রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : লেখার শুরুতে আমার প্রিয় ক্যাম্পাসের ২৫ বছর পুর্তি উপলক্ষে রজতজয়ন্তী ও আমাদের শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সকল কে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
শিখার জন্য অনেক ভয়ভৃতি নিয়ে প্রবেশ করেছিলাম নিজ জেলার কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণ লংলার আলোর বাতিঘর লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজে।অনেক স্বপ্ন নিয়ে লংলা নামের এই তরুনীর বুকে প্রবেশ করেছিলাম যাতে তরুনী সেখান থেকে স্বপ্ন পূরনের লক্ষে সেবা নিয়ে বের হতে পারি। এই আলোর বাতিঘর থেকে যেন আমি উচ্চ শিক্ষা লাভকরে মানুষের মত মানুষ হয়ে সমাজে শিক্ষার আলো চরিয়ে দিয়ে মানুষের সেবা করতে পারি।স্বপ্ন পূরনের জন্য প্রিয় ক্যাম্পাসে ২০১০ সালে এইচএসসি ভর্তি হই পরে ২০১৫ সালে বিএসএস পাস (ডিগ্রি) লাভ করি।এই ৫ বছরে লংলার বাতিঘরে পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দ উল্যাসে লিপ্ত ছিলাম।বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর গল্প নিয়ে ভালোবাসার ক্যাম্পাসের মুখরিত ছিল এখন ঐ ৫ বছরের দিন গুলো সুধুই স্মৃতির আয়না।কলেজের শিক্ষার পাশাপাশি কলেজের প্রতিটি অনুষ্টানে আমি খেলাদোলায়,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করতাম এবং আমি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয় লাভ করে স্যার দের কাছথেকে পুরষ্কার গ্রহন করতাম। এবং ক্যাম্পাসে প্রতি বছর আমি বৃক্ষরোপন এবং দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে সহযোগিতা করতাম,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজের লেখা নাটিকা পরিচালনা করে নিজেই বন্ধুদেরকে নিয়ে অভিনয় করতাম তা যে কত আনন্দ তা এখন স্মৃতি। এই যে আমার অনুভূতি আজ আমার হৃদয়ে রক্তে মিশে থাকা হাজার ও স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে আমার। ক্যাম্পাস দেখলে বা মনে হলে আমার হৃদয়ে লাগে আজ শুদুই তাহার দু চোখের আয়না।ক্যাম্পাসের চারিদিকে হল রুমে,ক্লাসরুম,টেবিল,ব্রেঞ্চ,ব্লাকবোর্ড, দরজা,জানলা,অসিফ,ক্যান্টিন,শহিদ মিনার সহ ক্যাম্পাসের সবুজ ঘেরা ঘাস বনে মিশে রয়েছে আমার মনের অনেক স্মৃতি,বিশেষ করে বাশের কেল্লা এখন সবই স্বপ্নন মনে হয়।এত মধুর শিক্ষা জীবন গুলো কিভাবে কাঠিয়েছি তা বুঝতে পারি নাই যেন এক স্বপনের আয়না আর আমি তার প্রতিচ্ছবি। বৃষ্টি হলেই কলেজের পুকুরে ছাতা দিয়ে মাছ ধরার স্মৃতি আজ চোখের পর্দায় ভেসে উঠে মাছ ধরার আনন্দ, কিন্তু অনেক মজার পানিতে কলেজ ড্রেস ভিজে এই যে স্মৃতি আজ মনের আনন্দ।যেমন মনের আনন্দের স্মৃতি রয়েছে তেমনি হৃদয় বিদারক স্মৃতি রয়েছে যা আজও ভুলতে পারি নি।২০১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন কলেজের মডেল টেষ্ট পরীক্ষা দিয়ে কলেজ সম্মুখে বের হয়ে দাড়িয়ে থাকে এ সময় একটি বেপরোয়া মটর সাইকেল দ্রুতগতিতে এসে আঘাত করে সাথে সাথে মাঠিতে সে লুটিয়ে পড়ে। তখন থাকে রক্তাক্ত অবস্থায় কুলাউড়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাহার অবস্থা আশাংকা জনক থাকার কারনে দ্রুত আলাউদ্দিন কে সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পরের দিন চিকিৎসা অবস্থায় হাসপাতালে তাহার মৃত্যু হয়।এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা আজও আমার হৃদয়ে বেদনাময়ক স্মৃতি মনে পড়ে। তেমনি আমার প্রিয় ক্যাম্পাসের আরেকটি হৃদয় বিদারক মর্মান্তিক স্মৃতি চোখের আয়নায় ভেসে উঠে ২০২৪ সালের কলেজের এইচ এস সি পরিক্ষার্থী মো: রেদওয়ানুল ইসলাম রাফি রাতে প্রাইভেট পরে কুলাউড়া থেকে বের হয়ে ফানাই নদীর ব্রিজ অতিক্রম করে পালগাও ঈদগায়ের সম্মুখে সিএনজি ও বাগানি ট্রেক্টরের সংঘর্ষে ২৭ ডিসেম্বর রাফির সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। পরে তাকে সেখান থেকে দ্রুত কুলাউড়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মবরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। প্রিয় ক্যাম্পাসের এই দুই কৃতী শিক্ষার্থী প্রিয় স্নেহময় মায়ার ভাই গুলোর চলে যাওয়ার স্মৃতি গুলো আজ চোখের আয়না আর মনের বেদনা। এই কষ্টের স্মৃতি কখনো ভুলার নয়।আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
প্রিয় ক্যাম্পাসের যেমন কষ্টের স্মৃতি রয়েছে তেমনি আনন্দের স্মৃতি রয়েছে বিশেষ করে আমার প্রিয় বন্ধু আহাদ,নজরুল,তানভীর,রিফাত,জুবেদ,লক্ষি,প্রিতী,শিমু,নাজমা,জাফরিন, নাজু,শিরিন, তোফায়েল সহ বন্ধু দের কে অনেক মিস করি।তাদের সাথে ক্যাম্পাস আঙ্গিনায় ঝালমুড়ি আড্ডা,দুষ্টামি আর আনন্দ আজ শুধুই দু চোখের আয়না।দক্ষিন লংলার এই তরুনীর কথা লিখতে গেলে লেখা শেষ হবে না তাই সংক্ষিপ্ত ভাবে কিছু স্মৃতি তুলে ধরলাম।প্রিয় ক্যাম্পাসের মানুষ ঘড়ার কারীগর আমাদের শিক্ষকমন্ডলী।তারা যেমন স্নেহময় তেমন আদর্শবাদী ছিলেন।সম্মান ভালোবাসা আন্তরিকতা, বন্ধুসুলভ শিক্ষকদের ভালোবাসা,প্রিয় কলেজের ক্ষেত্রে স্বপ্ন গুলো একি সুত্রে গাথা।ক্যাম্পাস এক ভালোসার নাম।আমার ক্যাম্পাস সবুজ লতাপাতা দিয়ে ঘেরা সৌন্দর্যের রানি,প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভুমি,শিক্ষকদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা অর্জনে ক্যাম্পাসের কর্মকান্ড মনোনিবেশ করা আজ যেন সবই স্মৃতি। এই ক্যাম্পাস আমার প্রানের অহংকার এত আন্তরিকতা আর ভালোবাসা ছোঁয়া এলেই অমলিন রবে আমৃত্যু। ছেরে যেতে হবে এমন চিন্তাকে আমি কখনো মনের কোনে টাঁই দিতাম না।ভাবলেই আজ দু চোখের কোনে জলের অস্তিত্ব টেরপাই।কলেজের স্যারদের স্নেহের ঋনে ঋনী আমি আজীবন।কলেজ ক্যাম্পাসের প্রতিটি অধ্যায় আমার জীবনের একটি মূল্যবান স্মৃতি যা চিরকাল আমার সাথে থাকবে।
আমার এই লেখাটি কলেজের রজতজয়ন্তী ও শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী ২৪ এর স্মারক ফানাই এ প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রকাশনা কমিটির আহবায়ক ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম স্যার সহ কলেজের সকল শিক্ষকদের প্রতি। সুন্দর ও সফল ভাবে ১৮ জানুয়ারি কলেজ প্রাঙ্গনে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।