রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন
আমার ছাত্রী পিংকি তার হাতের তালুতে লেখা- পি+এস এর মিনিং জানতে চাইলো।তখন আমি উত্তর দিলাম, pতে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আর sতে সালমান খান।আমার কথা শুনে পিংকি কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,আমার হাতে কেন তাদের নাম লিখতে যাব? আমি তখন বললাম, কেন লিখতে যাবে তা তো জানিনা আমার এটা মনে হলো তাই বললাম। এখন নিজের পড়ায় মন দাও।
পড়ানো শেষ হলে যখন আমি চলে যাবো তখন পিংকি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,স্যার আপনি কি কিছুই বুঝেন না?আমি কোন উত্তর না দিয়ে বের হয়ে চলে গেলাম।
পরদিন ছাত্রীকে যখন পড়াতে গেলাম, তখন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টোতেই খেয়াল করি চিরকুটে লেখা – স্যার, “আমি আপনাকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি”। আমি বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে ওকে বললাম পড়ায় মন দিতে। পড়ানো শেষ হলে যখন চলে যাবো তখন পিছন থেকে ছাত্রী আমার হাত ধরে বললো, স্যার কিছুই কি বলবেন না? পিংকির হাত সরিয়ে বললাম সবে ইন্টারে পড়ো তোমার বাবা তোমায় ল্যাপটপ, আইফোন সবই হাতে তুলে দিয়েছে।অার কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করার পর তিন সেমিস্টার চলে গেছে, এখনো বাবাকে এগুলো কিনার কথা বলতে সাহস পাইনি। কারণ, আমার বাবার এত নেই! এখন নিশ্চয়ই তোমার আমার তফাৎটা বুঝতে পেরেছো? এছাড়া তুমি এখন যেটাকে ভালোবাসা ভাবছো,কয়েক দিন পরে সেটাকে তোমার আবেগে করা ভুল মনে হবে। কথা গুলো বলে বেরিয়ে গিয়ে সেদিনের পর থেকে তাকে আর পড়াতে যাইনি।
অতঃপর কেটে গেল চারটি বছর। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার পরে ও হয়ে গেলাম পুলিশের এস আাই।আর পোস্টিং হলো ঢাকার মিরপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। একদিন থানায় সেই ছাত্রীর বাবাকে দেখে চমকে গেলাম! ওনার কাছে গিয়ে বললাম আংকেল আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি সুমন এক সময় আপনার মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতাম। ছাত্রীর বাবা বিস্মিত হয়ে বললেন, সেই সুমন যে আমদের কিছু না বলে হঠাৎই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলে? হ্যাঁ, কিন্তু আংকেল আপনি থানায় কেন?ছাত্রীর বাবা মাথা নিচু করে বললো, যে আমার মেয়ের এত বড় ক্ষতি করছে পুলিশ তাকে ধরতে পেরেছে কিনা জানতে এসেছি।
আমি কিছুটা ভয় পেয়ে বললাম কি হয়েছে পিংকির?
পিংকির বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন, এক বখাটে গতকাল আমার মেয়ের মুখে এসিড মেরেছে। আমি শুধু বোবার মত তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
পরের দিন পিংকিকে দেখতে গেলাম। পিংকি আমাকে দেখা মাত্রই তার ঝলছে যাওয়া মুখ ওড়নায় ঢেকে নিয়ে আমাকে বললো ভালো আছেন স্যার? আমি কোন জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলাম। পিংকি মৃদু হেসে বললো, আমার ভালোবাসায় শুধুই আবেগ ছিলনা স্যার, সত্যিকারের ভালোবাসা ছিল। তাই তো আপনি চলে যাবার পরে ও আজও আগের মতই আছি। বাবা শত চেষ্টা করেও বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারেনি। আজকের নিয়তি আমার কপালে লেখা ছিল। কেন জানি একটা বিশ্বাস ছিল কোন একদিন আমাদের দেখা হবে। আমার ভালোবাসা যে শুধুই আবেগ ছিল না এটা জানবেন। দূর্ভাগ্য সময় শেষ হবার পর জানলেন।পিংকির কাছ থেকে উঠে গেলাম আর থাকতে না পেরে।আংকেলের কাছে গিয়ে সরকারি বললাম- পিংকিকে আমি বিয়ে করতে চাই।পিংকির বাবা বিস্মিত হয়ে বললেন, ” সত্যি বলছো বাবা”।
এবার পিংকি বেকে বসলো।পিংকি বললো, এখন আমাকে কেউ বিয়ে করবে না বলে করুনা দেখাতে এসেছেন?ভালো থাকতে হাজার বার বুঝানোর পরে ও বুঝতে চাননি আমার করুন আকুতি। এখন এই অবস্থায় আমাকে বিয়ে করে মহৎ হতে চাইছেন? অনুগ্রহ করে কোন দয়া দেখাতে আসবেনা। আমি পিংকির হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম এত বছর আমার জন্য অপেক্ষা করেছিলে,অনিশ্চিত ফেরা জেনেও বসে ছিলে।আমি না হয় তোমার হাতটা ধরে বাকিটা জীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেই সত্যিকারের ভালোবাসায়।কোন করুনা , দয়া , আবেগে নয়। আমার কথা শুনে পিংকি ঝরঝর করে কেঁদে দিল অতি আবেগে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে এত দিনের জমানো কান্না শেষ করতে দিলাম।
আসলে ভালোবাসা যদি সত্যিকারের হয় তা পূর্নতা পাবেই।যার অবস্থান যেমনই হোক!
সমাপ্ত