শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন
রুহুল ইসলাম মিঠু,সিলেট : বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), সিলেট কার্যালয়ে মূল মালিকের লিখিত ছাড়াই জালিয়াতির মাধ্যমে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিলেট থ-১২-৮৫৩১ নাম্বারের সিএনজি অটোরিক্সাটির প্রকৃত মালিক সাব্বির হোসেন হলেও বিআরটিএ কর্মকর্তারা জালিয়াতি করে সোবহান আহমদ মিলনের নামে কাগজ তৈরি করে দিয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল সিএনজি গাড়ীর মালিক নগরীর গোয়াইপাড়ার আবুল হাশেম এর ছেলে সাব্বির হোসেন সিলেট নগরীর লন্ডনী রোড-হাজীপাড়ার মৃত রইছ মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫০) ও ছেলে সোবহান আহমদ মিলন (৩০) সহ সিলেট বিআরটিএ’র চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলা নং- কোতোয়ালী সিআর ৬০৯/২০২২ ইং।
মামলায় অন্য বিবাদীরা হলেন সিলেট বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) সানাউল হক, সার্কেল পরিদর্শক গোলাম রব্বানী, সার্কেল রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান, সার্কেল রেকর্ড কিপার দেলোয়ার হোসেন। মামলার বাদী পক্ষে নিযুক্তীয় আইনজীবী হিসেবে ছিলেন এডভোকেট শফিকুল ইসলাম।
মামলার বিবরণে জানা যায়, চলতি সালের ২৬ শে জানুয়ারী সিএনজি গাড়ীর মালিক সাব্বির হোসেন ৮৫ হাজার টাকা বিবাদী সুফিয়া বেগম ও সোবহান আহমদ মিলনের কাছ থেকে সুদে ঋণ আনতে গেলে উভয়ের মধ্যে একটি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে একটি অঙ্গীকার নামা চুক্তি করা হয়। চুক্তির অধীনে সাব্বির হোসেন ৮৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৬৫ হাজার টাকা তাদের কাছ থেকে পান। বাকী অবশিষ্ট ২০ হাজার টাকা বিবাদী পক্ষ না দিয়ে সময় ক্ষেপন করেন। এই চুক্তির ১০ দিন পর সাব্বির হোসেন বিবাদীর কাছে গিয়ে ৬৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে উক্ত সিএনজিটি ছাড়িয়ে আনতে গেলে বিবাদী সুফিয়া বেগম ও সোবহান আহমদ মিলন সাব্বিরকে বলেন, এই গাড়ীটির মালিক তারা। মালিকানার কাগজপত্র তাকে প্রদর্শন করেন। এতে নিরূপায় হয়ে সাব্বির হোসেন বিবাদী সুফিয়া ও মিলনের এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে বিচার চাইলে উভয় বিবাদীগণ মুরব্বীদের ডাকে আসেনি। ফলে সাব্বির হোসেন সিলেট বিআরটিএ কার্যালয়ের রেকর্ড কিপার দেলোয়ার হোসেন ও সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) সানাউল হকের কাছে অনুনয়-বিনয় করেন। এই দুই কর্মকর্তারা সাব্বির হোসেনকে বিআরটিএ কার্যালয়ে নাস্তা খেতে ব্যস্ত রেখে এক ঘন্টা পর সাব্বির হোসেনকে বলেন, সে একটি লিখিত মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন জমা দিতে হবে। এই আবেদন জমা দেয়ার পর বিআরটিএ’র অভিযুক্ত কর্মকর্তারা তাকে বলেন, যেভাবেই হোক সিএনজি তাকে ফেরত দেয়া হবে, রেজিষ্ট্রেশন মালিকানা বাতিল করা হবে। কিন্তু সাব্বির হোসেন পুনরায় এই অভিযুক্ত বিবাদীর কাছে গেলে তারা সাব্বির হোসেনকে বেশি কথাবার্তা বললে পুলিশে ধরিয়ে গ্রেফতার অথবা সন্ত্রাসী দিয়ে খুন করে ফেলবেন মর্মে হুমকি দিয়ে শাসিয়ে বিদায় দেন। পরবর্তীতে সাব্বির হোসেন বিআরটিএ কার্যালয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন, সুদ ব্যবসায়ী, প্রতারক সোবহান আহমদ মিলন, সাব্বির হোসেন এর পরিবর্তে তার মালিকানাধীন সিএনজিটির ফিঙ্গার প্রিন্ট ও মালিকানা প্রতারক সোবহান আহমদ মিলন এর নামে হয়ে গেছে। এই ঘটনার পর তিনি আদালতে গিয়ে সুবিচার চেয়ে মামলা করেন। মামলা হওয়ার কিছু আগেই বিআরটিএ’র অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ঐ কার্যালয় থেকে অন্যত্র চলে যান। বর্তমানে সিএনজিটি জালিয়াত প্রতারক সোবহান আহমদ মিলন এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মামলার আইনজীবী বলেন, আগামী ০৭ জুলাই সংশ্লিষ্ট আদালতে ঐ মামলার পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য রয়েছে। গত ২৬ শে এপ্রিল বিজ্ঞ আদালত এই জালিয়াত ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআই, সিলেটকে নির্দেশ দেন বলে মামলার আইনজীবী এডভোকেট শফিকুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
সিলেট বিআরটিএ কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) রিয়াজুল ইসলাম আলাপকালে জানান, যে বা যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, অবশ্যই তারা বিচারের মুখোমুখি হবে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন বলে জানান।