শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারে বুরো ধান ব্রি ২৮ ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকশত কৃষকের জমির পুরো ধানই নষ্ট হয়েগেছে। নষ্ট হওয়া ধান কেউ গরুর জন্য কেটে নিচ্ছেন কেউ জমিতেই ফেলে রেখেছেন। এতে নিজেদের খুরাকি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ক্ষতিগস্থ কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ বলছে ব্রি ২৮ রোপনে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে আর কৃষকরা বলছেন বাজারে বীজঘর গুলোতে গেলে উচ্চফলনশীল বলে তারা এ ধান তাদের কাছে বিক্রি করে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরের বুরো চাষী ইউছুফ মিয়া বলেন, তিনি হাওরের নিচু অংশে ১৫ বিঘা জমিতে ব্রি ২৮ জাতের ধান চাষ করেন। ধান যখন পাকা শুরু করছে তখন লক্ষ করেন তার জমিনের সকল ধান ছিটা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েও কোন কাজ হয়নি।
তিনি জানান, তার নিজের গ্রাম ইউছুপুর, পাশবর্তী নোয়াগাঁও, রাজাপুর ও উত্তরভাড়াউা গ্রামের কয়েক শত কৃষকের শত শত একর জমির ধানে ছিটা।
এ সময় গ্রামের কৃষক জোবায়ের মিয়া তার জমির ধান দেখিয়ে বলেন, ব্রি ২৮ এবার আমাদের সাথে বেইমানী করেছে। ক্ষেতকে ক্ষেত ছিটায় ভরে গেছে। তিনি বলেন, নিজের লোক নেই। রোজ কামলা দিয়ে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে ১২ কিয়ার জমি চাষ করেছিলেন। সবই শেষ। এবার চাল কিনে খেতে হবে।
নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক অঞ্জু কর জানান, নিজের জমি নেই। ৭ বিঘা জমি বর্গা চাষ করেছেন। মানুষের কাছথেকে ঋণ করে এনে চাষ করেছেন। এখন পথে বসার উপক্রম।
ইউছুপুর গ্রামের কৃষক শামীম মিয়া জানান, এভাবে দূর্যোগ আসবে তারা ভাবতেও পারেননি। তিনি বলেন, পুরো ধানের ছাড়ার প্রায় ৯০ভাগ ধান ছিটা। ১০ ভাগ ভালো থাকলেও কাটানো খরচ দিয়ে তা উপরে পড়বে তাই কেউই তা কাটার চিন্তা করছেন না। অনেকে তা কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১১৪৫১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি২৮ ২৬৫১ হেক্টর। যার মধ্যে বেশ কিছু অংশ ব্লাস্ট রোগে আক্রন্ত হয়। যখন এটি প্রথম ধরা পড়ে তখন পাতা একটু একটু মরতে শুরু করে। তখনই কৃষকদের দুই রাউন্ড ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন।
একই সাথে ইউরিয়ার পরিবর্তে পটাশিয়াম সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন। অনেক কৃষক এই অল্প পাতা মরায় কিছু হবে না ভেবে ছত্রাক নাশক স্পে করেন নি। ক্উে কেউ এক রাউন্ড করেছেন। কিন্তু যারা প্রপার নিয়ম মেনেছেন তাদের ফসল নষ্ট হয়নি।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ব্রি ২৮ অনেক পুরাতন একটি জাত। এটি এখন চাষ করতে কৃষকদের তারা নিরুৎসাহিত করেছেন। এর পরিবর্তে ব্রি ৮৮ ও৮৯ চাষের জন্য পরামর্শ দেন।
শ্রীমঙ্গল কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা জানান, তাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী ১৬৮ বিঘা জমিতে ব্লাষ্ট রোগে আক্রমনের উপস্থিতি পান। এবং সাথে সাথে কৃষকদের এ থেকে উত্তোরণের পরামর্শ দেন। সে মেতাবেক ১শত বিঘার উপরে জমির ধান নষ্ট হয়নি। তবে ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমি নষ্ট হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, মৌলভীবাজারের হাইল হাওর, কাউয়াদিঘি হাওর ও হাকালুকি হাওরের নিচু এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হেক্টর এলাকায় বি ২৮ জাতের ধান ও বি ৪৮ জাতের ধান নষ্ট হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
তবে এটি মূল উৎপানে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেনা। তিনি বলেন, ক্ষতিস্থ কৃষকের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে।তাদের সহায়তার জন্য সরকারের কোন বরাদ্দ এলে তখন তারা তা পাবে।