সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন
চৌধুরী ভাস্কর হোম: বৃহত্তর সিলেটের নানান ঐতিহ্যের একটি হচ্ছে পান দিয়ে আপ্যায়ন। আর সেই পানের স্বাদ নিতে খাসিয়া পানের বিকল্প নেই। অথচ যাদের ঘামে পরিশ্রমে এই আপ্যায়ন সেই আদিবাসী খাসিয়া স¤প্রদায়ের জীবন জীবিকার করুন ইতিহাস অনেকেরই অজানা। তাদের নেই নিজস্ব কোনো ভ‚মি। অন্যের কাছ থেকে লিজ নেয়া ভ‚মিতে সুস্বাদু পান চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। উঁচু পাহাড়ের উপর বসবাসকারী অধিকাংশ খাসিয়া পুঞ্জিতে নেই পাকা রাস্তাঘাট, স্কুল, স্বাস্থ্যসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তেমনি পাহাড়ে বসবাসরত আরেক আদিবাসী স¤প্রদায় গাঢ় থেকে শুরু করে সমতলে বসবাসরত চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী কারই নেই নিজস্ব কোন ভ‚মি। অথচ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত পণ্য আজ দেশের বাজার ছাড়িয়ে রপ্তানী হচ্ছে ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যে।
জানা যায়, এদিকে দেশের ৭৫টি আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা ১.১৩ ভাগ বসবাস করে সিলেটে। এরমধ্যে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পুঞ্জিতে প্রায় ৩০ হাজার আদিবাসী খাসিয়া বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস পানচাষ। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা জানান, একই ভাবে মৌলভীবাজার জেলায় চা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা কয়েক লাখ চা শ্রমিকরা যুগের পর যুগ ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন নিজস্ব ভ‚মির জন্য। এই দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদেও জীবন মানের উন্নয়ন প্রয়োজন।
এদিকে ঐতিহ্যগত ও উত্তরাধিকার স‚ত্রে খাসিয়ারা বনভ‚মির বাসিন্দা। তাদের জীবন ও জীবিকার উৎস পান চাষাবাদ। তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় প্রতিনিয়ত ভ‚মি দখল, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ, হত্যা ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন হয়রানীর স্বীকার হতে হচ্ছে।
এদিকে সিলেটে ১৩টি, হবিগঞ্জে ৩টি এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৬৫ টি খাসিয়া পানপুঞ্জি রয়েছে। যুগযুগ ধরে এসব জমিতে পান চাষ করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে এলেও ভ‚মির ওপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তেমনি গাঢ় কিংবা চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর তাছাড়া বিশুদ্ধ পানি, সেনিটেশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যাতায়াত ব্যবস্থাসহ এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেনি বলে জানান বৃহত্তর সিলেট মোন্ডা সমাজ কল্যান পরিষদ এর সাধারন সম্পাদক লক্ষন মোন্ডা।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো চেয়ার পার সন জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করাসহ বাদ পড়া আদিবাসীদের নাম সঠিকভাবে গেজেটে অর্ন্তভূক্ত করা। এছাড়াও সমতলে আদিবাসীদের ভুিম কমিশন ব্যবস্থা চালু করে তাদের সকল সমস্যার সমাধান ও নিরাপত্তা দিলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে- বিশ্ব আদিবাসী দিবসে এমনটাই প্রত্যাশা ক্ষুদ্র জাতি সত্তার জনগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের।