1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

২-৮ অক্টোবর বিশ্ব শিশু অধিকার সপ্তাহ শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মা বাবার ভূমিকা

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৬৬ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:
শিশুরা দেশের ভবিষ্যত। আর বাবা মায়ের ভূমিকাই নির্ধারণ করে দেয় শিশুর ভবিষ্যত। তাই শিশুর প্রতিটি ব্যাপারে অর্থাৎ পুষ্টি, বিকাশ আচরণের দিকে তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। সময়মতো পোলিও খাওয়ানো এবং সবরকম টিকা দেওয়ানো বাবা-মায়ের অবশ্য কর্তব্য। সরকারি হাসপাতালে এগুলো বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
দম্পতির কাছে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময় শিশুর অভিভাবক হওয়া। এ সময় বাবা মায়ের আচার ব্যবহার, চালচলন, সম্পর্ক সবই নতুন মাত্রা পায়। কারণ প্রতিটি বিষয়েরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ে শিশুর উপর। মা ও বাবা উভয়েই শিশুর জন্মের জন্য দায়িত্বশীল হতে হয়। তবে শিশুর জন্ম দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয় মাকে। তাই শিশুর জন্ম দেওয়ার জন্য মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যসূত্রে জানানো রয়েছে-
(ক) আঠারো বছরের আগে ও পয়ত্রিশ বছরের পরে গর্ভবর্তী হওয়া মা ও শিশুর পক্ষে ক্ষতিকর। প্রতি বছর ৩ লক্ষ মহিলা মারা যান গর্ভধারণ ও প্রসবকালীন সমস্যায়। পরিকল্পিত গর্ভধারণ এই সমস্যাকে অনেকটাই প্রতিরোধ করে। (খ) দুটি গর্ভধারনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান দুই বছরের কম হলে জন্মদানকালীন শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বেড়ে যায়। (গ) সন্তানসম্ভবা মা-কে নিয়মিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে চেকআপ করাতে হবে।(ঘ) গর্ভবতী অবস্থায় প্রত্যেক মহিলার প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য ও বিশ্রাম। খাবারের মধ্যে দুধ, ফল শাকসবজি, মাছ-মাংস, ডিম, ডাল ও দানাশস্য থাকা বিশেষ প্রয়োজন।(ঙ) যে সমস্ত মেয়ে সবসময় পুষ্টিকর খাদ্য খায় ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, তাঁদের মাতৃত্বকালীন জটিলতা কম হয়। তাই মেয়েদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।(চ) গর্ভবতী অবস্থায় ধূমপান- প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উভয়ই গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকারক। মদ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্যও গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করে। আমাদের দেশে প্রতি দিন এক হাজার জনেরও মত মহিলা সন্তানধারণকালীন অবস্থায় মারা যান। তাই প্রতি মুহুর্তে, প্রতি পদক্ষেপে সতকর্তার প্রয়োজন।
শিশুদের রোগ ও তার প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন- শিশু জন্মানোর আগে, মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মায়ের কোনও কোনও রোগ শিশুকেও সংক্রামিত করতে পারে। অনেক সময় শরীরে কোনও খুঁত নিয়েও শিশুর জন্ম হয়। জন্মের ঠিক পরেই সাধারণত শিশুর যে রোগ হয় তা অক্সিজেনের অভাবজনিত কারনেই হয়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় হাইপক্সি ইসকেমিক এনসেফেলোপ্যথি যা সংক্ষেপে এইচআইই। এতে রোগাক্রান্ত শিশুদের দেহে রক্ত এবং অক্সিজেনের সংবহন প্রয়োজনের তুলনায় কম হয়। ফলে মস্তিস্কের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেক ক্ষেত্রে জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে শিশুর ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস দেখা দিতে পারে। ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলদে হয়ে যায়। রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে বিলোরুবিন ছড়িয়ে গিয়েই এই বিপত্তি ঘটে। অবশ্য সঠিক চিকিৎসায় সেরে যায় অসুখ সহজেই।
তারপর শিশু যত বড় হতে থাকে ততই সে বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। ফলে বিভিন্ন রোগ-জীবানু তাদের শরীরে আশ্রয় নেয়। আর এই কারণেই বাচ্চা একটু বড় হতে না হতেই নানা ধরণের সংক্রামক অসুখে ভুগতে থাকে। একদম ছোট্ট শিশুদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ চিকিৎসকদের অনেক সময় চিন্তায় ফেলে দেয়। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় থাকে না। ক্ষুদান্ত্র অপরিণত তাই অ্যান্টিবায়টিকও হজম করতে পারে না। তখন ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
ছোটরা সাধারণত যে সমস্ত সংক্রামক রোগে ভুগে সেগুলোর অন্যতম একটি হল অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন সংক্ষেপে এআরআই। শ্বাসতন্ত্রের এই অসুখে বাচ্চারা ঘন ঘন কাশে, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়, খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়। এই সঙ্গে জ্বরও হতে পারে। এ রোগের জন্য দায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সহ আরও বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস। এ ক্ষেত্রে অল্প জ্বরে বাচ্চাদের প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। নাক বন্ধ হয়ে গেলে নাকে স্যালাইন পানি। কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি খুব বেড়ে যায় তবে বুঝতে হবে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা দ্রæত কমছে। আবার সেটা শ্বাসকষ্ট্ বা কোনও জটিল উপসর্গও হতে পারে। তাই তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ বায়ু দূষণ। ফলে ওদের ফুসফুসের ক্রমবিকাশ কার্যকারিতা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ছোটদের সামনে ধূমপান করা উচিত নয়। ধুলো ও ধুয়ো থেকেও ছোটদের দূরে রাখা উচিত। ছোটরা পেটের রোগেও ভোগে। পরিপাক তন্ত্রে ভাইরাস সংক্রমণের ফলে ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্ট্রাইটিস হয়।
এই রোগে বার বার পায়খানা ও বমি হয়। অল্প জ্বরও থাকতে পারে। এ ধরণের অসুস্থতায় শিশুকে বার বার ওআরএস খাওয়াতে হবে। এই অসুখের নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই। শরীরের ভিতরেই রোগের মোকাবিলা করার জন্য প্রতিষেধক তৈরি হয়। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শিশুর ডিহাইড্রেশন না হয়। কারণ এই রোগে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ বেরিয়ে যায়। ত্বকের নমনীয়তা কমে, জিভ শুকিয়ে যায়, রক্তচাপ কমে, ক্লান্তি এবং অবসন্ন ভাব দেখা দেয়। তবে পায়খানায় রক্ত মিশে থাকলেও প্রবল জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
অন্য আরেকটি রোগে শিশুরা আক্রান্ত হয় তা হল- ইউরিন ইনফেকশন। সবচেয়ে বেশি ভোগে দু-তিন বছর অবধি বয়সের শিশুরা, যারা নিজেরা নিজেদের যতœ নিতে পারে না। প্রস্রাব করতে জ্বালা-যন্ত্রণা, ঘন ঘন প্রস্রাব করা, তলপেটে ব্যথা, অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত ঘন বর্ণের মুত্র, জ্বর- এই সব সাধারণ লক্ষণ। অপরিচ্ছন্ন থাকলে বা নোংরা জামাকাপড় থেকে ব্যাকটেরিয়া মুত্রদ্বার হয়ে মূত্রথলিতে, এমনকী কিডনিতে গিয়ে বাসা বাঁধে। একদম প্রাথমিক স্তরেই চিকিৎসা করা উচিত। নইলে রোগ জটিল আকার নেবে ও কিডনির কার্যকারিতা স্থায়ীভাবে বিপর্যস্ত হওয়াও অসম্ভব নয়। এই সঙ্গে নানা ছত্রাক-ঘটিত ত্বকের রোগ, কানের রোগ বাচ্চাদের কাবু করে ফেলে।
যে সব অসুখের কথা বলা হল তার বেশিরভাগই কিন্তু একটু সাবধান হলেই প্রতিরোধ করা যায়। পরিচ্ছন্ন এবং সুস্থ থাকবার কিছু পরামর্শ প্রদান করা হলো- ১) মাকে সব সময় পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল, চুল- জামাকাপড় পরিষ্কার করা খুবই জরুরী। ২) শিশুকে কোলে নেয়ার আগে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। খুলে ফেলুন আংটি। ৩) øেহের অতিশয্যে বার বার চুমু খাবেন না। এ থেকে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। ৪) কুসংস্কার একটা বড় সমস্যা। বাচ্চাদের চোখে কাজল পরাবেন না। তাবিজ, মাদুলির ভিথে সুতো থেকে ছত্রাক সংক্রমণের জন্য ত্বকে র‌্যাশ বেরোয়। ৫) রোগজীবানু বহন করার একটা বড় মাধ্যম হলো জুতো। শিশুদের ঘরে জুতো খুলে ঢুকুন। ৬) বাচ্চাকে নিয়মিত গোসল করান, পরিষ্কার জামা পরান, বাচ্চার বাসন, বোতল, তোয়ালে আলাদা রাখুন। ৭) শাক-পাতা, তরিতরকারি খুব ভাল করে ধুয়ে সিদ্ধ করে তবেই খাওয়াবেন। নয়ত ফিতেকৃমি ঢুকে পড়তে পারে শিশুর দেহে। ৮) অসুখ হলে শিশুকে প্রোটিনসমৃদ্ধ ও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার দিন। তবে খেতে না চাইলে জোর করবেন না।এর পরেও অসুখ করলে সঠিক চিকিৎসা এবং উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে শিশু নিশ্চই ভালো হয়ে উঠবে।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..