মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন
শেখ রিয়াদ ইসলাম স্বপ্ন: চায়ের রাজধানী ও পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার প্রধান অর্থকরী ফসল চা হলেও অপার সম্ভাবনাময় ফসল হচ্ছে বিভিন্ন জাতের লেবু। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চা-এর পাশাপাশি কাগজি লেবুর ভূমিকাও আজ অগ্রগণ্য। এ অঞ্চলে উৎপাদিত প্রায় শত কোটি টাকার অধিক লেবু বেচা-কেনা হয়। দেশের ৮০ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানী করে বছরে শত কোটি টাকার আয় হচ্ছে। পাহাড়ী অঞ্চলের অসহায় কর্মহীন মানুষের কম খরছে বেশী লাভজনক হওয়ায় লেবু চাষে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কয়েক শত শত চাষী। কিন্তু অধিক উৎপাদিত এ লেবু সংরক্ষন ও প্রযুক্তির অভাবে বিপাকে পড়েছেন সম্ভাবনাময় কৃষিজাত পন্য সাথে জড়িতরা।
মৌলভীবজার জেলা সদরসহ ৭টি উপজেলায় চলতি বছর প্রায় দুই হাজার বাগানের প্রায় ১৫/২০হাজার হেক্টর পাহাড়ী ও সমতল ভূমিতে বিভিন্ন জাতের কাগজী লেবু,চায়না,জারা,সাতকরা,এলাচি,সিডলেস লেবু চাষাবাদ করা হচ্ছে। উৎপাদিত লেবু দেশের অভ্যন্তরে প্রসাধনী ও বেভারেজ কোম্পানীর ৮০ভাগ চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও প্রচুর পরিমান রফতানী হচ্ছে। এসব লেবু বাগানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে লেবুর বড় বড় আরদ। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে জীপ,টেম্পু ও ঠেলা গাড়ী যোগে বাজারে আসতে থাকে করে বিপুল পরিমান কাগজী লেবু। যা মধ্য দুপুর পর্যন্ত চলে। আরদে লেবু পাঠান এবং কমিশন ভিত্তিক আরতদাররা পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। অধিক বৃষ্টিরর ফলে এঅঞ্চলে মার্চ থেকে আগষ্ট পর্যন্ত লেবুর ফলন হয় সবচেয়ে বেশী। স্থানীয় চাগিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লেবু নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এমনকি লন্ডনসহ মধ্যপ্রাচ্যে লেবু রপ্তানী করা হয়ে থাকে। লেবুর চাষ লাভজনক হওয়ায় রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমেছেন চাষীরা। লেবুর চাষাবাদ বৃদ্ধির ফলে একদিকে বেকারদের হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে দেশের বাইরে লেবু রপ্তানী করে সরকার পাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। তাছাড়া বেভারেজ কোম্পানীগুলোও ‘লেমন কোল্ড ড্রিঙ্কস’ তৈরীর জন্য বিপুল পরিমান কাগজী লেবু ক্রয় করে থাকে। প্রতি বছরে কমপক্ষে শত কোটি টাকার বেচা-কেনা হয়ে থাকে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
বাগান মালিকরা জানান, আদিকাল থেকে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির লেবুর চাষ কম-বেশী হলেও বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু হয় সত্তরের দশক থেকে। লাভজনক হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, চুনারুঘাট উপজেলায় কাগজী লেবুর ব্যাপক চাষাবাদ করা হচ্ছে। লাভজনক হওয়াতে লেবু চাষের প্রতি চাষীদের উৎসাহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শ্রীমঙ্গলেই এর চাষাবাদ বেশী হয়ে থাকে। যা অন্যান্য অঞ্চলের উৎপাদিত কাগজী লেবুর চেয়ে স্বাদ, গন্ধ ও সাইজে আলাদা।
প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে জীপ, টেম্পু ও ঠেলা গাড়ী যোগে শ্রীমঙ্গলের বাজারে আসতে থাকে করে বিপুল পরিমান কাগজী লেবু। যা মধ্য দুপুর পর্যন্ত চলে। এখান থেকে প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমানের কাগজী লেবু নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এমনকি লন্ডনসহ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রীমঙ্গলের কাগজী লেবু রপ্তানী করা হয়ে থাকে। শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত কাগজী লেবু ছাড়াও উন্নত মানের চায়না, জারা, এলাচি, সিডলেস লেবু উৎপাদন হয়। দেশের লেবুর চাহিদার ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন লেবু বাগান থেকে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় বর্তমানে ২৫ হাজার হেক্টর পাহাড়ী ও সমতল ভুমিতে কাগজী লেবুর চাষাবাদ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়। লেবুর চাষ লাভজনক হওয়ায় রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমেছেন চাষীরা।
লেবু চাষী নেপাল আদিত্য, আ.ফ.ম আব্দুল হাই, শিপন মিয়া ও ঝাড়– মিয়া জানান, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার লেবু বাগানগুলোতে প্রায় ১০ সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করছে। অনেক দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় লেবু চাষের জন্য সেচ ব্যবস্থা খুবই ব্যয় বহুল। অনেকস্থানে বৈদ্যুতিক নলকুপের মাধ্যমে সেচ কার্য চালানো হয়। এ ব্যাপারে তারা সরকারের সুনজর কামনা করেন।
শ্রীমঙ্গলের সফল লেবু চাষী খলিল মিয়া জানান, লেবু চাষ লাভজনক হবার কারনে ১৯৮৮ সালে নিজের ব্যবহৃত বাইসাইকেল বিক্রি করে পতিত জমিতে লেবু চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ৫০ একর জমিতে লেবু চাষ করছেন বলে জানান।
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা হিমাগার স্থাপন,ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও পক্রিয়াজাত প্রতিষ্টান গড়ে উঠলে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। পাশাপাশি মৌলভীবাজারের লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বহিবিশ্বে রপ্তানী করে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব এমনটাই আশা করছেন লেবু চাষী ও ব্যবাসায়ীরা।