সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন। তবে সাম্প্রতিক বন্যায় এ রেললাইন ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উঠেছে নানান প্রশ্ন। এ মেগাপ্রকল্প নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ মেগা প্রকল্প কতটা পরিকল্পিত, কতটা জলবায়ুবান্ধব বা টেকসই– প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ ক্ষতি স্বাভাবিক। এক-দেড় কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। দুই সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্টোবর মাসেই এর উদ্বোধন এবং ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় কমিটি করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ নির্ণয় করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, যেন পরবর্তীতে আর ক্ষতির মুখে পড়তে না হয়। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ি ঢল নেমে যাওয়ার মতো কালভার্টসহ পর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ডুবে যায় এই রেললাইন। পাহাড়ি ঢলের চাপেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেললাইন, আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। অগাস্ট মাসের শুরুতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে রেললাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় আধা কিলোমিটারজুড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে রেললাইন উঁচু-নিচু হয়ে আছে। স্লিপারের মাঝে পাথর সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সংস্কার ছাড়া এ পথে রেল চলাচল শুরু করা অসম্ভব।
এ বিষয়ে ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘যেটা ঘটে গেছে, কেন ঘটেছে সেটা হিসাব-নিকাশ করা হোক। জাতীয় কমিটি হওয়া উচিত।’ প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘এর আগে তো এখানে এ রকম বৃষ্টিপাত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা যে মতামত দেয় সে মতামত আমরা সাদরে গ্রহণ করব।’
চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেললাইনের দৈর্ঘ্য ১০২ কিলোমিটার। এ প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ অবকাঠামো বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, নতুন এই রেললাইনে যে বাঁধ দেয়া হয়েছে সেখান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। রেললাইনের সাথে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, সেখানে আরো বেশি কালভার্ট রাখার প্রয়োজন ছিল। যেগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো আরো প্রশস্ত করে বানানোর প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা বলছেন, সড়কের চেয়ে রেললাইনে কম কালভার্ট দেয়া হয়েছে। যেগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলোর রাস্তার চেয়ে কম প্রশস্ত। রাস্তার যে দূরত্বে চারটি বড় কালভার্ট দেখা যায়, তার বিপরীতে একই দূরত্বে রেলপথে দুটি কালভার্ট দেয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আরও বেশি এবং আরও প্রশস্ত কালভার্টের প্রয়োজন।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নকশা ও পরিকল্পনায় স্থানীয় জনসাধারণের অভিজ্ঞতা ও মতামতকে যথাযথ বিবেচনা করা হয়নি। এমনটাই মনে করেন নাগরিক সংগঠন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি এবং প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া। তিনি বলেন, প্রকল্পে ডিজাইনের সময় স্থানীয় জনসাধারণের মতামত নেয়া খুবই জরুরি। তবে কালভার্টের সংখ্যা কমানো হয়নি বরং বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি জানান কক্সবাজার রেললাইনের একশ কিলোমিটারে ১৭৩টি কালভার্ট, ৩৮টি ব্রিজ তৈরি হয়েছে। একশ কিলোমিটার রেললাইনে সাড়ে চার কিলোমিটার জায়গা পানি নিষ্কাশনের জন্য ওপেন রাখা হয়েছে।
রেললাইনের ক্ষতির কারণ হিসেবে রেকর্ড বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলকেই দায়ী করছেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দু’দিনে আট শ মিলিমিটার বৃষ্টি তো আগে কখনো হয়নি। এখন যদি আমাদের ক্লাইমেটের অদ্ভুত আচরণের জন্য হয়, এই জিনিসগুলো তো আমাদের আগে জানা ছিল না। এভাবে তো আমরা কালভার্টের সংখ্যা করিনি। আরও দুটো কালভার্ট যদি থাকতো তাহলে কি বন্যা হতো না?।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তা থেকে আমাদের রেললাইন অনেক ওপরে। রোড তো পুরোটাই ডুবে গিয়েছিল। পুরো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই তুলনায় আমার তো মাত্র ৪৫০ মিটার বা আধা কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। কক্সবাজারের দিকে কিছুই হয়নি।’ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এই ধরনের বৃষ্টিপাত এখন থেকে এখন আর অস্বাভাবিক নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অল্প সময়ে অনেক বৃষ্টির ঘটনা বাড়বে। তাহলে এই যে রেললাইনটা বানানো হয়েছে, যেটা উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত আর পানির ঢল নেমে পূব থেকে পশ্চিম দিকে এসে সাগরে যাবে। এটা ডিজাইন করার সময় এই ফ্যাক্টরটা কনসিডার করার প্রয়োজন ছিল।’