শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০২:২৪ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে ঈদের কেনাকাটা সবসময়ই বেশ আগে থেকেই হয়ে ওঠে সরগরম। পুরো নগরী যেন হয়ে ওঠে আস্ত এক ঈদ বাজার। বিশেষ করে ইফতারের আগে বিকেলে ও রাতে তারাবির নামাজের পরই জমে উঠে সিলেটের ঈদবাজার। দিনে গরম ও ব্যস্ততার কারণে রাতের কেনাকাটাকে স্বস্তিদায়ক মনে করছেন ক্রেতারা।
কিন্তু ক্রেতার চাপে রাতে নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া ও নাইওরপুল এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাত ৯টার পর নগরের প্রধান সড়কগুলোতে যেন যানবাহনগুলো আর চলে না। আর সড়কের পাশ দিয়ে মানুষ ছুটছে মিছিলের মতো। এসব মানুষের প্রায় সকলের হাতেই শপিং ব্যাগ।
ঈদের বাকি এখনো ১৪ দিন। তাতে কি সময়ের সাথে সাথে মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে সিলেটের শপিং সেন্টারগুলোতে। প্রিয় মানুষের জন্য কেনাকাটা করতে নগরীর মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের বিচরণ চোখে পড়ার মতো।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) ছুটির দিন হওয়ায় সিলেট নগরীর সব মার্কেট খোলা ছিলো। ক্রেতাদের ভিড়ও ছিলো অন্যদিনের চেয়ে বেশি। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে তাই মার্কেটগুলোকে ভিন্নভাবে সাজিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। নগরীর ব্লুওয়াটার শপিং সিটি, শুকরিয়া, সিটি সেন্টার ও আলহামরা মধুবন মার্কেট, হাসান মার্কেটসহ সবকটি শপিং সিটিতে ভিড় ছিল লক্ষ্যনিয়।
ঈদের পোশাকের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে গণ্য হয় জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া এলাকার মার্কেটগুলো। আর নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের আনাগোনা বন্দরবাজারে।
শুক্রবার এই মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রীতিমতো কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী। একইভাবে অভিজাত ফ্যাশন হাউস আড়ং, সেইলর, বঙ্গ, দেশিদশ থেকে শুরু করে নয়াসড়ক, কুমারপাড়া ও জেলরোড সড়কের সব ফ্যাশন হাউসে প্রথম রমজান থেকেই ঈদের কেনাকাটা বেড়েছে।
বাজারে নানা ধরনের পোশাক থাকলেও এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে দেশি ও ভারতীয় সুতি পোশাকের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি অন্যান্য পোশাকের চাহিদাও রয়েছে। পরিবারের সবার জন্য নতুন কাপড় কিনতে বিপণী বিতানগুলোতে ঘুরে ঘুরে পোশাক কিনছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। শুধু বড়রাই নয় পছন্দ মতো পোশাক কিনতে মা-বাবার সঙ্গে দোকানে ভিড় করছে শিশুরাও। শিশুদের হৈ-হুল্লোড় আর কোলাহলে জমে উঠেছে নগরের বেবিশপগুলো।
সিলেটের ঈদের কেনাকাটা নিয়ে জিন্দাবাজার ব্লু—ওয়াটার শপিং সিটির জিএম- মলয় দত্ত মিঠু জানান, ঈদের এখনো ১৫ দিন বাকি আছে। এরই মধ্যে ব্যবসা জমে উঠেছে। সবগুলো দোকানে নতুন পোশাকের পসরা। শুধু পোশাক নয়, নারী পুরুষ, শিশু-কিশোরদের থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী সব বয়সী মানুষকে মাথায় রেখে দোকানগুলোর প্রস্তুতি বিন্যাস হয়েছে। নতুন ডিজাইনের গহনা, কসমেটিকস, থ্রি পিস, টিশার্ট, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ, শাড়ি মন কেড়েছে ক্রেতাদের।
আল হামরা থেকে মায়ের জন্য শাড়ি আর মেয়ের জন্য রেডিমেড পোশাক কিনেছেন বীথি সাইমূম। তিনি জানান, প্রতিবছর চেষ্টা করি ঝামেলামুক্ত ঈদের কেনাকাটা করতে। তবে সেটি এবারও হয়নি। আগেভাগে এসে দেখাগেলো সাধারণ মানুষ পুরোদমে কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন।
এদিকে ঈদে অনলাইনে কেনাকাট হাল সময়ের জনপ্রিয় মাধ্যম। সেই মাধ্যমেও কেনাকাটা চলছে। অনলাইন ভিত্তিক ফ্যাশন হাউস ত্রিময়ীর কর্ণধার জান্নাতুল নাজনীন আশা জানান, গত বছরের মতো এবারও দেশি—বিদেশি পোশাক আমাদের কালেকশনে রয়েছে। প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। পাশাপাশি পহেলা বোইশাখের আমেজও রয়েছে ঈদ শপিং এ। ২০২০-২১ করোনা ক্রান্তীর পর এবছর ব্যবসা ভালো ব্যবসা হবে বলে প্রত্যাশা করেন আশা।
অপরদিকে, যারা কাপড় কিনে দর্জিপাড়ায় গিয়ে নিজের পছন্দমতো মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ, ছেলেরা পাঞ্জাবী, আফগানী, প্যান্ট কিংবা শার্ট তৈরি করেন তাদেরকে ভিড় করতে দেখা গেছে শুকরিয়া, মধুবন, লতিফ সেন্টার, আল হামরা, সিটি সেন্টারসহ থান কাপড়ের দোকানগুলোতে। আগেভাগে কাপড় কিনে সেলাইয়ে না দিলে ঈদের আগে পোশাক পেতে বেগ পেতে হয়, তাই এই দৌড়ঝাঁপ বলে জানান ক্রেতারা। নগরী পিংক টেইলার এর মাস্টার মো. জাকারিয়া জানান, যেভাবে অর্ডার আসছে, এবার একটু আগেবাগেই হয়তো অর্ডার নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এবারের ঈদে পোশাকে কিছুটা নতুনত্ব এসেছে। পোশাকের পাশাপাশি নিত্যনতুন জুতা-স্যান্ডেলের প্রতি চাহিদা রয়েছে প্রচুর। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অনেকে বেল্ট, জুতা-স্যান্ডেল, জুয়েলারি এবং কসমেটিকসও কিনছেন। এছাড়া সুতি ও সিল্কের পাঞ্জাবি, থ্রি-পিছ, শিশুদের রেডিমেড জামা কাপড় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পোশাকের মধ্যে সুতি ও বুটিক্স পোশাক রয়েছে চাহিদার শীর্ষে। এছাড়াও কামিজসহ বিভিন্ন পোশাক থাকলেও দামের দিক থেকে কিছুটা সাশ্রয় হওয়ায় নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জামদানি ও টাঙ্গাইল শাড়ি।
বাজারে ছেলেদের নরমাল, নবাব, প্রিন্ট, বুটিক ও হাতে কাজ করাসহ বাহারি ডিজাইনের নানা বৈচিত্র্যের পাঞ্জাবিও বেশ বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবির পাশাপাশি তরুণদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ফিটিং হাফ শার্ট, ফুল শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট, চায়না গ্যাবাডিন, ফরমাল প্যান্ট, টি-শার্ট, ফরমাল শার্ট ও শেরওয়ানি।
রমনীদের ফ্যাশনের অন্যতম অনুসঙ্গ কসমেটিক্স। সেই দোকানগুলোতেও ভিড়ের কমতি নেই। সিটি সেন্টারের শপিং সিটির ‘মাহা কসমেসিক্স’ এর কর্ণধার ও আবুল কাশেম বলেন, দেশি বিদেশি চুড়ি থেকে শুরু করে সবধরনের কসমেটিকসে চাহিদা রয়েছে ঈদ বাজারে। এবার ব্যবসাও মন্দ হচ্ছে না। আশা করছি আরো ভালো হবে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আবু তাহের শোয়েব বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মানুষ কিছুটা অস্বস্থিতে থাকলেও ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করেন নেন ঠিকই। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুসিত অঞ্চল সিলেটে ইতোমধ্যে রেমিটেন্স আসা শুরু হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় ব্যবসা এবার ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা।