রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
: মুজিবুর রহমান মুজিব:
প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সর্ব্বোচ্চ বিচারালয়- হাই কোর্ট ডিভিশনের দুইজন মান্যবর বিজ্ঞ বিচার পতি, জাষ্টিস শেখ মো: জাকির হোসেন এবং জাষ্টিস একে. এম, জহিরুল হক সমন্ধয়ে গঠিত হাই কোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ গত পচিশে জুলাই মঙ্গঁলবার হাই কোর্টের মাননীয় বিচার পতি গনকে বিজ্ঞ আইনজীবী গন কর্তৃক “মাইলর্ড” সম্ভোধন সংক্রান্ত ব্যাপারে একটি সময়োপ যোগী উক্তি ও অভিমত প্রকাশ করত: ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এব্যাপারে জাতীয় দৈনিক মানব জমিনের ষ্টাফ রিপোর্টার “বিচার পতিকে” “মাইলর্ড” বলতে বারন- শিরোনামে দৈনিকটির ছাব্বিশে জুলাইর সংখ্যায় উল্লেখ করেছেন- আদালতে মামলা শুনানীর সময় বিচার পতিকে “মাইলর্ড” বা “লর্ডশীপ” বলতে মানা করেছেন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মঙ্গঁলবার বিচার পতি শেখ মো: জাকির হোসেন ও বিচার পতি এ. কে. এম জহিরুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন। “মাইলর্ড” “লডশীপ” এর স্থলে “ইউর অনার” সম্ভোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় আদালতের জ্যেষ্ট বিচারক বলেন, দাসত্বের সময় নেই, প্রভূরা চলেগেছে। একই সঙ্গেঁ সংশিষ্ট বেঞ্চ অফিসারকে কোর্ট কক্ষের বাইরে এই নোটিশ টানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই বেঞ্চে উপস্থিত থাকা আইনজীবী জামিউল হক ফয়সল এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “আজকে থেকে “মাইলর্ড” “লর্ডশীপ” বলতে বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন ও মাননীয় বিচারপতি এ,কে,এম জহিরুল হক মহোদয় এর বেঞ্চ নিষেদ করে দিয়েছেন। এ সময় বিচারপতি বলেন, দাসত্বের সময় নাই, প্রভূরা চলেগেছে”। দৈনিক মানব জমিনের তৃতীয় পৃষ্টার প্রথম কলামে ক্ষুদ্রাকারের এই সংবাদটি জাতিকে একটি বৃহৎ সংবাদ এর দিক নির্দেশনা দেয়। প্রসঙ্গঁত উল্লেখ যোগ্য মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট এর আপীল বিভাগ এবং হাই কোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি গনকে আদালত এজলাশে মাইলর্ড-লর্ডশীপ বলে সম্ভোধন করা হয়। উর্ধ্ব আদালতের প্রচলিত প্রথাও রেওয়াজ এটাই। আইন আদালত এর স্রষ্টা অভিবক্ত ভারতে দখল বাজ ও লুন্টনকারী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এবং সেপাহী বিদ্রোহ বিজয়ের পর ইংলন্ডের রানী। ফরাসি বিপ্লবের বরপুত্র স¤্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট এর ভাষায় ইংরেজ জাতি- “এ নেশন অব শপ কিপার” দোকানদারের জাতি বেনিয়া বৃটিশ ভারত বর্ষে ব্যবসা বানিজ্য করতে এসে ব্যবসার সাথে ভারত বাংলার রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে জড়িয়ে পড়ে। ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন যুদ্ধ বিহীন পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয় পতন ও শাহদাত বরনের পর “ইংরেজ বনিকের মানদন্ড দেখা দিল রাজদন্ড রূপে পোহালে শর্বরী”। ঠিক একশত বৎসর পর দিল্লীর শেষ মূঘল স¤্রাট আবুজাফর সিরাজ উদ্দিন মোঃ বাহাদুর শাহ এর নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ হিসাবে পরিচিত সর্ব ভারতীয় সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে স¤্রাট বাহাদুর শাহের পরাজয় এবং প্রহসনের বিচারে রেঙ্গুঁন দেশান্তরে প্রেরনের মাধ্যমে সর্ব ভারত ব্যাপী বৃটিশ শাসন জেকে বসে। চলে লুন্টন-ঝুলুম নির্যাতন। ভারত বর্ষে মজাসে বানিজ্য করতে আসা ইষ্ট ইন্ডিয়া এবং ইউনাইটেড ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এবং অতঃপর ইংলন্ডের রানী ভারত বর্ষকে তাদের স্বার্থ ও সুবিধামত শাসন শোষনের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন বিধি-বিধান জারী করেন। এই ধারা বাহিকতায় ইন্ডিয়ান পেনাল কোড আই,পি,সি, জারী করে ইংরেজ সরকার তখন শাসক ইংরেজরা ছিল প্রভূ-লর্ড এবং অসহায় ভারত বাসি ছিলেন রায়ত-প্রজা-দাস সমতূল্য। তখন দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতের শেতাঙ্গঁ বিচারক গনকে “মাইলর্ড” সম্ভোধন করা হত। ধরে নেয়া হত ভারতীয় আদালতের বিচারক গন ইংলন্ডের রানীর প্রতিনিধি এবং ইংলন্ডের রানী যেহেতু ভারত বাসির প্রভূ সেহেতু রানীর প্রতিনিধি হিসাবে বায়ত-প্রজা ভারত বাসিকে, আদালতে বিচারক গনকে “মাইলর্ড” লর্ডশীপ সম্ভোধন করতে হত। যদি ও তা ছিল ভারত বাসির ধর্ম ও সংস্কৃতির পরিপহ্ণি। সাত চল্লিশ সালে বৃটিশ বিদায় ভারত বিভক্তি এবং পাকিস্তান ভারত বর্ষ দুটি স্বাধীন সর্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হলে ভারতীয় পেনাল কোড এর আদ্যাক্ষর পরিবর্তন করে আই,পি,সি হল পাকিস্তান পেনাল কোড পি,পি,সি। পৃথিবীর বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানে ইসলাম ধর্মের বিধি বিধান ও চেতনা বিরোধী আইন সম্ভোধন রীতি রেওয়াজ পরিবর্তন হয় নি। একাত্তোরে রক্ত ক্ষয়ী মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন সর্বভৌম গন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যোদ্দয় হলেও বৃটিশের আইন ও সম্ভোধন আইনের অধ্যাক্ষয় পাকিস্তানের পরিবর্তে এখন বিপিসি বাংলাদেশ পেনাল কোড। “মাইলর্ড” এর বিশুদ্ধ বাংলা “আমার প্রভূ”। ইসলামি আইনের বিধান মোতাবেক মহান আল্লাহই আমাদের একমাত্র প্রভূ, তিনিই আমাদের মহান ¯্রষ্টা, প্রতিপালক দুনিয়া ও আখেরাতের চূড়ান্ত বিচারের ক্ষমতাবান ও মালিক। একজন মানুষ কিংবা একজন মাননীয় বিজ্ঞ বিচারক মানুষের প্রভূ হতে পারেন না। দেশের মোট জনগোষ্টির শতকরা নব্বই ভাগের ও অধিক ইসলাম ধর্মের অনুসারি। দেশের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী মোতবেক রাষ্ট ধর্ম ইসলাম। ধর্মীয় অবজ্ঞা, অবমাননা, ধর্ম দ্রোহীতা সংবিধানের লংঘন। দেশে বসবাসকারি সনাতন, খৃষ্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী গনের ধর্ম বিশ্বাস, ধর্ম গ্রহ্ণ, ধর্মীয় অবতার, দেবতা, দেবদূূত, ধর্ম প্রচারক আছেন, কোন ধর্মেই সাধারন মানুষ মাননীয় বিচার পতি গনকে প্রভূ বলার বিধান নাই, দেশে ঘোষিত “নাস্তিক” এর সংখ্যা শত করা একভাগ নয়, ঘোষিত ‘নাস্তিক’ গন যেখানে কোন স্রষ্টার অস্থিত্বেই বিশ্বাস করেন না, সেখানে একজন মানুষ কে গুরুত্ব দিয়ে ‘প্রভূ’ স্বীকার করার প্রশ্নই অবান্তর। সেই সাত চল্লিশে, ধারা বাহিক আন্দোলন সংগ্রাম বিদ্রোহ বিপ্লব এর ফলও ফসল উপমহা দেশীয় আজাদী ও বৃটিশ বিতারন। প্রভূ বিদায় হলেও ইংরেজ জাতি বিদায় হলেও এখন পর্যন্ত “ইংলিশ কালচার” জাতির স্কন্ধে জেঁকে বসে আছে সিন্দাবাদের ভূতের মত। স্বাধীনতার সূবর্ন জয়ন্তী পেরিয়ে ও আমরা ঔপনিবেষিক মন মানসিকতায় আক্রান্ত। যা নিতান্তই দূঃখ ও দূভার্গ্য জনক এবং স্বাধীনতার চেতনার পরিপহ্ণি। স্বাধীনতা উত্তর কালে চাকরি সহজ লভ্য এবং ব্যবসা বানিজ্য সুবিধা জনক হলেও স্বাধীনও সম্মান জনক পেশা হিসাবে দেশের প্রবীন আইনজীবী আলীগড় ইউনিভার্সিটির কৃতি ছাত্র শ্রদ্ধেয় আব্দুল মোহিত চৌধুরীর জুনিওর হিসাবে আইন পেশায় যোগ দেই। জেলা বারের বার্ষীক নৈশ ভোজ সভানুষ্টানে সমিতির পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান কালে অনুষ্টানের প্রধান অতিথি তৎকালীন মান্যবর প্রধান বিচার পতি মিঃ জাষ্টিস এস,কে সিনহার কাছে দেশে প্রচলিত কিছু আইনের সংস্কার সংশোধনী সংযোজনী দাবী করে ছিলাম। জবাবে মিষ্টর জাষ্টিস সিনহা বলে ছিলেন “মিঃ মুজিব আই ওয়ান্টটু চেইঞ্জ দি হউল সি,আর,পি,সি বাট আই হেভন পাওয়ার”। সংস্কার-সংশোধনী সংযোজন সময়ের দাবী। একটি আইন গত কাঠামো, ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন সংস্কার সংশোধনী সংযোজনীর উপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে মানব সভ্যতা। ইংরেজ প্রনীত আইনে স্বাধীন বাংলাদেশ চলতে পারে না। ইংরেজ প্রনীত আইনে ধারা ২৯০ পাবলিক নুইসেন্স হালকা, জামিন যোগ্য। ভ্রাম্য মানবারবনিতা গনকে এই ধারায় গ্রেপ্তার পূর্ব্বক আদালতে চালান দিয়ে দালাল গন দোষ স্বীকার করিয়ে সর্ব্বোচ্ছ শাস্তি দুই শত টাকা নগদ জরিমানা দিয়ে নিয়ে যায়। পূনরায় সেই হীন পেশায় নিয়োজিত হয়। নারীর ক্ষমতায়নের এই বাংলাদেশে একজন নারীর ইজ্জত আর্বর মূল্য মাত্র দুই শত টাকা। বৃটিশ ভারতে দরিদ্র নারীর মূল্য ছিল না বলে নারীর এই অপমান ও অবমাননা। ধারাটি অজামিন যোগ্য এবং জরিমানার পরিমান দুই শত টাকার স্থলে বিশ হাজার হলে অপরাধের পুনরা বৃত্তি রিপিটেশন অবক্রাইম হত না। ঠিক তেমনি ধর্ম্মানুভূতিতে আঘাত এর ধারা ২৯৫ হালকা ও জামিন যোগ্য। অথছ এ দেশের শতকরা প্রায় একশত জন নাগরিক ধার্মিক ধর্ম্মানুরাগি। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, ভাঙ্গলে ধর্ম্মগ্রহ্ণ পবিত্র আলকোরআনের অবমাননা হলে জামিন যোগ্য অপরাধে দুস্কৃতি কারিগন জামিনে বেরিয়ে যায় বিচার হীনতার সংস্কৃতির কারনে রিপিটেশনর অব ক্রাইম হয়। তাই বিপিসি ৩২৫ সহ এই সব ধারা সংশোধন সময়ের দাবী। বিজ্ঞ বিচার পতি মহোদয়ের এই আদেশ জাতিকে গোনাহ পাপ কাজ থেকে বাঁচাবে ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্টা গতি শীল হবে। একাশি সালে মহামান্য হাই কোর্টে তালিকাভূক্ত হলেও ঢাকাবাসি হওয়া কিংবা মহামান্য হাই কোর্টে প্রেকটিশ করার সুযোগ হয় নি-এমন সৌভাগ্য খুশ নসীব হয় নি আমার, যদিও ভাই বন্ধু অনেকেই নাম ডাকের সাথে স্বনামে সুনামেই আছেন- পেশাগত পারঙ্গঁমতা প্রদর্শন করছেন। উর্ধ্ব আদালতের ভাব মূর্তি উজ্জল করছেন। “মাইলর্ড” এর পরিবর্তে ইউর অনার সূচনাকারী বিজ্ঞ বিচার পতি দ্বয়কে একজন নাগরিক আইনজীবী হিসাবে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। মাচ অবলাইজ ইয়র অনার মাচ অবলাইজ। আইনের সংস্কার সংশোধনী প্রসঙ্গেঁ মাননীয় আইন প্রনেতাগন একটু ভেবে দেখবেন কি?
[মুক্তিযোদ্ধা। এডভোকেট হাই কোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব। সেক্রেটারি মৌলভীবাজার জেলা জামে মসজিদ।]