1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

আজ ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদক পরিহার দিবস- মাদকাসক্তির অভিশাপ ঃ শংকিত জীবন

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১
  • ২২০ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:
মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর- এ কথাটি সব সময়ের জন্যই সত্যি। কয়েকটি পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে কোন কোন ক্ষেত্রে, অতি অল্প পরিমাণে মদ্যপান করলেই হার্টের রোগ, উচ্চরক্তচাপ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট ডায়াবেটিস রোগ প্রভৃতিতে উপকার হয়। কিন্তু কোনও চিকিৎসকই রোগীকে মদ্যপানের পরামর্শ দেন না। কারণ এ অল্প পরিমাণ মদ্যপান থেকেই রোগী যে কোনও সময় মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন। যখন কোনও ব্যক্তি মদ্যপানে আসক্ত হন তখন (১) তিনি কোনও কারণ দেখিয়ে বা না দেখিয়ে বার বার অত্যধিক পরিমাণে মদ্যপান করতে থাকেন। (২) প্রথম অল্প পরিমাণে মদ্যপান করার পর তিনি যে মানসিক অনুভুতির স্বাদ পান, তা সর্বদা বজায় রাখার জন্য ক্রমশ মদ্যপানের মাত্রা বাড়িয়ে যেতে বাধ্য হন। এবং (৩) এতে মদের উপর মানসিক ও পরে শারীরিক নির্ভরশীলতা জš§ায়। এ অবস্থায় মদ্যপান না করলে মানসিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, কিছু একটার অভাববোধ, মাথা ঘোরা, অনিদ্রা ইত্যাদি দেখা দেয়। ফলে সে ব্যক্তি আবার মদ্যপান করতে বাধ্য হন।
মদ্যপায়ীরা মানসিক রোগী। কারণ মানসিক রোগ থেকেই মদ্যপানে আসক্তি জšে§। আবার মদ্যপানে আসক্তি থেকেই অন্যান্য মানসিক রোগ দেখা দেয়। বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে, নিউরোট্রান্সমিটারের গোলযোগ থেকেই মদ্যপানের প্রতি ঝোঁক বাড়ে এবং বংশগত মদ্যাসক্ততা, পরিবেশের প্রভাব, দুর্বল ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি মদ্যপানের প্রতি এ ঝোঁককে আরও বাড়িয়ে দেয়।
আমেরিকার ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ- এর সমীক্ষা মতে, মদ্যপায়ীরা অন্যান্য নেশাদ্রব্যের প্রতি সাধারণ লোক থেকে সাতগুণ বেশি আসক্ত হন এবং বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগেও ভুগেন। ৮৫-৯০ শতাংশ মদ্যপায়ী ধূমপান করে থাকেন এবং বাকিরা অন্যান্য মাদকদ্রব্য ব্যবহার করেন। তাছাড়া ১৯.৪ শতাংশ মদ্যপায়ীর মধ্যে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারস, ১৪.৩ শতাংশের মধ্যে অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডারস নামক মানসিক রোগগুলো দেখা যায়। অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডারস আক্রান্ত কিছু রোগীর মধ্যে উত্তেজনা, অস্বাভাবিক আনন্দ, উগ্র মানসিকতা, অনবরত কথা বলা, যৌনকাঙ্খা বেড়ে যাওয়া, স্থান কাল পাত্র বিবেচনা না করে কোন কাজ করে বসা ইত্যাদি রোগের লক্ষণ দেখা যায়। আবার কিছু রোগীর মধ্যে প্রচন্ড হতাশা এবং আত্মহত্যা করার প্রবণতা দেখা দেয় এবং অন্যকিছু রোগীর মধ্যে কখনো খুব ফূর্তি, আনন্দ এবং কখনো খুব বেশি হতাশা দেখা দেয়।
দ্য আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলসেন্ট সাইকিয়্যাট্রি অল্প বয়সে মদ এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং আসক্তিকে অস্বাভাবিক মানসিকতার লক্ষণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। যে সব বাচ্চাদের বাবা বা মা মদ্যপান করে থাকেন, সে সব বাচ্চারা সব থেকে বেশি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়।
এসব বাচ্চাদের মধ্যে অত্যধিক চঞ্চলতা, চারিত্রিক ত্রুটি ইত্যাদি দেখা দেয়। বাচ্চারা বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ ১২-১৬ বছর রয়স থেকেই লুকিয়ে বা প্রকাশ্যে মদ্যপান বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে শুরু করে। তখন এদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, একাগ্রতা ও সচেতনতার অভাব ঘটে এবং পরে মতিভ্রম, উগ্রমেজাজ, অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা বা অন্যকে হত্যা করার ইচ্ছা ও ব্যক্তিত্বের গোলমালও দেখা দেয়। এক সমীক্ষায় জানা যায়, ৪৬ শতাংশ মদ্যপানে আসক্ত যুবক- যুবতি আত্মহত্যা করে থাকে।
কেবলমাত্র মদ্যপায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি রোগ হল মারচিআফাভা- বিগন্যামি ডিজিজ। এ রোগে স্মৃতিভ্রংশ, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, বাকরোধ, নানা ধরনের মানসিক ভ্রান্তি দেখা দেয় এবং কখনও কখনও ব্যক্তি কোমায় চলে যায়। রোগ বৃদ্ধি হলে শরীরের বাঁ- দিক বিশেষ করে বাঁ- হাতের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়। ইথাইল অ্যালকোহলকে মদরূপে খাওয়া হয়। ওয়াইন এবং বিয়ারে ক্রমে ১২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ ইথাইল অ্যালকোহল থাকে। আবার হুইস্কি এবং ব্রান্ডিতে ৪০- ৫০ শতাংশ ইথাইল অ্যালকোহল থাকে। যেহেতু মদ্যপানের পর পাকস্থলি এবং রক্তে অ্যালকোহল দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী থাকে, সেজন্য মদ্যপানের বিষক্রিয়া জনিত লক্ষণগুলো যেমন- চোখ, মুখ লাল হওয়া, ঠোঁট নীলচে হওয়া, মাথা ঘোরা, মাতলামি করা, পা টলতে থাকা, জ্ঞান হারানো অবস্থা ইত্যাদি বেশ কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়। এ অবস্থায় ব্যক্তির মৃত্যুও ঘটতে পারে। কম বা বেশি, যে কোনও পরিমাণে মদ্যপান করলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার। মদ্যপানের ফলে অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং পরে লিভার ক্যানসার হয়ে থাকে। তাছাড়া নিয়মিত মদ্যপানের ফলে অ্যালকোহলিক ওবিসিটি, ক্রনিক প্যানক্রিয়েটাইটিস, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, সেকেন্ডারি ডায়াবেটিস মেলিটাস, রক্তের অনুচক্রিকার কাজে গোলমাল, পেপটিক আলসার, অ্যালকোহলিক কার্ডিও মায়োপ্যাথি ইত্যাদি রোগ দেখা দেয়। অ্যালকোহলিক কার্ডিও মায়োপ্যাথি রোগে হƒদযন্ত্র বড় হয়ে যায়, বুকে ভার বোধ হতে থাকে, রক্তচাপ কমে যায়, হার্ট অ্যাটাক হয় এবং মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া মদ্যপান করে ভারী মেশিন বা যানবাহন চালাতে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বহু লোকই প্রতি বছর মারা যান।
মদ্যপায়ীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ লবনের অভাব দেখা দেয়। এদের শরীরে থায়ামিন অর্থাৎ ভিটামিন বি-১ এর অভাব সব থেকে বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়াও প্যানটোথোনিক অ্যাসিড (বি-৫), পাইরিডক্সিন (বি-৬), সায়ানোকোবালামিন (বি-১২) ইত্যাদিরও অভাব ঘটে। ফলে অ্যালকোহলিক নিউরোপ্যাথি, ওয়ারনিক এনকেফ্যালোপ্যাথি, কোরস্যাকোফস সিন্ড্রম, অ্যালকোহলিক অ্যামবব্ল্যায়োপিয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দেয়। ওয়ারনিক এনকেফ্যালোপ্যাথিতে রোগীর মধ্যে কনফিউশন অর্থাৎ মানসিক বিভ্রম, শরীরের পেশীর রোগ এবং চোখের পেশীর পক্ষাঘাত দেখা দেয়। এ অবস্থায় চিকিৎসা না হলে পরে স্থায়ীভাবে স্মৃতিভ্রংশ হয়, যাকে বলে কোরেস্যাকোফস সিন্ড্রম। আবার অ্যালকোহলিক অ্যামব্ল্যায়োপিয়ায় দৃষ্টিশক্তির অস্বচ্ছতা দেখা দেয় এবং এ থেকে পরে অন্ধত্বপ্রাপ্তি ঘটে। ভিটামিন বি-১ এর সঙ্গে ভিটামিন এ; জিঙ্ক ইত্যাদির অভাবের ফলে রাতকানা অর্থাৎ নাইট ব্লাইন্ডনেস রোগও হয়ে থাকে। শরীরের ভিতর কিছু রোগের ওষুধের সঙ্গে (ডিসেন্ট্রি, ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ, ট্র্যাংকুয়িলাইজ্যার ইত্যাদি) অ্যালকোহলের বিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে। ফলে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া, বমি, বুক ধরফড় করা, প্রচুর ঘাম, মাথা ব্যথা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া, কোমা ইত্যাদি হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
মদ্যপায়ী ব্যক্তিরা নিজের চেষ্টায় মদ্যপান ত্যাগ করতে পারেন। যদি চেষ্টা সত্ত্বেও মদ্যপান ত্যাগ করা না যায়, তাহলে অবশ্যই মানসিক রোগ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। মদ্যপান ত্যাগ করার একান্ত ইচ্ছা এবং চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে মদ্যপান ত্যাগ করে সুন্দর ও সুস্থভাবে নির্মল পরিবেশে জীবন-যাপন করা যায়। তবে আমাদের যুব সমাজ যাতে কোনওভাবেই মাদকে আসক্ত হতে না পারে সেদিকে আমাদের সকলেরই যত্নবান হওয়া উচিত। আর এটা এখনও সম্ভব। কিন্তু যেভাবে মাদকের প্রতি যুবক-যুবতীরা আসক্ত হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবেই। সাংবাদিক-কলামিস্ট ঃ সদস্য জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রচারণা কমিটি, সিলেট।২৪.০৬.২১

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..