রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:১১ অপরাহ্ন
আকরামুল রাজ্জাক চৌধুরী :: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাকে শস্যভা-ার বলা হলেও ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির পর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানে রয়েছেন কৃষক। দাম না পেয়ে কেউ গরুকে খাওয়াচ্ছেন সবজি আবার কারো জমিতেই নষ্ট হচ্ছে সবজি। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। ক্রেতারা একপ্রকার ‘পানির দরে’ কিনে সবজির স্বাদ নিতে পারছেন ঠিকই, কিন্তু এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন উৎপাদনকারী কৃষকরা। ফসলের কাঙ্গিত দাম না পেয়ে তাদের এখন মাথায় হাত।
সরেজমিন দেখা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পারুয়াবিল কৃষকরা লাউ, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, শসা ও মরিচসহ শীতকালীন সবজি আবাদ করছেন। স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ার আশা নিয়ে রোপণ করা শীতের সবজি এখন লোকসানে ফেলেছেন কৃষকদের। ফলে বাধ্য হয়ে এসব সবজি গরুকে খাওয়াচ্ছেন অথবা জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
কমলগঞ্জ আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবেই কৃষক। প্রতিবছরই চাষাবাদ করি। এবারের মত ধরা আগে কখনো খায়নি। তিনি বলেন, গত বছর আড়াই কিয়ার (৭৫ শতক) জায়গার মাঝে লাউ চাষ করে ১০ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। এবছর আমার এই জায়গায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রি করেছি ১ লক্ষ টাকার মতো। খেতে আরও লক্ষ টাকার লাউ আছে। কিন্তু এই লাভে কিভাবে চলবো। তাছাড়া একটি লাউ বাজারে বিক্রি করতে গেলে ২৫-৫০ টাকা দাম পাই না কিন্তু কিনতে গেলে ৭০-৮০ টাকার নিচে কেনা যায় না। লাউয়ের দাম এত কম যে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। আবার লাউ খেলে গরুর ঠান্ডা লেগে যায়। তাই জমিতেই লাউ সহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হচ্ছে।’
এই ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের মুকেত মিয়া নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘প্রতি বছর শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে, দামও ভালো পেতাম। লাভের আশায় চলতি মৌসুমে অনেকেই সবজি চাষাবাদ করেছে। কিন্তু এ বছর নানান জাতের সবজিতে বাজার ভরে যাওয়ায় উৎপাদন ভালো হলেও মুনাফার অঙ্ক শূন্যের ঘরে। ভয়াবহ বন্যার কারণে আমাদের গতবারের ফলন খারাপ হয়েছে। এবার বাজারে দাম কম পাওয়ায় আমাদের সবজি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।’
উত্তরবাগ গ্রামের ফটিক মিয়া নামের এক কৃষক ও পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা সবাই কৃষক। আমাদের কৃষি পণ্য সারাদেশে যায়। কিন্তু প্রতিদিন আমাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছি। আমরা মিষ্টি লাউ আড়তে বিক্রি করতে গেলে ৩০-৬০ টাকার বেশি দাম পাই না। আমরা চাই কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাক। সরকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। সার ও কীটনাশকের দামও হু হু করে বাড়তেসে। আমাদের মরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।’
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার চনর মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারে দাম নেই, পাইকারি ব্যবসায়ীরাও আসছে না। তাই জমিতে নষ্ট হচ্ছে সবজি। এসব সবজি বিক্রি করে আমাদের পরিবহন ও শ্রমিক খরচও উঠছে না। বিশেষ করে ঋণ নিয়ে সবজি আবাদকারী কৃষকরা বেশি হতাশ হয়ে পড়েছেন।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়েন্ত কুমার রায় বলেন, ‘কমলগঞ্জে এবছর ১৭০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার মাধবপুর, আদমপুর, রানীবাজার, ইসলামপুর এলাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়া মার্কেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেব যেন তারা ন্যায্যমূল্য পায় এবং ভোক্তাদেরও ক্ষতি না হয়।’