1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

পবিত্র মহররম এর শিক্ষা, ফজিলত এবং তাৎপর্য – আফতাব চৌধুরী

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২
  • ৩৩৬ বার পঠিত

ধর্মপ্রেম, দেশপ্রেম, মানবপ্রেমের মহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে বিশ্বে সর্বপ্রথম গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে আত্মদান ও স্বপরিবারে রক্তে রঞ্জিত করার সুমহান শিক্ষা ও পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে বহু ঐতিহাসিক সুখ-দুঃখ বিজড়িত নানা ঘটনাপ্রবাহের অবিস্মরণীয় ঘটনা নিয়ে মহররম আসে আমাদের মাঝে প্রতি বছরই। শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত আলি (রাঃ) ও বিবি ফাতেমার আদরের সন্তান হজরত ইমাম হোসেন (রাঃ) ও মাবিয়ার পুত্র স্বৈরাচার এজিদকে গণতন্ত্রের মাধ্যমে ও ইসলামিক ভাবধারায় দেশের শাসনভার গ্রহণ এবং পরিচালনার জন্য বলেন। কিন্তু তিনি বাদশাহর পুত্র বাদশাহ হবে এই ভাবধারায় জোরপূর্বক মক্কার শাসনভার গ্রহণ করে নেন এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করতে থাকেন। তখন হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এজিদ শাসকগোষ্ঠীর সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হন। এজিদ বাহিনী সম্মুখ সমরে না-গিয়ে ষড়যন্ত্র করে কুফা নামক স্থানে আমন্ত্রণ করে রাস্তায় অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে এবং কারবালার প্রান্তরে তাদের ঘিরে ফেলে ও পানীয় পানি বন্ধ করে দেয়। ইমাম হোসেন (রাঃ) এর পরিবারসহ অন্যান্য লোকেরা কাতর হয়ে অনেকেই শত্রæদের হাতে শহিদ হন। ইমাম হোসেন (রাঃ) যুদ্ধ করে পানি সংগ্রহ করে পান করার সময় দেখেন তার স্বজনগণ শহিদ হয়ে গিয়েছে। তখন তিনি স্বজনহারার বেদনায় পানি হাতে নিয়েও আর পান করেননি। স্বৈরাচারীর সঙ্গে কোনো ধরনের আপস না-করে যুদ্ধ করে শহিদ হন। মহররম মাসের ১০ তারিখে বিশ্বের প্রথম গণতন্ত্রের লক্ষ্যে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর সাথে আপসহীন, সংগ্রাম করে আত্মহুতি দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কারবালার মরুপ্রান্তর রক্তে রঞ্জিত করে পৃথিবীর মানুষকে যুগান্তকারী অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয় পথ প্রদর্শন করে গেছেন হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ)। যে কারণে পবিত্র আশুরার এই দিনটি শোকাবহ হলেও এ দিনটি চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে গণতন্ত্রকামী মানুষের মনে।
হিজরি বর্ষ বা আরবি প্রথম মাসকে বলা হয় মাহে মহররম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যময় ফজিলতের মাস। ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে মাহে মহররমের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাসের ১০ তারিখে বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহররম তারিখকে ইয়াওমে আশুরা বলে নামকরণ করা হয়েছে। রসুল (সা.) বলেন, মহান আল্লাহতা’লা বিশ্বে ধরিত্রীকে সৃষ্টির সূচনা শুরু করেন ১০ মহররম তারিখে, আর মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদমকে (আঃ) এই ১০ মহররম তারিখে সৃষ্টি করা হয় এবং দুনিয়াতে নিক্ষেপের দিনটিও ছিল ১০ মহররম দিবস। আদম ও হবা’র (আঃ) সুদীর্ঘ সাড়ে তিনশ বছর পর এই দিনেই আরাফতের মাঠে প্রথম মিলন সংঘঠিত হয়। এই দিনেই কেয়ামত বা মহাপ্রলয় অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনেই সর্বপ্রথম দুনিয়াতে রহমতের বৃষ্টি বর্ষন হয়। এক কথায় আল্লাহতা’লা জগতের সকল বস্তুসামগ্রী সৃষ্টি করে তাঁর আরশে আজিমে সমাসীন হয়ে প্রভূ হিসাবে অভিসিক্ত হন ১০ মহররম তারিখে আশুরার দিনে। এ মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলতও বহুগুণে বেশি।
মাহে মহররমের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত পৃথিবীর সূচনাকাল থেকেই আছে এবং কেয়ামত বা মহাপ্রলয় কাল পর্যন্ত থাকবে। ইসলামের পূর্বাপরে এ মাসটি অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাশীল হিসাবে পরিগণিত হয়। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে আরববাসীরা এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা রক্ষার্থে কোনো প্রকার অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার, যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। মহান আল্লাহতা’লা যে ৪টি মাসকে সম্মানিত করেছেন তা হল জিলক্কদ, জিলহজ, মহররম ও সফর। সেই চারটি মাসের মধ্যে মাহে মহররম অন্যতম ফজিলতপূর্ণ বরকতময় মাস, যার বর্ণনা কুরআন ও হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে।
মাহে মহররমের ১০ তারিখের কিছু ঘটনাবলি যেমন হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টি, আদম (আঃ) এর বেহেশত প্রবেশ, বাবা আদম ও মা হাওয়া নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণের ভুলের ফলে দুনিয়াতে নিক্ষিপ্ত হওয়া, ৩৫০ বছর পর বাবা আদম ও মা হাওয়ার (আঃ) প্রথম মিলন, আরাফাতের ময়দানে আদম-হাওয়ার দোয়া কবুল এবং মুক্তির সুসংবাদ, হজরত ইব্রাহিম (আঃ) এর জন্ম, নমরুদের অগ্নি থেকে মুক্তি, মূসা (আঃ) আল্লাহর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন ও নবুওয়াতি এবং তাওরাত কিতাব লাভ। নীলনদ পার হওয়া, ফেরাউন সদলবলে নীলনদে ডুবে মরা, আইয়ূব (আঃ) ১৮ বছর রোগে ভোগার পর মুক্তি লাভ, সুলেমান (আঃ) এর বাদশাহি লাভ, দাউদ (আঃ) এর তাওবা কবুল, ইয়াকুব (আঃ) ও ইউসুফ (আঃ) পিতা-পুত্রের মিলন, ৪০ বছর পর ইশা (আঃ) এর জন্ম ও আকাশে আরোহণ, নুহ (আঃ) প্রবল বন্যায় নৌকাতে ৪০ দিন অবস্থানের পর জুদিপাহাড়ে নৌকা ভিড়ানো, ইশা (আঃ) স্বশরীরে ৪র্থ আকাশে গমণ, ইউনূস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তিলাভসহ যাবতীয় ঘটনা ১০ মহররম তথা আশুরার এই দিনে অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মাহে মহররমের গুরুত্ব-তাৎপর্য অপরিসীম। সে কারণেই এ মাসটি অধিক মর্যাদাশীল, সম্মানিত ও বরকতময়। শরিয়ত সমর্থিতভাবে এ মাসের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে তার মূল্যায়ন করা প্রত্যেক মুসলমানের উচিত। মহান আল্লাহতা’লা আশুরার দিন ২ হাজার নবী-রসুলকে দুনিয়াতে পাঠান। আবার এই দিনে ২ হাজার নবী-রসূলের দোয়া কবুল করে থাকেন। তবে ১০ মহররম তথা আশুরার মূল তাৎপর্য বা আসল হকিকত হল ইসলাম পরবর্তী যুগের হৃদয়বিদায়ক ঘটনা এই যে, ৬১ হিজরি সালে ১০ মহররম তারিখে মধ্যপ্রাচ্যের ইরাকের কুফা নগরীর অদূরে ফোরাত নদীর তীরে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে এক হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়। তা হল-নবীর প্রিয় দৌহিত্র, মা ফাতেমার কলিজার টুকরা নয়নমণি, আদরের দুলাল হজরত আলি (রাঃ) এর কনিষ্ঠ পুত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) সত্যের ধর্ম ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মোৎসর্গ করেন।
এই পবিত্র মাসে ধর্মীয় অনুশাসন ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে বিচার-বিশ্লেষণ করে আশুরা উপলক্ষে যেসব অযৌক্তিক কর্ম হয় তা না-করে আশুরার প্রকৃত গুরুত্ব উপলব্ধিপূর্বক হজরত ইমাম হোসেন (রাঃ) এর ধর্ম ও দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবাদত বন্দেগি করে দেশমাতৃকার প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে দেশের ও দশের কল্যাণার্থে কাজ করি। পবিত্র মহররমে এই যেন হয় আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

সাংবাদিক-কলামিস্ট।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..