সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
কিছুদিন পর ঈদ । সেই উপলক্ষে জসীম মিয়া তার সন্তান, স্ত্রীর জন্য কত কিছুই না কিনেছে কিন্তু শুধু তার মায়ের জন্য কিছু কিনেনি। কারণ তার মা আজ তার কাছে বোঝা। যে মা জন্ম দিয়েছে সময়ের ব্যবধানে আজ সে উপেক্ষিত, অবহেলিত। তারা মধ্যবিত্ত হলেও সুখের অভাব নেই। জমি-জমা, পুকুরের মাছ, গবাদিপশু সবতেই ভরপুর। তাদের ছোট্ট সংসাই জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। গ্রামের এক বাড়িতে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে তার বসবাস।
‘ আম্মা আপনে তো জানেন! আপনের পোলার ব্যবসায় লোকসান হইছে। এই মাসে আপনের পোলার টাকা-পয়সা নইয়া টানাটানি। এই ঈদে আপনের লাইগা কিছু কিনতে পারে নাই।’
‘ লাগবো না বৌমা। এহনও মোর মেলা জামা-কাপড় পইরা আছে। ‘
এই কথা শুনে জসীমের বউ খুশিতে গদগদ। হঠাৎ করে জসীমের ছোট মেয়ে কুসুম বলে উঠে,
‘আমারগো তো মেলা জামা-কাপড় আছে। হেরপরেই তো আব্বা আবারও কিন্না দিছে। তয় দাদি লাইগা কিনলো না কির লাইজ্ঞা??
‘মুখ বন্ধ কর, আজকাল তোর মুখ বেশি চলে। ঘরে যা তুই।’
মায়ের ধমক খেয়ে কুসুম ঘরে চলে যায়। জসীমের বউসহ অন্যরাও ঘরে চলে যায়।
থেকে যায় শুধু জসীমের মা। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা নোনাজল। ভাবতে থাকে অতীতের দিনগুলোর কথা, সে এক সময় এই বাড়ির কর্ত্রী ছিলো কিন্তু তার স্বামি মারা যাওয়ার পর সবার কাছে সে সবার কাছে বোঝা হয়ে উঠছে।
বাড়ির ছোট্ট এক ঘরে তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, যে ঘরে আলো বাতাস প্রবেশের কোনো পথ নেই। ভালো করে খেতে দেয় না। তেমন কেউ দেখাও করে না, একাকিত্বে দিন কাটে তার। তবুও পড়ে আছে এখানে, তার যে আর যাওয়ার জায়গা নেই।
হঠাৎ করে আজ তার শাশুড়ির কথা মনে পড়ছে।
কতই না অবহেলা করেছিলো। অযত্নে, অবহেলায় একদিন তার শাশুড়ি মারা যায়। যখন জানতে পারলো তার শাশুড়ি আর নেই, নিজের অজান্তেই কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে। তারপর থেকেই মাঝে মধ্যে শাশুড়ির কথা মনে পড়ে। এখন সে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছে। হয়তো সে চলে গেলে তার পুত্র-পুত্রবধুর চোখ থেকেও বেদনার জল গড়িয়ে পড়বে।