1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

” অপ্রকাশিত মা ” – মাহজাবিন

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২
  • ৭৬১ বার পঠিত

” আমি আমার এক বাচ্চার জন্য আরো দুটি বাচ্চাকে খু ন করেছি নিজের হাতে “কথাটি বলেই হু হু করে কেঁদে দিলেন মিসেস জাবিন।
তার অপরপাশে বসা সুক্ষ্ম ব্যাক্তিতের অধিকারি মিস হিয়া তাকে দেখছেন, অবশ্য এটাকে দেখা বলা যায় না এক প্রকার পর্যবেক্ষণ করছেন তাকে।
মিস হিয়া গলা ঝেড়ে প্রশ্ন করলেন মিসেস জাবিনকে… ” আপনার পুরো ঘটনাটা আমায় শুরু থেকে বলুন নাহয় আমি আপনাকে কোন প্রকার সাহায্য করতে পারবো না।”
মিসেস জাবিন বলতে শুরু করলেন…. ” আমার বিয়ের ১ বছর ৬ মাস পরে আমার প্রথম বেবি কনসিভ হয়, তখন আমার স্বামি খুশি ছিলেন। তারপর আমার প্রথম সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর আমার স্বামি যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছেন এমন আদর যত্ন শুরু করলেন, যা দেখে আমি অত্যন্ত খুশি হয়ে যাই। এমন করেই দিন কাটছিলো। আমার বড় সন্তানের ১ বছর একমাস তখন আমি জানতে পারি আমি দ্বিতীয় বারের মতো কনসিভ করেছি, আমি ঠিক খুশিও হইনি আবার মন খারাপও করিনি অনেকটা বাধ্য হয়েই মেনে নিয়ে ছিলাম। কিন্তু ভয়ছিল আমার স্বামিকে নিয়ে, হোলও তাই তাকে জানানোর পর সে অনেক রাগারাগি করে এবং আমায় এক প্রকার জোর করেই ১১ সপ্তাহের বাচ্চাটিকে এবরশন করান। ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারতো, কিন্তু না মূলত ঘটনার শুরুটাই ছিল এখানে, আমার এবরশনের ১ মাস পর আমার মেডিকেল রিপোর্ট গুলো দেখে আমি অবাক হই, কারন আমার গর্ভে দুটি বেবি ছিল। আমি ভেঙে পরি আমার প্রথম সন্তানকে আমি খুব ভালোবাসি কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারতাম না আামার স্বামীর জন্য, এমনিতে সে আমায়ও প্রচন্ড ভালোবাসে এবং বাচ্চাকেও। কিন্তু আমার বাচ্চার প্রতি ভালোবাসাটা সে প্রকাশ করতে দিত না, তার নিজের কাছেই রাখত বেশি সময় এবং আমার কাছে যখন থাকত তখন সে ফোে এমন এমন কথা বলত যা আমার ভালোবাসাটাকে দমিয়ে ফেলতো । এবার আসি মূল কথায়,,, আমি সত্যিটা জানার পর আমার স্বামীকপ প্রশ্ন করলে সে জানায়, যে সে নিজেও প্রথমে জানতে পারেনি, জানলে সে এমনটা করত না। ”
এতটুকু বলে মিসেস জাবিন থামলেন। মিস হিয়া এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন মিসেস জাবিনকে তিনি তা পান করলেন।
মিস হিয়া প্রশ্ন করলেন…” তারপর কি হলো? ”
মিসেস জাবিন আবার বলতে শুরু করলো… ” এরপরই আমি আমাদের বড় সন্তানকে বেশি আদর যত্ন করতে শুরু করি কারন আমার কাছে মনে হতো আমি আমার আরো দুটি বাচ্চাকেও ওর মধ্যে পাচ্ছি অনেক বেশি ভালেবাসতে শুরু করলাম ওকে। ওকে কাছছাড়া করতে ইচ্ছে করতো না একদমই কিন্তু তা আমার স্বামীর সইলো না সে আবার আমার সন্তানকে আমার থেকে দুরে সরিয়ে ফেললেন আমি আবার একা হয়ে গেলাম । ”
মিস হিয়া কিছুক্ষন সময় নিয়ে বললেন…. “আপনার স্বামীকে ডেকে দিয়ে আপনি ৫ মিনিট একটু বাইরে বসবেন ওনার সাথে আমি কিছু কথা বলতাম। ”
খানিকবাদেই মিস্টার আহমেদ কেবিনে প্রবেশ করেন।।
মিস হিয়া গলা ঝেড়ে ফেলে কথা শুরু করলেন… ” মিস্টার আহমেদ আপনার কি মতামত মিসেস জাবিনের সম্পর্কে? ওনার সমস্যাটা ঠিক কোথায় মনে হচ্ছে আপনার? ”
মিস্টার আহমেদ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলতে শুরু করলো…. ” আমার স্ত্রী জাবিন মেয়ে হিসেবে অসম্ভব ভালো, কিন্তু মনের দিকে অনেক নরম। আমাদের বড় সন্তান যখন হয়, তখন জাবিনের বয়স কম হওয়ার ফলে অনেক ধরনের শারিরীক সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে ডাক্তার ওকে চিন্তা মুক্ত রাখতে বলেন এবং এও বলেন যেন ৫/৬ বছরের আগে জাবিন কনসিভ না করে, কারন এতে জাবিনের জীবনের ঝুঁকি আছে।
আর তাই আমি সন্তানকে বেশির ভাগ সময় আমার কাছে রাখতাম জাবিনকে চিন্তা মুক্ত রাখার জন্য। পরবর্তীতে যখণ জাবিন কনসিভ করে আবার আমার নিজের প্রতিই রাগ হচ্ছিল কেন আমি আর একটু সাবধানে থাকলাম না, তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই জাবিনের জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে ওর এবরশনটা করতে হয় আমাকে, কিন্তু তখনো আমি বুঝতে পারিনি যে জাবিন বিষয়টি নিয়ে এতটা হীনমন্যতায় ভুগবে। এরপর যখন জাবিন তার মেডিকেল রিপোর্ট গুলো হাতে পায় আরো অনেকটা ভেঙে পরে সে টুইন প্রেগ্ন্যাসির কথা জানতে পেরে, এখানে বলে রাখা ভালো আমিও পরেই জানতে পেরেছিলাম টুইন প্রেগ্ন্যাসির কথা ডাক্তার আমায় বলেনি প্রথমে।
এরপরই হঠাৎ জাবিনের মধ্যে পরিবর্তন হতে শুরু করে, সে অনেক বেশি সময় আমাদের বড় সন্তানকে নিজের কাছেই রাখতে শুরু করে এবং অনেক বেশিই আদর যত্ন করতে শুরু করে। আমি প্রথম দিকে অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিলাম এটা ভেবে যে জাবিন নিজেকে রিকভার করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু না আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে জাবিনের অস্বাভাবিক আচরণ আমার চোখে পড়ে যায়,,, সে কখনো কখনো আমাদের বড় সন্তানকে বুকের মধ্যে আগলে রেখে বলতো তোকে একা কোথাও যেতে দিবনা ওরা তোকে মে/রে ফেলবে কারন আমিযে তোর জন্য ওদের মে/রে ফেলেছি, আবাট কখনো বাচ্চাটিকে মার/ ধর করে বলতো তোর জন্য আমি আমার সন্তানদের মেরে ফেলেছি। এরপরই আমি চিন্তিত হয়ে পরি এবং জাবিনের থেকে আমাদের বাচ্চাকে আলাদা রাখি অনেকটা আমার কাছেই। ”
মিস্টার আহমেদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলে উঠলেন এবার আপনিই বলুন নাহয় আমি আর কিইবা করতে পারতাম,,, আমি ভুল করেছি নাকি ঠিক??
মিস হিয়া তার টেবিলের উপরে থাকা পেন হোল্ডারটিকে ঘোরাতে ঘোরাতে বলতে শুরু করলেন……. ” আপনি ঠিক নাকি ভুল করেছেন সেটা পরে বলছি। আগে আপনার স্ত্রী অর্থাৎ মিসেস জাবিনকে নিয়ে আসুন। ”
মিস্টার এবং মিসেস আহমেদ ভিতরে প্রবেশ করার পর, মিস হিয়া তাদের একটা মনিটরের দিকে নজর দিতে বলেন, তারা উভয়ই কোতুহলী হয়ে সেদিকে তাকালে দেখতে পায় বর্তমান সময়ের ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও যাতে দেখা যাচ্ছে একজন মায়ের সন্তান করুনভাবে মৃত্যুবরন করলে তা মা মেনে নিতে পারে না একপ্রকার মানসিকভাবে ভেঙে পরলে তাকে তার সন্তানের সাথে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির মাধ্যমে সাক্ষাত করানো হয়, অর্থাৎ এতদিন তার মনে যেটা ছিল তারই মিথ্যা প্রতিচ্চবি বা কল্পনা ।
মিস হিয়া আবার বলতে শুরু করে…. ” এবার শুনুন আমার আপনাদেরকে এই ভিডিও দেখানোর কারন হচ্ছে মিসেস জাবিনেন সমস্যা। বাস্তবিক অর্থে তার কোন প্রকার মানসিক সমস্যা গুরুতর না হলেও তার মনের মধ্যের সুপ্ত একটি আকাঙ্খা ও কৌতুহল একটি অপ্রকাশিত মা সত্তা তাকে কল্পনার জগতে এমনভাবে প্রবেশ করিয়েছে যে তিনি বাস্তব এবং কল্পনার মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারছেন না যা একটি অমূলক প্রত্যক্ষন বিভ্রম বলে পরিচিত।
আসুন আপনাদের এই ব্যাপারটা আমি আরও একটু ব্যাখ্যা করে বলছি……..
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম কথাটির ইংরেজি পরিভাষা “হ্যালুসিনেশন” শব্দটির প্রথম ইংরেজি ভাষায় প্রয়োগ করেন ১৭শ শতাব্দীর চিকিৎসক স্যার টমাস ব্রাউন। ১৬৪৬ সনে তিনি লাতিন শব্দ আলুসিনারি (“alucinari”) শব্দটি আনয়ন করেন যার অর্থ “মনের ভেতরে ঘুরে বেড়ানো”।
অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম হল বাইরের কোনো উদ্দীপনা ছাড়াই মস্তিস্কে বাস্তবের মত অনুভূতি প্রত্যক্ষণের প্রক্রিয়া। অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম খুবই স্পষ্ট ও বাস্তবসদৃশ স্থায়ী হয়ে থাকে। তাছাড়া অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম বাস্তব জগতের স্থানও দখল করে। তবে অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমকে বাস্তব জীবনে আমাদের পরিচিত ঘটনাগুলো থেকে আলাদা করা হয়ে থাকে। যেমন, ঘুম আর অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম এক নয়। কারণ ঘুমের সাথে জেগে থাকার সম্পর্ক নেই। আবার ছদ্ম-অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম আর এই নিবন্ধে আলোচ্য অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমও এক নয়। কেননা, ছদ্ম-অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম বাস্তব অনুভূতির হুবুহু প্রতিচ্ছবি তৈরি করে না এবং এটি অবাস্তব কল্পনা হিসেবে গৃহীত হয়। অনুরূপ, বিভ্রম ও অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রমও এক নয়। যেহেতু বিভ্রমের ক্ষেত্রে বাস্তব জগত অনেকটা বিকৃত দেখা যায়। মানসচিত্রও অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম থেকে আলাদা। কারণ মানসচিত্রও বাস্তব অনুভূতির হুবুহু অনুকরণ করে না এবং এটি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন হয়।[১] তাছাড়া অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম মতিবিভ্রম (Delusion) থেকেও ভিন্ন। মতিবিভ্রমে বাস্তব জগতের উদ্দীপক থাকে এবং অনুভূতিও একদম বাস্তব হয়। বাস্তব উদ্দীপক ও এর থেকে প্রাপ্ত অনুভূতি থেকেই বাড়তি (সাধারণত উদ্ভট) কিছু ব্যক্তির মাথায় ঢুকে যায়।
এবার আমার পরামর্শ হবে মিসেস জাবিন আপনি আপনার কল্পনা এবং বাস্তবের পার্থক্য করার চেষ্টা করুন, নিজের বর্তমানকে নিয়ে ভাবুন তাহলে অবশ্যই আপনার স্বামী আপনাকে আপনাদের সন্তান হতে দুরে সরিয়ে রাখবেন না। আর আপনি নিজের দৈনন্দিন জীবনের রুটিন পরিবর্তন করুন, যেমন ধরুন সকালবেলা মেডিটেশন করলেন, এরপর আপনার পছন্দ অনুযায়ী কাজ করলেন নিজেকে নিজে সময় দিন। আর হ্যাঁ অবশ্যই নিজের সন্তানকে ভালোবাসুন তবে মাতৃত্ব থেকে হারানোর ভয় থেকে নয়। ” কথা শেষ করেই মিস হিয়া এক গ্লাস পানি পান করলেন।
মিসেস জাবিন অনেকটাই বুঝতে পেরেছেন যে আসলে তার দেখা এবং শুনা সকল কিছুই তার কল্পনা।
অন্যদিকে মিস্টার আহমেদ কৃতজ্ঞতা সূচক একটি হাসি উপহার দিলেন ডাক্তার মিস হিয়াকে, তিনিও নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন যা কেবল ডাক্তার হিয়ার জন্যই সম্ভব হয়েছে।
মিস্টার আহমেদ মিসেস জাবিনকে নিয়ে উঠে মিস হিয়ার উদ্দেশ্যে বললেন….. ” মিস হিয়া তবে আজ আমরা উঠি হয়তো আর আপনার কাছে আসার প্রয়োজন হবে না, তবে আমি আপনার প্রতি চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। ”
মিস হিয়া তাকালেন একপলক তাদের দিকে….. তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন,,, তারা বের হয়ে যেতেই একটি রহস্যময় হাসি দিয়ে নিজেকেই যেন নিজে বললেন…. “সব সত্য প্রকাশ পেতে হয় না, কারন তাহলে প্রকৃতির নিয়মে যে বাধা পড়বে। তাই কিছু সত্য অপ্রকাশিতই নাহয় থাক তাদের অপ্রকাশিত মায়ের জন্য ।।”

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..