বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন
আজকে রাতেও তনুর চোখে কোন ঘুম নেই। একটা অন্য রকম ভয়ে তার ভিতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছে।কালকে স্কুলে যেতে হবে! আর এতেই তার ভয়!
নাহ্ ভয়টা স্কুলে যাওয়ার জন্য নয়,অন্য কারণে।
তিন দিন ধরে অসুস্থতার বাহানা দিয়ে সে স্কুলে যায় না। নিজেকে ভীষণ একা একা লাগছে তার। চোখের পানি মুছতে মুছতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল নিজেই জানে না।
সকাল হয়ে গেছে। মায়ের ডাকে হঠাৎই চমকে উঠে বসে পড়ে।তার এই চমকানো দেখে তার মা ভেবেছে হয়ত,তার কর্কশ ভাষায় এমন হয়েছে।
আজকে অনেক দিন পরে তনু স্কুলে যাবে।তার মায়ের ধারণা মেয়ে যখন বড় হয়ে গেছে, আমার আর নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। সে একাই যেতে পারবে।
রাস্তায় নেমে তনু আশেপাশের বান্ধবীদের খোঁজে।কিন্তু কোথাও কেউ নেই। আজ আবার কি দৃশ্য দেখতে হবে কে জানে?তনুর মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে একাই রুখে দাঁড়াবে।এই সমাজ অনেক ভয়ংকর! তনুর ভয় সত্যিই হলো। ওরা এসে পড়েছে তার পিছনে পিছনে। বখাটে গুলো নানা রকম অশ্লীল মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছে তনুর দিকে। তনুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, “হে সমাজ আমাকে বাঁচাও।”
হঠাৎই তনুর নজরে পড়লো পাঁচ ছয়জন মেয়ে আসছে। একই ক্লাসে পড়ে ওরা। তনু দৌড়ে গেল ওদের দিকে। তনুর নিজেকে এখন খুব সাহসী মনে হচ্ছে। এত মেয়েদের ভীড়ে পৌঁছানোর পরে ও একজন বখাটে তাকে খারাপ একটা ইঙ্গিত করলো। আর সহ্য হলো না তার। এক ঝলক আগুনের মত হেঁটে গিয়ে বখাটের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।এতক্ষণে রাস্তায় অনেক মানুষের ভীড় জমে গিয়েছিলো।সবাই হাতে তালি দিতে থাকলো তনুকে উদ্দেশ্য করে। তনুর চোখে এখন আর কোন ভয় নেই। চোখ দু’টো যেন চকচক করছে শোধ নিবার এক অন্য আভায়।যে আভা শুধু অন্যায়কেই জ্বলে পুড়ে ধ্বংস করে দেয়।
এদিকে বখাটেরা শাসিয়ে গেল তাকে দেখে নেবে। তনু জবাব দেয়, সাহস থাকলে তো এসো।এখন আমি আর একা নই।আর অন্যায় সহ্য করবোনা। সবাই আমার সাথে আছে।
তোদের ভয় পাওয়ার দিন শুরু। পুরো সমাজ আজ তোদের বিরুদ্ধে। তোদের দিন শেষ। সবাই গলা মিলালো তনুর সাথে।
আজকের তনুরা হার মানার নয়!তারা জিততে চায়!আমরা ও তনুদের সাথে আছি, ছিলাম, থাকবো সব সময়।
(সমাপ্ত)