1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

করাচি থেকে আসা জাহাজটির কন্টেইনারে যা যা আছে

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৯৫ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট  : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের করাচি থেকে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ সরাসরি এসে ভিড়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের ওই জাহাজটি গত ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ভিড়েছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পণ্য খালাস হয়ে গেলে পরদিনই জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করেছে।

জানা গেছে, ‘দুবাই টু চট্টগ্রাম’ রুট ধরে আসা জাহাজটির পরবর্তী গন্তব্য ইন্দোনেশিয়া। নতুন এই সার্ভিসটি চালু করেছে দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রশ্ন হলো, এত বছর পর বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে কন্টেইনারবাহী জাহাজ কেন এল? কেন-ই বা এটি এত তাৎপর্যপূর্ণ? ওই কন্টেইনারগুলোতে কী আনা হয়েছে, তা নিয়েও মানুষের কৌতূহল কম না।

পাকিস্তান বাংলাদেশের বাণিজ্য
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বহু বছর দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য হতো না। পরে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপিত হলেও পাকিস্তান থেকে সাধারণত সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে আসতো না। ওই দেশের পণ্যবাহী জাহাজ প্রথমে শ্রীলঙ্কায় কন্টেইনার খালাস করতো। এরপর জাহাজ বদল করে সেসব কন্টেইনার বাংলাদেশে আসতো।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দুই দেশের মাঝে শীতল সম্পর্ক ছিল।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানের সাথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সীমিত হতে থাকে। তখন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্য ‘লাল তালিকাযুক্ত’ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের অনুরোধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর লাল তালিকা থেকে মুক্ত হয়েছে দেশটির সব ধরনের পণ্য। শুরু এক্ষেত্রেই না, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে আরো অনেক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘে অধ্যাপক ইউনুস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের মধ্যে বৈঠকের ঘোষণায়ও উল্লেখ করা হয় যে দুই দেশই বিভিন্ন স্তরে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করেছে। এসবের মাঝে নতুন করে এই জাহাজ ভেড়ানোর খবর দুই দেশের সম্পর্কের উষ্ণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাংলাদেশে পাকিস্তান হাই কমিশনও গত বুধবার তাদের ভেরিফায়েড এক্স (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডেলে এটিকে ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ’ হিসাবে সঙ্গায়িত করেছে।

ওই টুইটে তারা বলেছে, এই ‘নতুন রুট সরবরাহ ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মাঝে আনবে, ট্রানজিট সময় কমিয়ে দেবে এবং উভয় দেশের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ খুলে দেবে।’

যদিও সামাজিক মাধ্যমে ‘পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে’ আসা বলে ব্যাপক আলোচনা হলেও আসলে জাহাজটি দুবাই থেকে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার পথে করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার লোড বা আনলোড করেছে।

জাহাজটিতে করে কী আনা হয়েছে

পাকিস্তান থেকে কন্টেইনারবাহী একটি জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশে আসার খবর প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ’আমাদের কাছে ৩৭০টি কন্টেইনার এসেছে। সেগুলোর মাঝে কী আছে, তা কাস্টমস বলতে পারবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ’ফ্রেবিকস, চুনাপাথর, সোডা অ্যাশ, পেঁয়াজ, ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট, ডলোমাইট আছে।’

এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। এর মধ্যে ১১৫ কন্টেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬টি কন্টেইনারে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কন্টেইনারগুলোর মধ্যে বেশিরভাই টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল। এর মধ্যে আরো আছে কাঁচ শিল্পের কাঁচামাল, গাড়ির যন্ত্রাংশ, রং, কাঁচামাল কাপড়। ৪২টি কন্টেইনারে রয়েছে পেঁয়াজ। ১৪টি কন্টেইনারে রয়েছে আলু।

এসব পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশের আজিক গ্লাস কারখানা, প্যাসিফিক জিনস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, নাসির গ্লাস, এক্স সিরামিকস, হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান।

মোহাম্মদ সাইদুর রহমান জানান, সবগুলো কন্টেইনার করাচি থেকে জাহাজে লোড হয়নি। কিছু কন্টেইনার দুবাই থেকে জাহাজটিতে লোড করে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। পাকিস্তান থেকে জাহাজে লোড হয়েছে ২৯৭টি কন্টেইনার, বাকিগুলো লোড হয়েছে দুবাই থেকে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে খেজুর, মার্বেল ক্লক, কপার ওয়্যার, জিপসাম, লোহার টুকরো। একটি কন্টেইনারে অ্যালকোহল জাতীয় পণ্যও রয়েছে।

সাধারণত বড় কন্টেইনার বহনকারী জাহাজগুলোতে বিভিন্ন বন্দর থেকে মালামাল নামানো বা তোলা হয়ে থাকে। ফলে একটি জাহাজে বিভিন্ন দেশের বন্দর থেকে যেমন কন্টেইনার তোলা হয়। তেমনি বিভিন্ন দেশের বন্দর থেকে আপলোড করা কন্টেইনার তারা নির্দিষ্ট কোনো বন্দরে নামিয়ে দিতে পারে।

এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত একটি বড় কন্টেইনারবাহী জাহাজে অন্তত ৭০০ থেকে একহাজার কন্টেইনার বহন করে থাকে। ফলে কোনো দেশের সাথে আরেকটি দেশের বড় আকারের বাণিজ্য না হলে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল করে না।

এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো বন্দরে জাহাজ বদল করে অথবা অন্য আরো দেশের পণ্যের সাথে জাহাজে কন্টেইনার পরিবহন করা হয়ে থাকে।

যেমন এখন চীন থেকে সরাসরি কন্টেইনার নিয়ে বাংলাদেশে জাহাজ আসে। জাপান থেকেও কখনো কখনো জাহাজ আসে। কয়েক বছর আগে ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকেও মালামাল নিয়ে জাহাজ ভিড়তো। এর বাইরে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল বা গ্যাস নিয়ে জাহাজ সরাসরি আসে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলছেন, পাকিস্তান থেকে খোলাভাবে পণ্য আগেও আসতো, এখনও আসে। সেগুলো তৃতীয় দেশের বন্দরে নামানোর পর জাহাজ বদল করে বাংলাদেশে আসে। কিন্তু পাকিস্তান থেকে সরাসরি ‘কন্টেইনারে করে এই প্রথম এসেছে। এগুলো সিলড উইথ কার্গো, মানে এগুলো মালপত্র বোঝাই।’

তিনিও বলেন যে কন্টেইনারে কী আছে, তা কেবল এজেন্ট এবং কাস্টমস জানবে। তবে তিনি এও জানান, ‘কন্টেইনারে সাধারণত ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি থেকে শুরু করে ইকুইপমেন্ট, সব আসে। এখানে কোনো রেস্ট্রিকশনস নাই। শুধু কন্টেইনারের সাইজে রেস্ট্রিকশনস আছে।’

জানা গেছে, এই পণ্যবাহী জাহাজটি সরাসরি পাকিস্তানের করাচি থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আসেনি। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে প্রথমে করাচি গিয়েছিল। তারপর তা বাংলাদেশে এসেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ‘দুবাই থেকে চট্টগ্রাম, এই সার্ভিস আমাদের আগে থেকেই আছে। এবার আসার সময় তারা করাচি বন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসছে। স্বাধীনতার পরে সরাসরি এভাবে কোনো জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে কিনা, তা জানি না। আমার জানা মতে, এইবার সরাসরি এসেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য আগে থেকেই ছিল। আগে পাকিস্তান থেকে যে কন্টেইনার আসতো, তার কিছু আসতো সিঙ্গাপুর হয়ে, কিছু আসতো কলম্বো হয়ে।’

করাচি থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় দুই হাজার ৬১২ নটিক্যাল মাইল। কিন্তু একটি জাহাজে যত কন্টেইনার বহন করা হয়, তত কন্টেইনার করাচি থেকে বাংলাদেশে আসে না। ফলে নতুন সেবা চালু করা প্রতিষ্ঠান দুবাইভিত্তিক কন্টেইনার বহনকারী কোম্পানি আরো কয়েকটি দেশের বন্দরকে এর সাথে যুক্ত করেছে।

এসব জাহাজ দুবাই থেকে পাকিস্তানের করাচি হয়ে, ভারতের মুন্দ্র হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। আবার এখান থেকে মালয়েশিয়ার কেলাং এবং ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ানে চলে যাবে। এর ফলে আগে তৃতীয় দেশ হয়ে পণ্য আনা-নেয়ায় যে বাড়তি খরচ হতো ও অতিরিক্ত সময় লাগতো, সেটা আর লাগবে না।

সরাসরি পণ্য আসলে কী হবে

পাকিস্তানের সাথে ব্যবসায়িক কারণে জড়িত, এমন কয়েকজন বাংলাদেশীর সাথে কথা বলেছে বিবিসি উর্দু। তারা পোশাক, ফাইবার, গয়না, এমনকি প্রসাধানীও আমদানি-রফতানি করেন।

তেমনই একজন হলেন সৌম্য সামু। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ ছিল না। এটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের একটি বড় সমস্যা ছিল। পণ্য আমদানি বা রফতানি করার ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যেত এবং আরেকটি বড় সমস্যা ছিল সময়।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে পণ্য পাঠাতে বা পাকিস্তান থেকে পণ্য আনতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগতো। কখনো কখনো এমনও হতো যে সময় মতো পণ্য পৌঁছাতে পারতো না। যেমন কোনো এক ঈদের সময় পাকিস্তান থেকে অর্ডার করা পণ্য সময় মতো আসেনি।’

এখন এই পণ্যবাহী জাহাজের মাধ্যমে পণ্য ১০ দিনের মাঝে বাংলাদেশে পৌঁছে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘যদি এইভাবে সামুদ্রিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়, তাহলে আমি পাকিস্তান থেকে আরো পণ্য অর্ডার করব। আমি আমার পাকিস্তানি ব্যবসায়ী বন্ধুদেরও জানিয়েছি।’

বাংলাদেশের গার্মেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ী সৈয়দ নবীদ শাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের পাকিস্তানের অনেক পণ্যের প্রয়োজন হয়। এই পণ্যগুলো আগে অন্য রুট দিয়ে আসতো। সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ না থাকায় পাকিস্তান থেকে পণ্য আসতে সময় লাগতো। এতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হতো। এখন করাচি থেকে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যেই পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে।’

ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরীও বলেন, ‘এভাবে পণ্য আসাটা বাংলাদেশের জন্য ভালো। এখানে খারাপ কিছু নেই। আমরা যদি সস্তায় মালামাল পাই, তাহলে তো ভালোই। যেকোনো দেশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হলে সবচেয়ে সস্তা প্রক্রিয়া। অন্য দেশ হয়ে এলে সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরো কয়েকটি বন্দর ঘোরা মানে প্রতিদিনের জন্য টাকা গোণা।’

সরাসরি জাহাজ চললে সময় কম লাগবে এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহজ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পাকিস্তানের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ১৭ হাজার কন্টেইনার এসেছে। আর এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১৬ হাজার কন্টেইনার পাঠানো হয়েছে। তবে এই আমদানি-রফতানি সরাসরি না হয়ে শ্রীলঙ্কা বা দুবাইয়ের মাধ্যমে চলছিল।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..