1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪২ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ক্ষুধার্ত লেখক লেখিকা গ্রুপের গল্প প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় স্থান পাওয়া গল্প “নিশুতি”-  তাবিয়ান আহমেদ

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২
  • ১৯৪ বার পঠিত

কড়া রোদের তেজে খাঁ খাঁ করা মধ্যাহ্নে নভস্থলে আগমন ঘটে মেঘকন্যা’দের। ধীরে ধীরে তারা ভীড় জমিয়ে আঁধার নামাচ্ছে ধরণীর বুঁকে। ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে পাখিরা নীড়ে ফিরে যাচ্ছে দলবেঁধে। হাতে কিছু মেডডিসিন নিয়ে হেটে চলছে বছর তেইশ’এর রমণী ‘নিশুতি’। বসুমতীর গলি পেরিয়ে তিন-রাস্তার মোড়ে পা রাখতেই মৃদু কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে নিশুতির কর্ণকুহরে।মাথা ঘুরিয়ে রাস্তার বাঁ পাশে তাকাতেই আঁখিপল্লবে ভেসে উঠে জীর্ণশীর্ণ এক মহিলার ক্রন্দনরত মুখশ্রী। ফুটপাতে বসে কাঁদছে মহিলা।
কয়েক কদম এগিয়ে নিশুতি গিয়ে দাড়ায় মহিলার সামনে।
— কি হয়েছে বোন কাঁদছেন কেন এভাবে?
নিশুতির কথা শ্রবণগ্রন্থিতে পৌঁছাতেই চোখ তুলে তাকায় মহিলা।হুট করেই মাথা ঠেকান নিশুতির হাঁটুতে,দু’হাতে আকঁড়ে ধরেন নিশুতির পা। অবাক হয় নিশুতি,চোখ বড় বড় করে তাকায় নিচের দিকে। পরক্ষণেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে পা ছাড়াতে।
— আরে আরে কি করছেন কি? ছাড়ুন! পা ছাড়ুন আমার।
ডুকরে কেঁদে উঠল মহিলা। আকুতি ভরা দৃষ্টিতে তাকালো নিশুতির পানে।
— আফা অ আফা আমারে কয়েকটা টেহা দেন না আফা? আমার পোলা’ডার শরীল’ডা ভালা না আফা। আমারে কিছু টেহা দেন আফা।
বিস্মিত হলো নিশুতি। চোখ সরু সরু করে তাকায় মহিলার পানে। হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে মহিলার সম্মুখে। শীতল কন্ঠ বলে উঠে,,
— কি হয়েছে বোন আপনার ছেলের?
–জ্বর হইসে আফা। অনেক জ্বর।দুই দিন ধইরা পোলাডার মুখে ভালা খানা দিতে পারি না। মাইনষের কাছে সাহায্য চাইলে কয়, জ্বর এমনেই সাইরা যাইব। আফনেই কন আফা, মা হয়ে মুই কেমনে চুপচাপ বইসা থাকি? দেন’না আফা কয়’ডা টেহা।
কথাটা শুনে একটু খারাপ লাগছে নিশুতির। মাথা উপর বিশাল অন্তরীক্ষের ন্যায় হৃদয়েও মেঘ জমেছে খুব। মা’য়েরা তো এমনই। নাড়ি কাটা ধনের জন্য যে তারা সবকিছু করতে পারে। সেও তো লড়ছে কঠিন লড়াই, ছোট্ট অসুস্থ ছেলে’টাকে একটু সুস্থ জীবণের পরশ দিতে। আনমনেই হাতে থাকা পার্সটাই নজর বুলায় সে। পার্সের এক কোণে পড়ে থাকা ময়লাযুক্ত এক’শ টাকার তিনটা নোট মহিলার হাতে ধরিয়ে দেয় নিশুতি।
— এই নিন। আমার কাছে এতোটুকুই ছিল। আপনার ছেলের ঔষধ কেনার পর খাবার নিয়ে নিবেন ওর জন্য।
টাকাগুলো হাতে পেতেই মলিন মুখে হাসি ফুটে মহিলার। কৃতজ্ঞতাপূর্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে নিশুতির মুখপানে। আঁচলের এক কোণে সিক্ত চোখ দুটি মুছে নেয় হাসিমুখে
— আল্লাহ আফনের ভালা করুক আফা। আমি তাহলে যাই আফা, পোলাডার কাছে?
–হ্যা হ্যা,, যান।
মহিলা বিদায় নেয় হাসিমুখে। নিজের অসুখ হলেও মাঝে মাঝে অন্যের সুখেও হৃদমাঝে মুগ্ধতা জন্ম নেয়। নিশুতির মাঝেও যেন তাই হচ্ছে আজ। নিশুতি খানিক সময় তাকিয়ে তাকে মহিলার যাওয়ার পানে। তারপর সেও হাটা ধরে নিজ গন্তব্যে। কালো আকাশ গর্জে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। মুক্তোর ন্যায় বিন্দু বিন্দু জলকণা গুলোও আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে একজোট হয়ে যাচ্ছে অবলিলায়। সেদিকে কোনো হেলদুল নেয় নিশুতির। সে তো মজেছে ভাবনার জগতে।
স্বামী ম*রার পর বাপ’ম*রা ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছিল সে। কিন্ত সে সুখও থাকার নয়। ছোট্ট ছেলেটাও যেন মা’য়ের বুক খালি করে বাপের কাছে যাওয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছে নিশ্চুপে। কিন্তু নিশুতির কি কপাল! অসুস্থ ছেলেটার মুখে ভালোমন্দ কিছুই তুলে দিতে পারছে না সে। এই তো আজ সকালেই,,
নিশুতি তখন রান্নাঘরে বসে উনুনে আগুন দিচ্ছিল।হঠাৎ ফাহাদ এসে গলা জড়িয়ে ধরল নিশুতির।
— আম্মু ও আম্মু শোন না?
ছেলের এমন আহ্লাদী ডাক শুনে অধর ছড়িয়ে হাসে নিশুতি।শব্দহীন সে হাসি। হাত টেনে কেলে বসিয়ে দেয় ফাহাদকে।
— কি হয়েছে আমার বাবা’টার। ঘুরাফেরা বাদ দিয়ে আজকে হঠাৎ মায়ের কাছে এলে যে?
নিশুতির আদুরে কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠে ফাহাদ।
— নিলয় ডালিম খাচ্ছে আম্মু।আমিও খাব।
ছেলের আবদার শোনে মুচকি হাসে নিশুতি। মনে কালো মেঘের আবির্ভাব হলেও তা মুখে আনবেনা কখনো। ছেলেটা যে তার বড্ড অবুঝ। অবশ্য ছ’বছরের বাচ্চার আর কতটুকুই বোধ শক্তি থাকবে? চুমু খায় ছেলের কপালে, হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়।
— “আচ্ছা বাবা। একটু পরেই তো আম্মু বাজারে যাব তখন না হয় ডালিম নিয়ে আসব তোমার জন্য।”
নিশুতির কথা’টা শুনেই লাফিয়ে উঠে ফাহাদ। খুশিতে মায়ের দু’গালে চুমু খায় সে। নাচতে নাচতে বেড়িয়ে পড়ে ঘর থেকে।
গাড়ির হর্ণে ধ্যান ভাঙ্গে নিশুতির। সামনে তাকাতেই চোখে ভেসে উঠে সারিবদ্ধ ফলের দোকানগুলো।
মুচকি হেসে নিশুতি এগিয়ে যায় ফলের দোকানে।
— আসসালামু আলাইকুম। ভাই ডালিম কত করে।
নিশুতির কথা কর্ণগোচর হতেই মুখ তুলে তাকায় দোকানদার। একগাল হেসে সালামের উত্তর নিয়ে বলল,,
— দুই’শ বিশ টাকা কেজি আপা
মুহূর্তেই নিভে গেল হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। এতো টাকা যে হাতে নেয় তার। ছেলের ঔষধ আর ঘরের কিছু জিনিসপাতি কিনেই তো টাকা ফুড়িয়ে গেল। নরম স্বরে আওড়ালো নিশুতি,,
— এতো দাম ভাই! আমাকে বরং আধা কিলো ডালিম দেন। আর এই ধরুন টাকা’টা।
কাকভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরেছে নিশুতি। ঘরে পা রাখতেই কেঁপে উঠে অন্তরআত্মা।হাতে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায় নিচে।
মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে আছে ফাহাদ। রক্তে মাখামাখি পুরো শরীর। এখনো যেন মুখ বেয়ে নেমে যাচ্ছে রক্তের স্রোত।
দৌড়ে ছেলের কাছে যায় নিশুতি। শরীরে হাত দিতেই থমকে যায় সে। ফাহাদের নিস্তেজ শরীরটা হিম শীতল হয়ে জমে গিয়েছে অনেকটা। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছেনা নিশুতির। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে বুকের ভিতর।নাসারন্ধ্র ভেদ করে বেরিয়ে আসছে তপ্ত নিঃশ্বাস।মনে মনে বিরবির করল নিশুতি,,
— তবে নিশুতির কোল তুইও ত্যাগ করলি হতভাগা। নিশুতিকে নিশুতিতেই ডুবিয়ে দিলি!
পরক্ষণেই কান্না থামিয়ে ঘাড় কাত করে পিছনে তাকায় নিশুতি। অন্ধকারেরর মাঝে নিভু নিভু আলোয় কেউ যেন মন্থর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে দুয়ারের দিকে। অবয়ব দেখে মনে হচ্ছে সে যেন নিশুতির মতোই কোনে এক রমণী। যার পরনের শাড়ির আঁচলটা মাটিতে গড়াগড়ি করছে।
অবাক হয় নিশুতি। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে অন্ধরের সেই অবয়বের দিকে। মুহূর্তেই কানে ভেসে এলোলো দুঃখ মাখা কোমল স্বর,,
–” আমি নিশুতি,গরিবের ঘরে অন্ধকারে জ্বলতে থাকা এক চিলতে আ’গুনের মতো। যে সবাইকে আলোয় আগলে রাখলেও, কেউ তাকে রাখেনা কাছে। কাজ শেষে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় তার অস্তিত্ব”

(সমাপ্ত)

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..