1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ডালিয়া ফুলের চাষ ঃ লাভজনক ব্যবসা

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২
  • ৩৭২ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:
এক সময় শখের বাগান সাজাতে এসেছিল ডালিয়া এখন আর সে অবস্থায় নয়। নিয়েছে ব্যাপক ব্যবসার রূপ। এখন আমাদের দেশে ব্যাপক হারে ডালিয়ার চাষাবাদ হয়। ডালিয়া মূলত বিদেশি ফুল তবে বর্তমানে আমাদের আঙ্গিনায় চাষাবাদ হয়ে থাকে ডালিয়ার। ডালিয়া শক্ত ফুল হওয়ার জন্য পরিবহনের ঝামেলা সহ্য করার শক্তি প্রচুর। একই সঙ্গে বেশ কিছুদিন থাকে তরতাজা। আজকের এ আলোচনাটি ডালিয়া ফুল চাষ নিয়েই।
ডালিয়ার জাত নির্বাচন ঃ ডালিয়া মূলত তিন প্রকার হয় যেমন – (১) ডেকরেটিভ, (২) ক্যাকটাস, (৩) পপন। পাঁপড়ি গড়ন বা আকৃতি অনুযায়ী এ তিনটি জাতকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ডেকরেটিভ ঃ ফর্মাল ডেকরেটিভ ও ইনফর্মাল ডেকরেটিভ। ক্রয়ডন মনার্ক জয়েন্ট ফর্মাল ডেকরেটিভ ও ক্রয়ডন মাস্টার পিস জয়েন্ট ইনফর্মাল ডেকরেটিভ ডালিয়ার উদাহরণ। আর্থার হাম্বলিঞ্চ মার্জ ডেকরেটিভ জাতীয় ডালিয়া। এ ফুলের ব্যাস হয় ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি। ভিক্ষুস মাদার এটা মিডিয়াম ডেকরেটিভ ডালিয়া। এ ফুলের ব্যাস হয় ৬-৮ ইঞ্চি। স^ামী লোকেশ্বরানন্দ স্মল ডেকরেটিভ ডালিয়া ও ৪ ইঞ্চি ব্যাসের হয়।
ক্যাকটস ঃ এটাকে ক্যাকটস ও সেমি ক্যাকটস রূপেই ভাগ করা হয়। আর্ট লিঙ্ক লেটারঞ্চসেমি ক্যাকটাস। ড্রেকেনবার্গ লার্জ ইনকার্ভড ক্যাকটাস। জুয়ানিতা মিডিয়াম স্টেত্থট ক্যাকটাস। চিয়াচি ও স্মল সেমি জাতীয় ক্যাকটাস।
পপন ঃ এ প্রকার ডালিয়া ফুলের আকার সাধারণত ২ ইঞ্চি ব্যাসের হয়। ফুলের গড়ন হবে গোল আর পাঁপড়ির গড়ন মৌচাকের খোপের মতো। ভাল জাতের কিছু ডালিয়া হল- কোলারেট, ডাবল শো-অ্যান্ড ফ্যানসি, ডোয়ার্ফ বেডিং, এনিমোন ফ্লাওয়ারর্ড ডালিয়া প্রভৃতি। এটা ছাড়া ফুলের আগের দিকটা লম্বাভাবে সুন্দর করে কাটা- লেস মেকারঞ্চ ও টেরিদুই ভালো জাতের ডালিয়া।
মাটি নির্বাচন ও প্রস্তুতিকরণ ঃ ডালিয়া চাষের জন্য সারাদিন রোদ পড়ে বা অধিকাংশ সময় রোদ থাকে এরকম জায়গাতেই ডালিয়ার চাষ ভাল হয়ে থাকে। ডালিয়া রোপণের জন্য গর্ত করতে হবে ২৪*৩৬ ইঞ্চি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে মাঝে মধ্যে পরিচর্যার সময় চলাফেরা করতে সুবিধা হয়। এবার গর্ত করতে হবে ৪৫ সেঃ মিটারের মতো গভীর। গর্তের মাটি গুলো ঝুর-ঝুরে করে ভাল করে অন্য গাছের শেকড় বেছে নিতে হবে। গর্ত করতে গিয়ে দুটি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ঃ-
(১) যদি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডালিয়া চাষ করেন তবে চারা গাছ লাগানোর সমস্ত জমিটা হবে আশে পাশের জমি থেকে উঁচু। আর যদি (২) নভেম্বর মাসে চারা লাগান তবে জমিটা আশপাশের জমি থেকে একটু নিচু থাকা প্রয়োজন।
গর্ত প্রস্তুত এবং সার প্রয়োগ ঃ ২৪ ৩৬ ইঞ্চি লম্বা গর্তের মাটিতে ১০ সেঃ মি পুরু করে গর্তের গুঁড়ো করা মাটির সঙ্গে গোবর সার বিছিয়ে দিতে হবে। এর পর মাটিতে ১৫০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়ো বা ৭০ গ্রাম ভার্মিক¤েপাস্ট সার, ৭৫ গ্রাম সুপার ফসফেট এবং ৩০ গ্রাম সালফেট অব পটাশ মেশাতে হবে। ওই গর্তে প্রয়োজন হবে ১২০ গ্রাম চ‚ণের। কচি গাছ লাগানোর ১৫ দিন পরে ডাই এমোনিয়াম এবং এর ১৫ দিন পরে আবার এ ডাই এমোনিয়াম ফসফেট দিতে হবে ১০ গ্রাম।
ডালিয়া গাছে যখন কুঁড়ি আসবে তখন মিশ্র সার প্রয়োগ করতে হবে। মিশ্র সার প্রস্তুত করতে হলে-২ ভাগ সুপার ফসফেট, ১ ভাগ সালফেট অব পটাশকে মিশ্রিত করতে হবে। এ সার প্রয়োগ করতে হলে প্রথমে গাছের চারদিকে ৫ সেঃ মি গভীর রিং আকারে নালা করে সার ছিটিয়ে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। গাছ যখন কিছুটা কুঁড়ি দিতে শুরু করবে তখন সপ্তাহে দুবার তরল সার প্রয়োগ করতে হবে। এ তরল সার তৈরি করতে হবে গোবর এবং খোল সমপরিমাণে পচিয়ে।
কাটিং বা কচি চারা প্রস্তুত ঃ সাধারণত ডালিয়ার কাটিং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কাটিং বসানো যায়। কাটিং বসাতে হবে খুব সকাল বেলা কিংবা গোধূলি বেলা। কাটিং-এর জন্য ব্যবহার করতে হবে ১০ সেঃ মি লম্বা কচি ডালকেই। একটি কথা জেনে রাখা দরকার কাটিং করেই সেটা বসাবার মাটিতে পুতে দিতে হবে। কাটিং কাটতে হবে গাঠের ১০ মিলিমিটার ওপরে। কাটিং-এর জন্য গাঁটের আশপাশের ডালগুলোকেও ব্যবহার করা যায়। কাটি কেটে তাতে সেরাডিক্স বি ওয়ান লাগিয়ে দিতে হয়। বসিয়ে রাখা কাটিং থেকে ১৫ দিনের পরই পাখির নখের মতো তিন চারটি শিকড় এলে সে কাটিং হাল্কা হাতে উঠিয়ে ৭ সেমি ব্যাসের টবে প্রথমে বসাতে হবে। এভাবে কিছুদিন পর্যন্ত কাটিং গুলোকে ধীরে ধীরে বেশি রোদ খাইয়ে প্রস্তুত করা মাটিতেই চারা লাগাতে হয়।
ডালিয়ার মাধ্যমিক পরিচর্যা ঃ ডালিয়ার মাধ্যমিক পরিচর্যা হিসেবে একটু সচেষ্ট ও যতœবান হলেই হয়। ভাল ফুল পেতে হলে সাধারণ ভাবে গাছ গুলোর কেবল মাঝারে বড় কুঁড়িটিকেই রেখে বাকি সব কুঁড়ি ভেঙ্গে দিতে হয়। প¤পন ডালিয়ার বেলায় কুঁড়ি ভাঙ্গার কোনও প্রয়োজন নেই। বেশি ফুটানোর বেলায় ফুল ফুটার মাঝের সময় কুঁড়ি ভেঙ্গে দিতে হয়। গাছ যখন ২৫ সেঃমি বড় হবে তখন গাছটির মাথা নখ দিয়ে খুঁটে দেওয়া ভাল। এভাবে করলেই ডাল ছাড়তে আরম্ভ করবে। তখন মাত্র ৪টি ভালো ডাল রেখে বাকিগুলো ছেঁটে দিতে হয়। কিছুদিনের মধ্যে ৪টি ডাল থেকে ৪টি ফুল হবে। ফুল তুলে নেবার পর এ চারটি ভাল ডালের নিচের থেকে গজালে আরও চারটে ডাল বেরোবে এবং যথাসময়ে একই ভাবে ফুল ফুটবে। আর সার প্রয়োগ করতে হবে প্রথম বারের ফুল তোলার পরই।
পানিসেচ ঃ ডালিয়া গাছে যথাসময়ে পানি সেচন করতে হয়। পানির পরিমাণ বেশি করে দিতে হবে যাতে জমি ভাসিয়ে যায়। পানি সেচ একই ভাবে করতে হবে ৭ দিনের মাথায় একবার। লক্ষ্য রাখতে হবে, ডালিয়া যখন ফুল দেবে তখন মাটি থাকতে হবে ভেজা।
রোগ পোকা দমন ঃ সাধারণ ভাবে ডালিয়াতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। তেমনি পোকা মাকড়ের আক্রমণ বা ফলিডল এবং পাউডারি মিলডিউ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে মোরেস্টান প্রয়োগ করতে হবে।
কাটিং-এর জন্য ডালিয়া সংরক্ষণ ঃ শুধু চাষাবাদ করলেই তো চলবে না আগামী বছরের জন্য সংরক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণভাবে আগামী মরশুমের জন্য সংরক্ষণের জন্য (১) লেট কাটিং, (২) গোড়ায় বালক্ষ বা কম্বজ মূল হয়েছে এমন গাছ বাঁচিয়ে রাখা (৩) শুধু বালক্ষ বা কম্বজ মূল তুলে রাখা। এ গুলোর মধ্যে লেট কাটিং করে বাঁচিয়ে রাখাটাই উত্তম। আর বালক্ষ করে রাখলে ভিজে আবহাওয়ায় পাতা বেরিয়ে যায়। লেট কাটিং করতে হলে ডিসেম্বর/জানুয়ারী থেকেই গাছকে কাটিং করে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। গাছ যখন ফুল ধরা বন্ধ করবে তখন তাকে সযতেœ মাটি সহকারে টবে তুলে রাখতে হবে। আবার যথাসময়ে পানি দিতে হবে তবে গাছ মারা গেলে পানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
পুনরায় যখন ডালিয়া গাছের কাটিং পেতে হয় তখন টবে রাখা গাছ কিংবা বালক্ষ থেকে বেরুনো গাছ মাঝখান থেকে কেটে ফেলতে হবে। এরপর গাছ যে নতুন ডাল ছাড়বে তা থেকেই তৈরি হবে নতুন বছরের কাটিং। বর্তমানে বাংলাদেশে ডালিয়ার চাহিদা প্রচুর তাই বেকার যুবক-যুবতীদের ফুল বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে কচি গাছ বিক্রি করেও বেশ টাকা কামাতে পারেন।
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম স^র্ণ পদক) প্রাপ্ত।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..