মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দুইটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৪ শত চাষী বাণিজ্যিকভাবে প্রতি বছরই বরবটি (স্থানীয়ভাবে এটি রামাই নামে পরিচিত) চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু প্রায় দেড় যুগ ধরে বরবটি চাষে ব্যাপক সফলতা থাকলেও উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ও বরমচাল এই দুই উনিয়নের
মধ্যে বরবটি চাষাবাদের সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। সেচের পানি সংকট এবং সরকারি কোন প্রণোদনা না থাকাসহ নানা সমস্যায় বরবটির আবাদ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন চাষীরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ধেকেরও কম জমিতে বরবটি চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ও বরমচাল ইউনিয়নে ২০ হেক্টর কৃষি জমিতে বরবটি চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে চায়নীজ, কেগোর নাটকি, লাল বেনী জাতের বরবটি চাষ করা হয়। ২০২১ সালে ৪৫ হেক্টর জমিতে এবং ২০২০ সালে ৪০ হেক্টর জমিতে বরবটি চাষ হয়েছিলো। এক
বিঘা জমিতে ২ টন বরবটি ফলন হয়।
সম্প্রতি সরজেমিনে ঘুরে জানা যায়, আবাদের দুইমাস পর ফলন ভালো হলে একদিন পর পর ১ বিঘা থেকে ১০ থেকে ১২ মণ বরবটি সংগ্রহ করা যায়। প্রতিদিন একেকজন চাষী ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বরবটি পাইকারী বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী ক্রেতারা পিকআপভ্যান ও সিএনজি অটোরিক্সাযোগে উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার-বরমচাল সড়কে অবস্থিত শ্রীপুর মাদ্রাসা বাজারে চাষীদের কাছ থেকে বরবটি কিনতে আসেন। এজন্য প্রায় প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ওই এলাকায় অস্থায়ী বরবটির পাইকারী হাট বসে। চলতি বছর পাইকাররা এসে ৩০-৩২ টাকা কেজি ধরে বরবটি ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। বরমচালের পশ্চিম সিংগুর গ্রামের বাসিন্দা খোর্শেদ আলম জানান, আড়াই বিঘা জমিতে বরবটি চাষ করেছি। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এই চাষাবাদ করে আসছি। বরবটি চাষে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবার তেমন লাভ হবে না। পোকার আক্রমণ ও খরায় ফসল নষ্ট হয়েছে অনেক। বরবটির অনেক গাছের পাতা হলুদ ও পোকার আক্রমণে বরবটি ছিদ্র হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা কোন পরামর্শ পাইনা। সেচ ব্যবস্থা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পরামর্শ পেলে দিত অনেক উপকৃত হতাম। স্থানীয় চাষী জাহাঙ্গীর মিয়া ও সুরুজ আলী জানান, একদনি পর পর ৬ থেকে ৭মণ বরবটি পাইকারী বিক্রি করি। এ বছর দাম ভালো। তবে ফলন অনেক কম হয়েছে। বরবটি চাষে খরায় পানির অভাবে ও পোকার আক্রমণে ক্ষতি অনেক হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়াই কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এ সুযোগে কোম্পানীর লোকজন বেশি ওষুধ ও সার বিক্রির জন্য আমাদের অতিরিক্ত এবং মানহীন ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।
চাষী সাইদুল ইসলাম সুজন বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের কোন সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়না। আমার ৫ বিঘা আবাদকৃত জমির মধ্যে ২বিঘা ফলনের অনেক গাছেই এক ধরণের পোকা ফসলে ছিদ্র করে ফেলে এবং পাতা হলুদ হয়ে গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও গাছের গোড়ায় একধরনের রোগে গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফসল আসেনি। ওই দুই বিঘার ফলন এখনো পাইনি। চাষীরা জানান, পৌষ মাস থেকে বৈশাখ পর্যন্ত তুলনামূলক বৃষ্টি কম হওয়ায় খেতে সেচের পানির সংকটে পড়তে হয়েছে। সরকারীভাবে এসব এলাকায় সেচের জন্য নলকূপ ও পাম্প দেওয়া হলে এ সময় আমাদের সেচ সংকট কাটবে। এ বছর কম জমিতে বরবটি আবাদ হয়েছে। সিলেট থেকে বরবটি কিনতে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই এলাকা থেকে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার বরবরি ব্যবসা হয়। এখান থেকে সিলেটের বিভিন্ন বাজার থেকে পাইকারী বিক্রেতারা গাড়ি দিয়ে এসে বরবটি নিয়ে যান। এখানকার বরবটির চাহিদা অনেক। চাষীদের পরামর্শ না দেওয়া এবং সেচ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, আমাদের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মাঠে গিয়ে চাষীদের পরামর্শ দেন। সরকারিভাবে বরবটি চাষে কোন প্রোণদোনা নেই। পোকার আক্রমণ রোধে পরিবেশ বান্ধব সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে উৎসাহ দেই যাতে ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের ব্যবহার কম করেন চাষীরা। এতে আর্থিক সাশ্রয়ও হবে। বরবটির পাতা হলুদ হওয়ার কারণ হলুদ মোজাইক ভাইরাসের সংক্রমণ। এ ভাইরাসের সংক্রমণরোধে চাষীদের সচেতন করা হয়েছে। সেচের বিষয়টি বিএডিসি সেচ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষে বিষয়। তারা সেটি দেখবে।