শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন
হিফজুর রহমান :: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েন সিলেটবাসী। শহরের ২০টি এলাকাসহ প্লাবিত হয়েছিলো পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এতে জেলার একেকটি উপজেলা পরিণত হয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। গ্রামের পর গ্রাম, ইউনিয়নের পর ইউনিয়ন পানির নিচে চলে যায়। পাকা, আধাপাকা, মাটির ঘর সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে মাটির ঘর পানির ঢলে ভেসে যায়। এসব ঘরের বাসিন্দারা কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। শুধু প্রাণ নিয়ে এক কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। নিজের শেষ সম্বল রক্ষার্থে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে তার ঘরেই অবস্থান করেন। বন্যার কারণে শত শত বাড়ি, গাছপালা পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়।
আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে যায় মানুষ। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট দেখা দেয় বন্যা কবলিত এলাকায়। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সিলেটের জন্য সহযোগিতা আসতে থাকে৷ দেশ-বিদেশ থেকে ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে শুরু করে মানুষ৷ যার যা সামর্থ্য আছে, তা নিয়েই সিলেটের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের মানুষ৷ যারাই ত্রাণ নিয়ে এসেছেন, তাদেরকেই দেশের মানুষ বাহবা দিয়েছেন৷ তারা সম্মান পাওয়ার’ই কথা৷ তারা অনেক কষ্ট করে মানুষের দুয়ারে খাবার পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।
মানুষকে সাহায্য করে সবাই মোটামুটি সামনে এসেছেন৷ এমন একদল মানুষ আছেন পর্দার আড়ালে, যারা দূর থেকে কেঁদেছেন পুণ্যভূমি সিলেটের বন্যার্ত মানুষের জন্য৷ সাহায্যও করেছেন কোটি কোটি টাকা৷ তবুও তারা অন্যদের মতো সামনেই আসেনি। তারা আর কেউ নয়। আমাদের দেশের সন্তান। যারা প্রবাসে অবস্থান করছেন। তারা আমাদের মহানায়ক ।
আমাদের প্রবাসী!
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক হিসাব নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি দিয়েছেন৷ যারা দেশে টাকা পাঠিয়ে রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন৷
এই প্রবাসীরা বিভিন্ন দুর্যোগে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ান৷ দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তারা নিজের উপার্জিত সম্পদ বিলিয়ে দেয়৷
বাংলাদেশের অনেক ব্যক্তি, সংগঠন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা কোটি কোটি টাকার ত্রাণ বন্টন করেছেন৷ ব্যক্তি বা সংগঠন এর উদ্যোগে যারাই ত্রাণ দিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে প্রায় ৯৫% নিজের টাকার পাশাপাশি বিকাশ, নগদ ও ব্যংক একাউন্টের মাধ্যমে অন্যদের থেকে সাহায্য নিয়েছেন৷ বন্যার্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য মুহূর্তের মধ্যেই এসকল একাউন্টে লক্ষ,লক্ষ টাকা জমা হয়েছিলো।
সিলেটের বন্যার্তদের মধ্যে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার ত্রাণ বন্টন করেছে, এমন একটি সংগঠন এর সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, তাদের ত্রাণের ৮০% টাকা আসে প্রবাসীদের থেকে৷ এইতো একটা সংগঠন এর হিসাব৷ যারা মাত্র ৮ লাখ টাকার ত্রাণ দিয়েছে৷ অপরদিকে যে সংগঠনগুলো কোটি কোটি টাকার ত্রাণ দিয়েছে এগুলোতে প্রবাসীদের অবদান আন্দাজ করা যায়৷
এদিকে অনেক প্রবাসী নিজ উদ্যোগে নিজনিজ এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করেছেন৷ যুক্তরাজ্য নাগরিক বাংলাদেশি বংশদ্ভূত ফাহমিদা ইয়াসমিনের সাথে বন্যার্ত মানুষ নিয়ে আলোচনা করলে তিনি বলেন, অনেক আছেন কোন সংগঠন এর কাছে টাকা না পাঠিয়ে নিজ উদ্যোগে এলাকার মানুষকে সাহায্য করছেন৷ আমিও আমার পরিচিত লোকদের দিয়ে এলাকার বন্যার্তদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছি। এভাবে অনেকে করছেন৷
সবশেষে বলতেই হবে, দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে পর্দার আড়ালে থেকে যেভাবে প্রবাসীরা কাজ করে যান, দেশ ও দেশের মানুষের বিপদেআপদে তেমনি তারা পর্দার আড়াল থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ান। বিশেষ করে সিলেটের মানুষ দেশের সকল মানুষের সাহায্য ও প্রবাসীদের অবদান কখনোই ভুলবে না।