1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী: ভুল চিকিৎসায় মা-নবজাতকের মৃত্যু: 

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩
  • ২৪১ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক:

চিকিৎসকের ভুলে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ, বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতিতে তার অধীনে রোগী ভর্তি করা, দুই চিকিৎসককে জবানবন্দির পর কারাগারে পাঠানো – এসব ঘটনার জের ধরে গত কয়েকদিন ধরে বেশ আলোচনায় রয়েছে ঢাকার গ্রিন রোডের বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতাল।গত এক সপ্তাহ ধরে এক নবজাতকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটেছে এসব ঘটনা। মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হওয়ার পর সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও উঠে আসে। শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি দল হাসপাতালটি পরিদর্শন করে সেসব অভিযোগের সত্যতা পান বলে কর্মকর্তারা দাবি করছেন। তারা বলছেন এর ফলে হাসপাতালের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। তবে এই পুরো ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কী ঘটেছিল ভুক্তভোগীর সাথে?
সন্তানসম্ভবা মাহবুবা রহমান সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসারত ছিলেন। প্রসূতি থাকা অবস্থায় তিনি ওই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছেন।গত ৯ জুন রহমান সেন্ট্রাল হাসাপতালে ভর্তি হন। তার সন্তান প্রসবের পুরো প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট ওই গাইনি বিশেষজ্ঞের অধীনে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। হাসপাতালের খাতায় মাহবুবা রহমানের ভর্তি ওই বিশেষজ্ঞের নামেই করা হয়।কিন্তু সেদিন ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না যে বিষয়টি প্রসূতি ও তার পরিবারের কাছে গোপন করা হয়।পরে মাহবুবা রহমানের অপারেশন হয় এবং পরদিন নবজাতক সন্তান মারা যায়।পরের তিনদিন মাহবুবা রহমানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এই সময় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতির স্বামীর কাছে তার স্ত্রীর চিকিৎসার তথ্য গোপন করেন এবং স্বামীর অনুমতি ছাড়া চিকিৎসার পদক্ষেপ নেন বলে অভিযোগ করেন রোগীর স্বামী ইয়াকুব হোসেন।

 

ভুক্তভোগী মাহবুবা রহমানের শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। তিনি এখন ধানমন্ডির আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।এই ঘটনার জের ধরে ১৪ জুন মাহবুবা রহমানের স্বামী ধানমন্ডি থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলা করেন যেখানে গাইনি বিভাগের ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, দায়িত্বরত কয়েকজন চিকিৎসক, হাসপাতালের ব্যবস্থাপকসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ১৪ জুন রাতে দায়িত্বরত দুই চিকিৎসককে পুলিশ আটক করে। পরের দিন আদালতে নেয়া হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। মূলত, গাইনি বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতির বিষয়টি গোপন করা এবং পরে রোগীর স্বামীকে চিকিৎসার তথ্য না জানানোর অভিযোগ ওঠে সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মাহবুবা রহমানের স্বামী এই ঘটনায় যে মামলা দায়ের করেছেন, সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘গাফিলতি’র কারণে তার সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে।এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন যে ৯ জুন রাতে তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ না থাকা এবং বাদীর স্ত্রীর চিকিৎসার পরিস্থিতি গোপন করে।

পরে ১০ জুন একপর্যায়ে বাদি তার স্ত্রীকে ‘আশঙ্কাজনক’ অবস্থায় ধানমন্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ও হাসপাতালগুলোর অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল, বিএমডিসি। কোনো চিকিৎসক বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে বিএমডিসি সেটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। সংগঠনটির ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহতেশামুল হক চৌধুরী বলছেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে এখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসেনি।

 

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান আঁখি ও তার নবজাতক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ডা. সংযুক্ত সাহা ও জড়িত চিকিৎসকদের লাইসেন্স বাতিল করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বুধবার আঁখির সহপাঠী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে এসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে এ দাবি জানান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মুনিরা এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আমরা সকলে অবগত আছি যে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার কারণে ইডেন কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান আঁখি ও তার নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়। স্মারকলিপিতে যেসব দাবি এবং দাবির পক্ষে যে যুক্তি দেয়া হয়েছে – সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান আঁখি ও নবজাতক শিশুকে হত্যাকারী অভিযুক্ত ডা. সংযুক্তাসহ জড়িত চিকিৎসকদের লাইসেন্স বাতিল করে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। সেন্ট্রাল হাসপাতালকে আঁখির পরিবারকে ২ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

শুধু ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী আঁখি-ই নয় হাসপাতালটিতে ভুল চিকিৎসার কারণে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহানের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে সেন্ট্রাল হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুতরাং আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয় সে জন্য ওই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। ডা সংযুক্তা সাহার অধীনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল মাহবুবুর রহমান আঁখি। সুতরাং ভুল চিকিৎসায় মাহবুবুর রহমান আঁখি ও তার নবজাতক সন্তানের মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। “অভিযোগ আসলে অফিস থেকে আমাকে জানানো হতো। আমার জানা মতে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসেনি,” বলছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী।কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে সাময়িক বা স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বিএমডিসি।

অধ্যাপক চৌধুরী বলছিলেন, “বিএমডিসি কারো বিরুদ্ধে জেল, জরিমানার শাস্তি দিতে পারে না। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে তার লাইসেন্স বাতিল করতে পারে।”লাইসেন্স বাতিল করা হলে ওই চিকিৎসক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবেন না।বাংলাদেশের অধিকাংশ হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা রকম অনিয়ম হওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেননি অধ্যাপক চৌধুরী। তবে তিনি বলছিলেন, বিএমডিসি চাইলেই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে না।

“কোনো শিক্ষক, চিকিৎসক বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কেবল তখনই বিএমডিসি তার বা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু কোনো অভিযোগ ছাড়া নিজে থেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার এখতিয়ার আইন অনুযায়ী বিএমডিসি’র নেই।”তবে বিএমডিসি যেন নিজে থেকে কোনো চিকিৎসক বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক চৌধুরী।

‘অধিকাংশ হাসপাতাল এভাবেই চলে’
স্বাস্থ্য অধিদফতর সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ জারি করলেও ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর একটা বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে– এমনটাই মনে করেন বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করা চিকিৎসকদের অনেকে।ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন শাকিল আলম (পরিবর্তিত নাম)। তিনি বলছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতর সেন্ট্রাল হাসপাতালের যেসব অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে, এমন অনিয়ম বাংলাদেশের হাসপাতালের ক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিক ঘটনা।’“সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউর মান বিচার করা হয়েছে একটি আদর্শ আইসিইউর ভিত্তিতে। ঢাকার বেশিরভাগ হাসপাতালের আইসিইউতেই কিন্তু সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নেই। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে।”বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলে তার নাম নিয়ে রোগী ভর্তি করাটা অনৈতিক হলেও অনেক হাসপাতালে এভাবেই কাজ হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।“অধিকাংশ হাসপাতালেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধান করে থাকেন। চিকিৎসা পরিচালনা কিন্তু অপেক্ষাকৃত জুনিয়র ডাক্তাররাই করেন।”

“আর গাইনি বিভাগে এটি আরো স্বাভাবিক একটি বিষয়। কারণ সন্তান প্রসবের কাজে মিডওয়াইফদেরই সবচেয়ে বেশি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকে, কাজটা তারাই করে থাকেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকেন।”এই চিকিৎসকের মতে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় যেখানে প্রতি দুই হাজার মানুষের জন্য একজন নার্স ও প্রতি ১৮৪৭ জনের জন্য একজন চিকিৎসক রয়েছেন, সেখানে হাসপাতালগুলোতে এভাবে কাজ চলাটাই আসলে স্বাভাবিক।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিধিনিষেধ
এই ঘটনায় কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলার পাশাপাশি হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনায় অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিদর্শক দল বলছে।কয়েকজন কর্মকর্তা শুক্রবার সেন্ট্রাল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ওপর জারি করা বিধিনিষেধের বিষয়ে জানান তারা।বিধিনিষেধের একটি হলো পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো অপারেশন করা যাবে না। আইসিইউ ও জরুরি সেবার মান ‘সন্তোষজনক’ না হওয়ায় এই নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিদর্শক দল।

নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ওপর। অধিদফতরের ‘’লিখিত অনুমোদন ছাড়া’ ওই বিশেষজ্ঞ সেন্ট্রাল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না বলে নির্দেশ দেয়া হয়।এছাড়া এই ঘটনায় রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের কাগজপত্র বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে পাঠানো, রোগীর চিকিৎসার সব খরচ বহন করা, ভুক্তভোগীর পরিবার ক্ষতিপূরণ দাবি করলে আইনি সহায়তা দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। সূত্র : বিবিসি

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..