1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

কানাডার স্কুল প্রাঙ্গণে ৭৫১টি বেওয়ারিশ কবরের সন্ধান

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১
  • ৩৫৭ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক: কানাডার সাসকাটচেওয়ানে সাবেক এক আবাসিক স্কুলের জমিতে ৭৫১টি বেওয়ারিশ কবর পাওয়া গেছে। দেশটিতে আদিবাসীদের একটি সংগঠন কাউয়েসেস ফার্স্ট নেশন এই কবরগুলো খুঁজে পেয়েছে এবং বলেছে “কানাডায় এত বিশাল সংখ্যক অচিহ্ণিত কবর পাওয়ার এই ঘটনা বিরল”। একইধরনের একটি বোর্ডিং স্কুলের প্রাঙ্গণে কয়েক সপ্তাহ আগে ২১৫টি মৃত শিশুর হাড়গোড় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।

“এটি গণ কবরস্থান নয়। এগুলো সব অচিহ্ণিত কবর,” বলেছেন সংস্থাটির প্রধান ক্যাডমাস ডেলর্মে। ওই এলাকায় মারিভেল ইন্ডিয়ান রেসিডেনশিয়াল স্কুল নামের আবাসিক শিক্ষায়তনটি ১৮৯৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করত রোমান ক্যাথলিক গির্জা। সাসকাটচেওয়ানের এই এলাকাতেই এখন কাউয়েসেস ফার্স্ট নেশন সংস্থার দপ্তর। তবে যে ২১৫টি শিশুর দেহাবশেষ সেখানে খুঁজে পাওয়া গেছে তারা সবাই সেই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল কিনা – তা এখনও স্পষ্ট জানা যায়নি।কানাডায় ১৩০টির বেশি বাধ্যতামূলক আবাসিক স্কুল আছে, যেগুলোর অর্থায়ন করে দেশটির সরকার। দেশটির আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিশুদের সভ্য করে তুলে কানাডার মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দী ধরে এই স্কুলগুলো পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ওপর।

এসব স্কুলে পড়ালেখা করার সময় মারা যায় আনুমানিক ছয় হাজার শিশু- মূলত স্কুলের ভেতর খুবই অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে বাস করার কারণে। শিক্ষার্থীদের প্রায়শই রাখা হতো এমন সব ভবনে যা খুবই নিম্নমানের, সেখানে ঘর গরম রাখার তেমন ব্যবস্থা ছিল না এবং ছিল না শৌচকাজের জন্যও ব্যবস্থা। স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার অনেক শিক্ষার্থী সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। সাসকাটচেওয়ানে ম্যারিভাল ইন্ডিয়ান রেসিডেনশিয়াল স্কুলের কবরস্থানে বেওয়ারিশ কবর খুঁজে বের করতে গত মাসে কাউয়েসেস সংস্থাটি মাটির নিচে সন্ধান চালাতে সক্ষম এমন রেডার যন্ত্র ব্যবহার করে সন্ধানকাজ শুরু করে।

এই অনুসন্ধানের প্রথম পর্যায় শেষ হবার পর বৃহস্পতিবার সংস্থাটি ৭৫১টি অচিহ্ণিত কবর পাবার ঘোষণা দেয়। কানাডার আদিবাসী স্কুলগুলোতে নিহতদের স্মৃতিতে গত কয়েক সপ্তাহে মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাচ্চাদের জুতা রেখে এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোক পালন করছে। সংস্থার প্রধান আদিবাসী চিফ ডেলর্মে বলেন হয়ত বা কোনকালে এই সব কবর কোনভাবে চিহ্ণিত করা ছিল। কিন্তু এই কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত রোমান ক্যাথলিক গির্জা সেগুলো সরিয়ে ফেলে থাকতে পারে। সংস্থাটি বলছে তাদের ভবিষ্যত অনুসন্ধানে চার্চ কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবে বলে তারা “আশাবাদী”। চিফ ডেলর্মে বলেছেন, বেওয়ারিশ সবগুলো কবর শিশুদের কিনা তা এখনও তারা নিরূপণ করতে পারেননি। তাদের কারিগরি দল এখন দেহাবশেষ পরীক্ষা করে নির্ধারণ করবে এদের মধ্যে কতগুলি শিশুর লাশ রয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন সাসকাটচেওয়ানে শিশুদের দেহাবশেষ এবং বেওয়ারিশ এসব কবর খুঁজে পাবার ঘটনায় তিনি ”গভীরভাবে দুঃখিত”। তিনি বলেছেন “কানাডায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ যে ধরনের পদ্ধতিগত বর্ণবাদ, বৈষম্য ও অন্যায়ের শিকার হয়েছে এই ঘটনা জাতিকে লজ্জাজনক ভাবে সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়েছে”।

কী এই আবাসিক স্কুলগুলোর ইতিহাস

কানাডায় ১৮৬৩ থেকে ১৯৯৮ সালের ভেতর দেড় লাখের বেশি আদিবাসী শিশুকে তাদের বাপমা ও পরিবারের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং কানাডার বিভিন্ন জায়গায় এধরনের আবাসিক স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এইসব বাচ্চাদের তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতে দেয়া হতো না, তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চ্চা করতে দেয়া হতো না এবং বহু শিশুর ওপর চালানো হতো অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন।

”আমাদের বিশ্বাস করতে ওরা বাধ্য করত যে আমাদের অন্তরাত্মা বলে কিছু নেই,” গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ফ্লোরেন্স স্প্যাভিয়ার যিনি এধরনের সাবেক এক আবাসিক স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন।

“তারা বলত আমরা হৃদয়হীন মানুষ হয়ে জন্মেছি, ফলে আমরা নিজেদের ঘৃণা করতে শিখতাম।”

এই সংস্কৃতি-ধোলাই পদ্ধতির প্রভাব নথিবদ্ধ করার জন্য ২০০৮ সালে একটি কমিশন গঠন করা হয়। তারা দেখতে পায় যে এই স্কুলে পাঠানো আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশু আর কখনও তাদের সমাজে বা নিজেদের পরিবারে ফিরে যায়নি।

ওই কমিশনের যুগান্তকারী এক প্রতিবেদনে বলা হয় সেই শিক্ষা পদ্ধতি ছিল ”সাংস্কৃতিক গণহত্যার” সামিল।

কানাডার সরকার ২০০৮ সালে এই স্কুল পদ্ধতি পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়।

রোমান ক্যাথলিক গির্জা এধরনের ৭০% আবাসিক স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। তারা এখনও পর্যন্ত এর জন্য কোনরকম আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চায়নি।

কয়েক সপ্তাহ আগে কামলুপসে সাবেক এধরনের একটি আবাসিক স্কুলের প্রাঙ্গণ থেকে ২১৫টি শিশুর দেহাবশেষ খুঁজে পাবার পর আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে জোর করে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার দেশটির নীতিমালা আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতারা আশংকা করছেন বিভিন্ন কবরস্থানে তাদের অব্যাহত সন্ধানকাজের মধ্যে দিয়ে এধরনের আরও মর্মান্তিক কবর ও দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যাবে। এই সন্ধানকাজে এখন অর্থ সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলো।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের দুটি শহর সাসকাটচেওয়ান এবং নিউ ব্রান্সউইক এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পয়লা জুলাই কানাডা দিবস উপলক্ষে তাদের এবছরের উদযাপন বাতিল করেছে।

সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী জন এ ম্যাকডোনাল্ড এবং এধরনের বাধ্যতামূলক আবাসিক স্কুল পরিচালনার সাথে জড়িত ব্যক্তিত্বদের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..