1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

সাপের কামড় : জরুরী স্বাস্থ্য সমস্যা আফতাব চৌধুরী

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২
  • ১১৯ বার পঠিত

চারিদিকে থৈ থৈ পানি। জীবন বাঁচাতে সমভাবে সচেষ্ট প্রতিটি প্রাণী। মানুষ, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, সরীসৃপ সকলেরই সমান চাওয়া- একটু শুষ্ক মাটি। বন্যায় মানুষ আর সাপ-পোকা সব একাকার। সর্পদংশন বা সাপের কামড় গ্রামবাংলার একটা সাধারণ ঘটনা। এটি সব সময় একটি অপ্রত্যাশিত দূর্ঘটনা এবং অত্যন্ত জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা। বন্যার সময় সাপ-পোকার মর্জি কিছুটা ভিন্ন রকম যা তুলনামূলক অধিক ভয়ঙ্কর। তাই এখন এদের থেকে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
বিষধর সাপের কামড় জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিষধর সাপের ওপরের দাঁতের গোড়ায় যে বিষথলি থাকে কামড়ের সাথে সাথে সে বিষ ক্ষতের মাধ্যমে রক্তনালীতে প্রবেশ করে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সাপের বিষের বিষাক্ত উপাদানগুলো স্নায়ুকোষকে আক্রমণ করে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া প্রতিহত করে, শেষে রোগীর মৃত্যু ঘটায়।
আমাদের এ অঞ্চলে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপের মধ্যে ১২ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপের সকল প্রজাতিসহ ২৭ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ছয় প্রজাতির বিষধর সাপ চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে গোখরা, পদ্মগোখরা, কেউটে, সবুজ সাপ, চন্দ্রবোড়া এবং সামুদ্রিক সাপ। দংশিত স্থানে কামড়ের দাগ দেখে সাপটি বিষধর কিনা তা শনাক্ত করা সম্ভব। সব বিষধর সাপের সামনে দু’টি বিষদাঁত থাকে, যা অন্যান্য দাঁত থেকে বড়, তী² ও বাঁকানো। সাপে কামড়ালে যদি কামড়ানো স্থানে দুটি তী² গভীর দাগ থাকে বুঝতে হবে সেটি বিষধর সাপের কামড়। আর যদি ছোট ছোট এক সারি দাগ থাকে বুঝতে হবে সাপটি বিষধর নয়। তবে সুস্পষ্টভাবে শনাক্ত করা না গেলে অর্থাৎ কামড়ানো সাপটি বিষধর কি-না সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলেও কালক্ষেপণ না করে দ্রæত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

সাপ না দেখলেও দংশনের পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে দংশনকারী সাপের ধরন অনুমান করা যেতে পারে। যেমন- রাতে ঘুমের মধ্যে মাটিতে শোয়া অবস্থায় সাপে কামড়ালে তা কেউটে সাপের দংশন হতে পারে, মিঠে পানিতে মাছ ধরার সময় জেলেদের দংশনকারী সাপ খুব সম্ভবত গোখরা, জঙ্গলে কিংবা বাগানে কাজ করার সময় সাধারণত সবুজ সাপ দংশন করে থাকে এবং কৃষকের ধান কাটার সময় দংশন হলে খুব সম্ভবত এ সাপ চন্দ্রবোড়া।
গোখরার দংশনে ছয় থেকে আট মিনিটের মধ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়। দংশিত স্থান লাল হয় ও চাপ দিলে ব্যথা লাগে। কিছুক্ষণ পর সেখানে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। কেউটে সাপে কামড়ালে দংশিত স্থানটি ফুলে ওঠে না এবং দংশনের স্থানে কোনো খোঁচার দাগ দৃশ্যত নাও থাকতে পারে। দংশিত স্থানে সামান্য ব্যথা, চুলকানি এবং অবশ বা ঝিনঝিন ভাব হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে প্রথমদিকে সর্পদংশনের সন্দেহ নাও হতে পারে। দংশনের ফলে সৃষ্ট উপসর্গগুলো বিলম্বে দেখা দিতে পারে। কেউটে সাপ গোখরার চেয়ে ৬ থেকে ৮ গুণ বেশি বিষধর। এদের বিষদাঁত ছোট ও প্রতি দংশনে মাত্র ৮ থেকে ১২ মিলিগ্রাম বিষ বের হয়, কিন্তু এর ২ থেকে ৩ মিলিগ্রামই একজন বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। চন্দ্রবোড়া সাপে দংশনে যন্ত্রণা বোধ হয়, দংশিত স্থানে জ্বালাপোড়া করে, চামড়া লালচে হয়ে ফুলে ওঠে এবং রক্তপাত হয়। বাচ্চা গোখরা ও বাচ্চা চন্দ্রবোড়া সাপ বড়গুলোর চেয়ে ভয়ঙ্কর ও কিছুটা আক্রমণাত্মক। গড়পরতা হিসেবে গোখরা সাপের দংশনের ৮ ঘন্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের ১৮ ঘন্টা পর এবং চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের তিনদিন পর রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে। তবে মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে আনতে হবে।
সবুজ সাপে কামড়ালে শরীরের এক বা একাধিক স্থান যেমন- চামড়ার নিচে, মাড়ি থেকে এমনকি মগজের মধ্যে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং রক্ত জমাট বাঁধা প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। দংশিত স্থান ফুলে যেতে পারে ও ফোস্কা পড়তে পারে। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া যেমন- পঁচন ছাড়া এতে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে মগজের মধ্যে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু হতে পারে।
সাপের কামড়ের পর রোগীর কথা বলতে অসুবিধা হলে, চোখের পাতা ভারী বা ঘুম ঘুম ভাব হলে, মুখ থেকে লালা ঝরলে অথবা বমি হতে থাকলে বুঝতে হবে এটি বিষধর সাপের কামড়ে হয়েছে। রোগীকে ধীরে ধীরে মুমূর্ষু লাগে, তার পা দূর্বল হয়ে আসে এবং সে দাঁড়িয়ে থাকতে বা চলাচল করতে পারে না। তার জিহŸা ও স্বরযন্ত্র ফুলে যেতে পারে, দু’ঘন্টার মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস লঘু হয়ে আসতে পারে।
সর্প-দংশনের পর প্রয়োজন দ্রæত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। কিছুতেই ঘাবড়ে যাবেন না। কারণ সব সর্প দংশনই বিষধর সাপের দংশন নয় এবং বিষধর সাপে কামড়ালেও দংশনের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিষ ঢেলে দিতে না পারলে বিষক্রিয়া নাও হতে পারে।
সাপে কাটা রোগীর জন্য হাসপাতাল-পূর্ব কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা সামান্য উপকারী হতে পারে। এগুলো জেনে রাখা ভাল। কারো পায়ে বা হাতে সাপে কাটলে নিকটে বসে পড়েন, দংশিত স্থানের কিছুটা উপরে গামছা বা ওড়না বা অনুরূপ কাপড় খন্ড দিয়ে কেবল একটি গিট দিন। পায়ে দংশন করলে উরুতে, হাতে দংশন করলে কনুই এর উপরে এমনভাবে গিট দিতে হবে যেন খুব আঁটসাট বা ঢিলে কোনটিই না হয়। দড়ি অথবা সুতা দিয়ে শক্ত করে গিট দেবেন না। গিট দেয়ার কাপড় খন্ডটি দেড় ইঞ্চির মতো চওড়া হলে ভালো হয়। হাতের কাছে গামছা, ওড়না বা উপযুক্ত কাপড় খন্ড না থাকলে পরনের কাপড়ের কিছুটা অংশ ছিঁড়ে নিন- কিছুতেই বিলম্ব করবেন না।
বাঁধনটি যেন অস্থিসন্ধিতে যেমন- কনুই, কবজি বা গোড়ালি এবং গলা বা মাথায় না হয়। যদি বাঁধনটি খুব শক্ত হয়ে যায় তবে একটু ঢিলা করে দেবেন, যাতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে না পড়ে। বাঁধনটি প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর ৩০ সেকেন্ডের জন্য কিংবা ১ ঘন্টা অন্তর ১ মিনিটের জন্য আলগা করে দিতে হবে। নিম্নোক্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বাঁধন প্রয়োগ করা উচিত নয়। রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাতের ফলে পচন হওয়া, মাংসপেশী অবশ হওয়া, গিট দেয়া অঙ্গে বিষ জমে থেকে বিষক্রিয়ার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।
সাপে কাটার সময় রোগীর কাছে কেউ থাকলে তার দায়িত্ব হবে সাথে সাথে রোগীকে শুইয়ে দিয়ে এসব পরিচর্যা করা। রোগীর নড়াচড়া সর্ম্পর্ণরূপে বন্ধ রখতে হবে। হাড় ভেঙ্গে গেলে যেভাবে স্পিন্ট এর সাহায্যে নড়াচড়া প্রতিরোধ করা হয়, দংশিত হাত-পা তেমনভাবে রাখুন। গিড়া নড়াচড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রæত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই দংশিত হাত-পা এমনভাবে কাঠখন্ড, বাঁশের চটা বা কঞ্চির সাথে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে নিন যাতে গিড়া নড়াচড়া করতে না পারে।
বাঁধন দেয়ার সময় সাপের কামড়ের স্থান পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিন ও ব্যান্ডেজ দিয়ে আবৃত করে রাখুন। আক্রান্ত স্থান কাটবেন না, সুঁই ফোটাবেন না বা কোনো কিছুর প্রলেপ দিবেন না।
সর্পদংশন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জীবন বিধ্বংসী অনেক রোগের ঔষধ প্রস্তুতের জন্য সাপের প্রয়োজন অপরিসীম। সাপ সাধারণভাবে আক্রমণকারী নয়, বরং মানুষ দেখলে এরা পালিয়ে যায়। সাধারণত কেউ উত্যক্ত করলে, তাড়িত হলে দূর্ঘটনাবশত পদদলিত হলে বা গায়ে হাত পড়লে এরা দংশন করে। তাই অকারনে সাপকে না মারাই উত্তম, কোথাও সাপ দেখলে তাকে নিজের মতো করে চলে যেতে দেয়াই ভাল। ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গলের ভিতর খুব সাবধানে হাঁটতে হবে, কোন গর্তে হাত না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। রাতে পথ চলার সময় অবশ্যই আলো ও লাঠি নিয়ে চলাচল করা উচিৎ। পানিতে মাছ ধরার সময় জালে হাত দেয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করাটাই ভাল।
বিষধর সাপের কামড়ের আধুনিক চিকিৎসা আছে, তাই ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ বা কবিরাজ-ওঝার চিকিৎসায় সময় নষ্ট না করে রোগীকে দ্রæত নিকটতম জেলা বা উপজেলা হাসপাতাল অথবা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করাই ভাল। সাপে কাটার ঔষধ এন্টিভেনম বিনামূল্যে সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে পাওয়া যায়। এর সরবরাহ সবসময় বজায় থাকে। রোগী যত পরেই আসুক না কেন এন্টিভেনম প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা থাকলে তা দিয়ে দিতে হবে। রোগী বিষনিরোধক বাঁধন বা গিটসহ আসলে এসব খোলার আগেই এন্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় জমাকৃত বিষ হঠাৎ বেশি পরিমাণে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক বিষক্রিয়া করতে পারে।সাংবাদিক-কলামিস্ট।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..