1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

জুড়ীতে ২৮ বছর দায়িত্ব পালন করে অশ্রুশিক্ত নয়নে বিদায় নিলেন মুয়াজ্জিন

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৭৬ বার পঠিত

জুড়ী প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ জুড়ী জামে মসজিদ। মসজিদটি জুড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্র পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত। মসজিদটিতে সানী ইমামের পাশাপাশি মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ ২৮ বছরের অধিক সময় হাফেজ আব্দুল মতিন।

তার সুরেলা কণ্ঠের আজানের ধ্বনি উপজেলার প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ছিল পরিচিত। দীর্ঘ বছর দায়িত্ব পালন করে ইমামতি পেশা থেকে অশ্রুশিক্ত নয়নে বিদায় নিয়েছেন তিনি। তার বিদায়ে মসজিদ কমিটি এবং মুসল্লিগণ আপ্লুত হয়ে পড়েন।মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের জুন মাসে সানী ইমামের পাশাপাশি মোয়াজ্জিন হিসেবে যোগ দেন হাফেজ আব্দুল মতিন। ওনার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। মাত্র ৩০ বছর বয়সে এই মসজিদে আসেন তিনি। এরপর দেখতে দেখতে ২৮ বছর ৫ মাস দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি হার্ট সমস্যা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভূগছেন। যার জন্য পরিবার থেকে চাপ আসছে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির। বিষয়টি নিয়ে মসজিদ কমিটির সাথে আলোচনা করে গত শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) বিদায় নেন তিনি।হাফেজ আব্দুল মতিনের ২ ছেলে ও মেয়ে রয়েছেন। বড় ছেলে হাফেজ এবং মাওলানা। জুড়ী উপজেলার একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। ছোট ছেলে হাফিজি মাদরাসায় হিফজ বিভাগে পড়ালেখায় আছে। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদীস শেষ করেছে। ছোট মেয়ে বর্তমানে অধ্যায়নরত রয়েছে।ওসমান গণী নামের একজন মুসল্লী বলেন, আমার জন্মের আগে হুযুর মসজিদে এসেছিলেন। আমরা ওনার কাছে মক্তবে পড়ালেখা করেছি। আমাদের বড় ভাই-বোন সবাই ওনার কাছে পড়েছি। হুযুরের অসুস্থতার কারণে চলে যাচ্ছেন কিন্তু কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ওনি অসুস্থ না হলে আরও এখানে থাকতেন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ হুযুরকে সুস্থ রাখুন, দীর্ঘ হায়াত দান করুন।তিনি বলেন, আমাদের এখানে হুযুর দীর্ঘদিন ছিলেন। আমরা চাইবো হুযুর সুযোগ পেলে আমাদের এখানে বেড়াতে আসবেন। হুযুরের কোন সমস্যা হলে আমার জনাতে পারলে সমস্যা সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ আব্দুল মতিন বলেন, আমার বর্তমান বয়স ৫৮ বছর। দীর্ঘদিন থেকে আমি ডায়াবেটিস, হার্ট ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। পরিবার থেকে বলা হচ্ছিল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির জন্য। কারণ এখানে আমাকে বেশ কিছু রোগের নিয়মতি ঔষধ সেবন করতে হয়। যা মসজিদের দায়িত্ব পালন করে করা কঠিন হয়ে যায়। বিষয়টি পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা নজরুল ইসলামের সাথে আলোচনা করে কমিটির সাথে কথা বলে বিদায় সিদ্ধান্ত নেই।তিনি বলেন, জুড়ীতে যখন প্রথম আসি তখন এতো কিছু ছিলনা এই মসজিদে। ধীরে ধীরে সবকিছুর পরিবর্তন হলো। আমিও যৌবন পেরোলাম। এখানের মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলাম। কত কিছু হয়েছে, কত মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মক্তব্যের অনেক ছাত্র দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। জুড়ীর মানুষগুলোর সাথে আত্নার বন্ধন তৈরি হয়েছে। শেষ সময়ে এসে অসুস্থতার জন্য এখান থেকে চলে যাচ্ছি। কিন্তু মনটা পড়ে থাকবে এই উপজেলায়, এই মসজিদে। এখান থেকে চলে যাচ্ছি এটা মনে আসলেই চোখে পানি চলে আসে। আহ কত স্মৃতি।

মসজিদের বর্তমান সানি ইমাম ও মুয়াজ্জিন কারী বিলাল আহমেদ বলেন, আমি হুজুরের সাথে সময় কাটিয়েছি ৭ মাস। এতোদিনের চলাফেরায় আমি হুজুরকে যথেষ্ট কাছে থেকে দেখেছি, তিনি খুব অমায়িক একজন মানুষ। আল্লাহ তিনার বাকি জীবন সুস্থ স্বাভাবিকভাবে যেন কাটান।

মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, এই মসজিদে আমারও দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। আমি যখন এই মসজিদে জয়েন করলাম তখন মসজিদে মোয়াজ্জিন নেই। একদিন কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর গিয়েছিলাম। তখন আমার দেখা হয় মোয়াজ্জিন সাহেবের সাথে। তিনি তখন সেখানে একটি মসজিদে আজান দেন। আমি তখন ওনাকে জুড়ীতে নিয়ে আসি। তিনি মসজিদে আজান দিলে ওনার আজান শুনে সবাই রাজি হন। আমারও তখন যৌবনকাল। দু’জন মিলে আমরা দীর্ঘদিন একসাথে ছিলাম। সুন্দর ভাবে চলাচল করেছি। আমি নিজে এই মসজিদে ৩৭ বছর ধরে ইমামতি করছি। শারিরীক অসুস্থতার কারণে ওনি বিদায় চাইছেন। ওনার জন্য আমরা দোয়া করি এবং ওনিও আমাদের জন্য দোয়া করবেন যাতে আমার সবাই ভালো থাকতে পারি। ভালো হয়ে চলতে পারি।মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক রুশমতে আলম বলেন, ওনি দীর্ঘদিন আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওনি একজন ভালো মনের মানুষ। অনেকদিন ধরে অসুস্থ। নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হয়। নিজ ইচ্ছায় অবসরে যাওয়ার কথা বললে আমারও ওনাকে বিদায় দিতে রাজি হই। গত শুক্রবার আমরা ওনাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেই।তিনি বলেন, আমরা বিদায়কালে ওনাকে নগদ ১ লক্ষাধীক টাকা, পাঞ্জাবি-পায়জামা, লুঙ্গি, জায়নামাজ ও টুপি হাদিয়া হিসেবে প্রদান করি। আমরা দোয়া করি আল্লাহ ওনার খেদমতকে কবুল করুন।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..