রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ পূর্বাহ্ন
অর্থনীতি ডেস্ক: আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট মিসরের সুয়েজ খাল বিশালাকৃতির কনটেইনারবাহী জাহাজ আটকে বন্ধ হয়ে গেছে মঙ্গলবার। এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে করোনাকালীন বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে। এরই মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৬ শতাংশ বেড়েছে।
এভার গিভেন নামের বিশালাকৃতির জাহাজটি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে আড়াআড়িভাবে আটকে যাওয়ায় সুয়েজ খালের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বৈশ্বিক তেলসহ সমুদ্র বাণিজ্যের এ গুরুত্বপূর্ণ রুট দিয়ে নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে তেলের বাজারে।
সুয়েজ খাল বন্ধের প্রভাব ঠিকই মূল্যায়ন করতে পেরেছেন জ্বালানি তেলের বাজারে বিনিয়োগকারীরা। তাই গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে সর্বনিম্নে নামার পর বুধবার থেকে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের দাম। সুয়েজ খাল বন্ধের প্রভাবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্ট ক্রুডের মূল্য ৬ দশমিক ১ শতাংশ হারে বেড়েছে ৩ ডলার ৬৯ সেন্ট। ব্যারেলপ্রতি এর সর্বশেষ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৪ ডলার ৪৮ সেন্ট।
অন্যদিকে, মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ৬ শতাংশ বা ৩ ডলার ৬৯ সেন্ট বেড়ে ব্যারেলপ্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬১ ডলার ২৫ সেন্টে। এর আগে সর্বশেষ এর দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারেরও নিচে।
দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে বেশকিছু কারণে দেশটিতে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১২ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ ছিল জ্বালানি তেলের চাহিদা কম থাকা, তেলের বিস্তৃত ব্যবহার বন্ধ হওয়া। তবে জানুয়ারির পর বুধবার এই প্রথম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের বিয়ারিশ (বিক্রয় চাপে দরপতন) প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। বৃহস্পতিবারও অবস্থা অপরিবর্তিত ছিল।
সুয়েজ খাল বন্ধ হওয়ায় আমদানি-রফতানিতে বিঘ্ন ঘটার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনের দেয়া তথ্য উল্লেখ করে সংস্থাটির এক সূত্র বলছে, তেলের বাজারের আকস্মিক মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা ও সাম্প্রতিক দরপতনের সুযোগে এক সপ্তাহেরর মধ্যেই ৩০ লাখ ব্যারেল তেল মজুদ করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় ওপেক প্লাসের ওপর কিছুটা চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী সপ্তাহে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর এক গ্রুপ মিটিং ডাকা হয়েছে, যেখানে মে মাসের জ্বালানি তেল উৎপাদন নীতিমালা নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা ছিল তাদের। কারণ জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার প্রবণতা সত্ত্বেও ওপেক প্লাসের সদস্যরা বছরের মোট চাহিদার চেয়েও ২০ শতাংশ বেশি তেল উত্তোলন করেছে।
এছাড়া করোনা মহামারির সংকট কাটিয়ে ওঠার পথে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে তেল উৎপাদনকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্য ছিল দেশগুলোর। ফলে সামনের দীর্ঘ সময়ে জ্বালানি তেল ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে তাদের। তবে হঠাৎ করে তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও সুয়েজ খাল বন্ধ থাকায় নতুন করে পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে তাদের।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভিআই ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ পণ্য বিশ্লেষক উইল সানচিল ইয়ুন বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় পরিবর্তিত জ্বলানি তেলের চাহিদা বিবেচনা করে দেখতে হবে দেশগুলোকে। কারণ বর্তমানে জ্বলানি তেল উৎপাদনে একটি বড় সংশোধনী আনতে হবে তাদের।
তবে এর ফল হিসেবে বলা যায়, বর্তমানে তেল ব্যবহারের ফলে রিজার্ভ দীর্ঘ পরিসরে বাড়বে। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, সুয়েজ খাল বন্ধ হওয়াটা একটি সাময়িক ব্যাপার। শিগগিরই এর সমাধান হয়ে যাবে।
মূলত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলো থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ট্যাংকার পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে সুয়েজ খাল ব্যবহার হয়ে আসছে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে জ্বালানি তেল পরিবহনে এর ব্যবহার হয়।
এছাড়া উত্তর সাগর থেকে এশিয়ায় কার্গো স্থানান্তরেও রুটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার চারশ’ মিটার লম্বা কনটেইনার জাহাজ ইভার গিভেন সুয়েজ খালের মুখে আটকে যায়। এতে ১০ শতাংশ সামুদ্রিক তেল বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর ব্লুমবার্গ, রয়টার্স।