়াকত সত্তোরের কোঠায় এসেও প্রানবন্ত-প্রান প্রাচুর্য্যে ভরপুর মনের সুখে দু’হাতে লিখছেন, সুরের মুর্ছনায়, সুরের ভূবনে অবগাহন করছেন নতুন নতুন সুর তুলছেন। মেঘে মেঘে অনেক বেলা শেষে আমি এখন জীবন সায়াহ্ণে পড়ন্ত বেলায় শাহ আব্দুল করিম এর ভাষায় “গাড়ী চলে না চলে না রে” অবস্থা। ফলতঃ শয্যাশায়ী। সোফাশায়ী। আমার দুই প্রিয়জন দুই ভূবনের বাসিন্দা। মীর লিয়াকত ও আমি এই ভূবনে হলেও আদপাশা মীরের বাড়ির সৈয়দ মুনির এখন আলমে বরযক-ই জীবনে। প্রিয়জন মীর লিয়াকত এর দীর্ঘায়ু পারিবারিক কল্যান এবং সৈয়দ মুনির দানিয়াল এর রুহের মাগফিরাত ও বেহেশত নসীব কামনা করছি।
[এডভোকেট হাই কোর্ট। বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]