শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ :: চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় সরকার চা শ্রমিকদের মধ্যে বছরে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করে। চা বাগানের দু:স্থ ও সর্বোচ্চ দু:স্থ ব্যক্তিরা সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে প্রকল্পের টাকা পেয়েছেন চা বাগানের স্বচ্ছল স্টাফরা। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে এই তালিকায় বাগানের টিলা ক্লার্ক থেকে শুরু করে অনেক স্টাফ আর্থিক সহায়তার চেক পেলেও অস্বচ্ছল চা শ্রমিকরা পরিবার এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, অবহেলিত ও অনগ্রসর চা শ্রমিক জনগোষ্ঠির পারিবারিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ‘চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম’ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর সরকার চা শ্রমিকদের মাথাপিছু ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করে। গত ৭ নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগান ও এর ফাঁড়ি সুনছড়া, কামারছড়া চা বাগানের ১৩৫৬ জন শ্রমিকের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়।
বিতরণকৃত ওই তালিকায় চা বাগানের অনেক সচ্ছল স্টাফও রয়েছেন। ২৭৯ ক্রমিকে আলীনগর চা বাগানের প্রধান টিলা ক্লার্ক নিয়ামুল হোসেন চকদার, ২৮০ ক্রমিকে গোদাম বাবু সিরাজুল ইসলাম, ২৮১ টিলা ক্লার্ক বাবুরাম কৈরী, ২৮২ ক্রমিকে সুনছড়া চা বাগানের টিলাক্লার্ক গোপাল চক্রবর্তীসহ চা বাগানের কম্পিউটার, অফিস ও ফ্যাক্টরী স্টাফদের নাম রয়েছে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী চা বাগানের দু:স্থ ও সর্বোচ্চ দু:স্থ ব্যক্তিরা এই সুবিধা পাওয়ার কথা। তালিকায় চা বাগানের স্বচ্ছল স্টাফদের তালিকা দেখে চা শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চা শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তার তালিকা যৌথভাবে করা হলেও এবিষয়ে একে অন্যের উপর দায় চাপাচ্ছেন।
আলীনগর চা বাগানের শ্রমিক সুবাশ কৈরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার পরিবারের তিন বাগানে কাজ করে। অস্বচ্ছল শ্রমিক। অথচ একজনও এই টাকা পেল না, অথচ বাবুরা কেমনে টাকা পাইলো? একই বাগানের সুমন বাউরী, বিমলা নায়েক বলেন, আমরা চা বাগানের শ্রমিক। পরিবার খুবই অসচ্ছল। অথচ ওই তালিকায় আমাদের নাম নেই।
আলীনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন বাক্তী বলেন, এই তালিকা নিয়ে আমরাও সমস্যায় আছি। আইনের বিষয়টি আমরা জানতাম না।
আলীনগর চা বাগানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক এজেএম রফিউল আলম বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও পঞ্চায়েতরা এই তালিকা তৈরি করেছেন। তারা বলেছেন এর পেতে পারেন।
এ ব্যাপারে আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক বাদশাহ বলেন, মূলত তালিকা তৈরির বিষয়টি আমার নয়। বাগান পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে অনেকেই সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাছাড়া যারা তালিকা তৈরি করেছেন তাদের মতে এরা সবাই চা বাগানের বাসিন্দা এবং এই সহায়তা পাওয়ার যোগ্য।
অভিযোগ বিষয়ে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সুয়েব আহমদ চৌধুরী বলেন, বাগান পঞ্চায়েত, ম্যানেজার ও জনপ্রতিনিধিরা মিলেই তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী তাদেরকে চেক দেয়া হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, এই বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে সমাজ সেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।