1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

আফ্রিকায় চীনের প্রাসাদ রাজনীতি

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১২০ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী: বেশ কয়েক বছর ধরে চীনকে আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা চালাতে দেখা যাচ্ছে। বেজিং নিজেদের খরচে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সরকারি ভবন তৈরি বা সংস্কার করে দিচ্ছে। বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বেজিংয়ের এই কৌশলের নাম দিয়েছেন ‘প্রাসাদ ক‚টনীতি’।
আফ্রিকার দেশগুলোতে চীনের এই ‘প্রাসাদ ক‚টনীতি’ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা। বিশ্লেষণের শুরুতেই এসেছে জিম্বাবোয়ের প্রসঙ্গ। এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৩০ জুন জিম্বাবোয়ের রাজধানী হারারেতে দেশটির নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। ভবনটির নির্মাণ কাজ পরিচালনা ও অর্থায়ন করেছে চীন। হারারেকে এটি উপহার হিসেবে দিয়েছে বেজিং।
৩৩ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত ওই ভবনে আছে ছয়তলা-বিশিষ্ট অফিস কমপ্লেক্স, পার্লামেন্ট সদস্য ও কর্মীদের জন্য কক্ষ। জিম্বাবোয়ের তথ্য মন্ত্রী মনিকা মৃৎসভাংওয়া জানিয়েছেন, নতুন এই ভবন হারারে ও বেজিংয়ের মধ্যেকার গভীর সম্পর্কের প্রতীক। শুধু জিম্বাবোয়েই নয়, নতুন সহস্রাব্দ শুরুর পর থেকে মোজাম্বিক, লেসোথো, গিনি- বিসাউ, মালাউইসহ বেশ কয়েকটি দেশে চীনের সৌজন্যে নতুন পার্লামেন্ট ভবন তৈরি হয়েছে।
একইভাবে বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদটিও তৈরি করে দিয়েছে চীন। ২ কোটি ২০ লক্ষ ডলার ব্যয়ে ওই ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। একই বছর লাইবেরিয়া সরকার দেশটির পার্লামেন্ট ভবনকে বর্ধিত করে। ওই কাজে অনুদান দেয় চীন। তানজানিয়ায় স¤প্রতি একটি নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। কেন্দ্রটির নির্মাণকাজে সহায়তা করেছে বেজিং।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ২০২০ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, আফ্রিকা মহাদেশে এমন অন্তত ১৮৬টি সরকারি ভবন আছে, যেগুলো তৈরিতে চীন কম-বেশি অর্থায়ন করেছে, নির্মাণ করে দিয়েছে। গত দুই দশকে চীনের অর্থনীতি অনেক বেশি দৃঢ় হওয়ায় এ ধরনের নির্মাণকাজের সংখ্যা দ্রæত বেড়েছে।
অনেক আফ্রিকান নাগরিকের কাছে এসব ‘উপহার’ একেবারেই সাধারণ বিষয়। একে তারা ক্ষতিকর বলে মনে করেন না। ব্রিটেনের ল্যাঙ্কেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন ও আন্তর্জাতিক অধ্যয়নের অধ্যাপক জিংহান জেং এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, আফ্রিকা অঞ্চলে অনেক পরিকাঠামো দরকার। কিন্তু এসব পরিকাঠামো নির্মাণ করার মতো অর্থ তাদের নেই। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আফ্রিকায় বড় ভবন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চীন তথাকথিত প্রাসাদ ক‚টনীতি চালাচ্ছে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এসব বড় প্রকল্পের কারণে নিজ দেশে আফ্রিকান নেতাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। কারণ, এগুলো দৃশ্যমান, এগুলো অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। আর আফ্রিকান সরকারগুলোও প্রায় সময় ব্যয়বহুল এসব প্রকল্পকে নিজেদের অর্জন হিসাবে উপস্থাপন করে। মার্কিন চিন্তন প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসে আফ্রিকা অধ্যয়নের জ্যেষ্ঠ ফেলো এবেনেজার ওবাদরে সংবাদ সংস্থাকে বলেন, কাগজে-কলমে চীনা প্রকল্পগুলো আফ্রিকার জনসাধারণের জন্য লাভজনক। অনেক ক্ষেত্রে তার প্রমাণও আছে। তবে ওবাদরে মনে করেন, এক্ষেত্রে একটি সমস্যাও আছে। তা হলো, এধরনের প্রকল্পের আলাপ-আলোচনা-সমঝোতায় সবসময় স্বচ্ছতা বজায় থাকে না। কিছু প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, ততটার আদৌ প্রয়োজন নেই। তবে এজন্য চীনকে এককভাবে দায়ী করা হবে কিনা, সেটা এক ভিন্ন প্রশ্ন ।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ভাসো এনজেন্ডজে বলেন, এসব উপহারের সত্যিকারের তাৎপর্য কী, তা অজানাই থেকে যায়। কারণ, আফ্রিকা মহাদেশে চীনা বিনিয়োগের চুক্তিগুলো সাধারণত অস্পষ্ট হয়।
২০১৮ সালে ফরাসি দৈনিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য শোনার জন্য আদ্দিসআবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দফতরে চীন আড়ি পেতেছে। পাঁচ বছর আগে আফ্রিকান ইউনিয়নকে ওই সদর দফতরটি উপহার দিয়েছিল চীন। আফ্রিকান ইউনিয়ন ও চীন সরকার এই প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করে। তবে আফ্রিকা মহাদেশ, এমনকী মহাদেশটির বাইরে একথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে যে, বেজিং তার চুক্তির বিষয়ে সবসময় অকপট নয় ।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ওবাদরে জানিয়েছেন, আফ্রিকান ইউনিয়নের উচিত ছিল সদর দফতরের প্রকল্পটি চলার সময় যথাযথ নজরদারি করা, যেন বাজে কিছু ঘটতে না পারে।
কেউ কেউ আবার বলছেন, চীনের গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনাটি আফ্রিকা মহাদেশে যতটা হইচই ফেলার কথা ছিল, ততটা ফেলতে পারেনি। জোহানেসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এনজেন্ডজে জানান, চীন ও আফ্রিকান কর্মকর্তারা যৌথভাবে ঘটনাটিকে বানোয়াট হিসাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, ফরাসি কেউ খোলাসা করেছে যে, চিনা কর্তৃপক্ষ আফ্রিকায় গুপ্তচর বৃত্তি চালাচ্ছে।
আফ্রিকার কিছু দেশের সাধারণ নাগরিকরা মহাদেশটিতে চীনের উপস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে সমালোচনা শুরু করেছেন। জাম্বিয়া ও মালাউইর মতো দেশে বছরের পর বছর ধরে চলা এসব চীনা প্রকল্পের কর্ম পরিবেশ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।
২০২২ সালের জুনে কেনিয়ার তৎকালীন ডেপুটি প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো অঙ্গীকার করেন, চীনের সঙ্গে তাঁর দেশের সরকারের হওয়া চুিক্তর বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। চীনা ঋণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের মুখে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পান।
আফ্রিকা মহাদেশে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে বেজিং কীভাবে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হচ্ছে, তা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীনের নানা উদ্যোগের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, আফ্রিকা মহাদেশে বেজিংয়ের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার। মহাদেশটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো প্রতিদ্ব›দ্বীদের প্রভাব কমানো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জন ম্যাককলি জানান, আফ্রিকায় পরিকাঠামো নির্মাণে চীনের অর্থায়নকে আপাতদৃষ্টিতে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও তার রাজনৈতিক দিক রয়েছে। তিনি আরও জানান, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থান পরিবর্তন হতে দেখা গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনও অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়লে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে। বাস্তবেই দেখা গেছে, আফ্রিকার কিছু দেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে চীনের সমালোচনা করতে অনিচ্ছুক।
শুধু ক‚টনৈতিক প্রভাব বিস্তারই শেষ কথা নয়। আফ্রিকায় চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে। চীনা শুল্ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারি সত্তে¡ও ২০২১ সালে চীন ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ রেকর্ড ২৫,৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার মধ্যকার বাণিজ্যের প্রায় চার গুণ। চীন ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য স¤প্রসারণের এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করেন ল্যাঙ্কেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জেং। তিনি জানান, চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য আফ্রিকায় প্রতিযোগিতার মাত্রা তুলনামূলক কম। তবে অর্থনৈতিক এই দিকের বাইরে বড় পরিসরে চিন্তা করলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তারের জন্য আফ্রিকা চীনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সাংবাদিক- কলামিস্ট।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..