1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১ মে, ২০২১
  • ২৬২ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী

একজন পাপীষ্ঠ নরাধম যদি তার কৃত পাপের জন্য জীবনের কোনও শুভক্ষণে অনুতপ্ত হয়ে পূণ্যের আকাঙ্খী হয় তবে কী সুযোগ রয়েছে প্রায়শ্চিত্তের? নাকি কৃতকর্মের জন্য সমুচিত শাস্তি অবশ্যম্ভাবী? এমনটি যদি হয়, তবে আখেরি জমানার স্বল্পায়ু উম্মতগণ কীভাবে জীবনে পাপস্খলন ঘটিয়ে পূণ্যের অধিকারী হবেন। পাপীদের মনের দ্বিধাদ্বন্ধ এবং মানসিক হতাশার অবসান ঘটিয়ে জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (স.) সে চৌদ্দশত বছর আগেই বলে গেছেন পাপ করলেও মানুষ পূণ্যের অধিকারী রয়েছে। তবে কিভাবে একজন মানুষ তার পর্বত প্রমাণ পাপ থেকে মুক্তি লাভ করবে? কারণ একটি পাপের মুক্তির জন্য কয়েক শ বছরের এবাদতই যথেষ্ট নয়। স্বল্প আয়ুস্কালের একজন মানুষের পক্ষে একটি পাপের মার্জনার্থে শতবছর উপাসনা করাও অসম্ভব। কারণ এত দীর্ঘকাল বেঁচে থাকা আখেরি জমানার উম্মতদের সাধ্যাতীত। কোনও একটি পাপের জন্য শত বছরের পার্থিব জীবনের উপাসনা অপ্রতুল। অথচ পারলৌকিক জীবনে পাপীদের কঠোর শাস্তি অবধারিত। এমতাবস্থায়ও ইসলাম তার অনুসারীদের নিরাশ করেনি। দোজাহানের প্রিয় নবী রাসূলেপাক (স.) শেষ জমানার উম্মতদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, সমস্ত জীবনের সমূহ গোনাহ মার্জনার জন্য একটি রজনীর এবাদতই যথেষ্ট। এজন্য শত সহ¯্র বছরের নিরবচ্ছিন্ন উপাসনার প্রয়োজন নেই। স্বয়ং আল্লাহ পাক উম্মতে মোহাম্মদীদের এ ধরনের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছেন যাতে স্বল্পায়ুর একজন মহাপাপীও তার পর্বত প্রমাণ পাপ একটি রাতের এবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে নিয়ে জীবনকে নিষ্পাপ করতে পারে। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে এ ধরনের সুবর্ণ সুযোগ সম্পন্ন দুটি রজনীই রয়েছে। একটি লাইলাতুল বরাত, অপরটি লাইলাতুল কদর। মাহাত্ম এবং মর্যাদার দিক দিয়ে এ দুই শ্রেষ্ঠ রাতের মধ্যে লাইলাতুল কদরের তাৎপর্য সর্বাধিক। কদরের পরেই বরাতের শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপিত। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা সর্বোত্তম রাত লাইলাতুল কদর উম্মতে মোহাম্মদীকে উপহার দিয়েছেন। যে রাতের মহানতা অন্যান্য সহস্র রাতের চেয়েও বেশি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক এ ফজিলতময় এবং তাৎপর্যশালী রজনীকে লাইলাতুল কদর নামে অভিহিত করেছেন। কুরআনেপাকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ রাতের মহিমা বর্ণনা করেছেন। বলেছেন-নিঃসন্দেহে এ রাত হাজার রাতের উত্তম রাত। এ রাতের মহানতা অপরিসীম।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরিফে বিস্তৃত আলোচনা করে বলা হয়েছে যে শবে-কদর এমন একটা পুণ্যময় রাত, যার মহিমা অন্যান্য সহ¯্র রাতের চেয়েও উত্তম। সে আল্লাহর সবচেয়ে স্নেহধন্য, যে শবে-কদরের সমগ্র রাত আরাধনায় নিমগ্ন থাকবে প্রতিপালকের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য, আর মানবজাতির মধ্যে সে অধিক সৌভাগ্যবান যার ভাগ্যে জুটেছে শবে-কদরের রাতে উপাসনা করার স–বর্ণ সুযোগ। অন্য হাজার মাস কঠোর ইবাদত করলে যে পরিমান পূন্য হাসিল হয় তার চেয়েও অধিক সওয়াব সঞ্চিত হয় কেউ যদি শবে-কদরের রাতের প্রতিটি মুহুর্ত অতিবাহিত করে এবাদতের মাধ্যমে।
যেহেতু শবে-কদরের একটি রাতের ফজিলত হাজার মাসের থেকেও উত্তম, তাই যে ব্যক্তি একটি রাত এবাদত করল আল্লাহর বিবেচনায় সে ব্যক্তি যেন সুদীর্ঘ এক হাজার বছর শুধু উপাসনা করে কাটালো যার সুবাদে অনায়াসে লাভ করল পরম করুনাময়ের নৈকট্য। সে সঙ্গে আমলনামায় সংযোজিত হল অসীম সওয়াব। পরকালের জন্য অবারিত হয়ে গেল বেহেস্তের দ্বার। তাই হযরত মোহাম্মদ (স.) বলেছেন- হে মানবজাতি, তোমাদের কৃত পাপের জন্য দয়াবান আল্লাহর কাছে আজ রাত কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থণা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের মার্জনা করবেন। কেননা শবে-কদরের রাতে করুনাময় খোদা তাঁর নিজ করুনা বলে পৃথিবীর সকল পাপী-তাপীর সমূহ গোনা মার্জনা করে থাকেন। এ মহিমাময় রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য অত্যন্ত মেহেরবান হয়ে উঠেন এবং বিশেষভাবে ক্ষমা প্রদর্শন করেন।
রমজান মাসকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে একেকটি ভাগের একেকটি পৃথক বৈশিষ্ট্য কুরআনে বর্ণনা করা হলেও শেষ দশদিন হচ্ছে সর্বাধিক মর্যাদাশালী এবং বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। কারণ এ দশদিনের মধ্যেই লুক্কায়িত রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর। এ রাতে ফেরেশতাগণের পক্ষ থেকে মুমিনদের প্রতি বর্ষিত হয় অজ¯্র সালাম ও মোবারকবাদ। শবে-কদর সহ¯্র মাসাপেক্ষা উত্তম, এ জন্যই এ রাতেই ইসলামের হƒদপিন্ড কুরআন শরীফ লৌহে মাহফুজ থেকে পৃথিবীর আকাশে অবতীর্ণ হয়। পরে এ মহাগ্রন্থ হযরত মোহাম্মদ (স.) এর মাধ্যমে পৌছেছে মাটির মানুষের কাছে। রমজানের শেষ দশদিনের মধ্যে নিহিত রয়েছে মহান শবে-কদরের ফজিলতময় রাত। তবে এ দিনগুলোর কোন রাত শবে-কদর তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, তোমরা এ দশদিনের মধ্যে মহিমাময় রাতকে অনুসন্ধান কর। তাই শবে-কদরের সঠিক রাত তারিখ নিয়ে মতান্তর রয়েছে। হযরত মোহাম্মদ (স.) -এর মতে, শেষ দশদিনের একটি বেজোড় তারিখেই রয়েছে শবে-কদরে রাত। বেজোড় তারিখগুলোর ২৭ রমজানেই শবে-কদর অতিবাহিত হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ২৭ রমজানের দিকে মতামতের ঝোঁক বেশি থাকায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা এ তারিখকে শবে-কদর বলে বিশ্বাস করেন। উলামায়ে কেরামদের পক্ষ থেকে মহিমান্বিত এ রাতের নির্দিষ্ট তারিখ অনুল্লেখিত থাকার পেছনে নানা কারণ বিভিন্ন যুক্তির সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে। শবে-কদর পাবার লোভে প্রত্যেক রাতের প্রতি যাতে সম্মান প্রদর্শন করে বিশেষ আগ্রহ সহকারে এবাদত বন্দেগি করা হয় তার জন্য শবে-কদরের সঠিক তারিখ স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়নি।
শবে-কদর লুক্কায়িত রাখার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এটাই। শ্রেষ্ঠ ঐশ্বীগ্রন্থ আল-কুরআনকে শবে-কদরের রাতেই নাজেল করা হয়েছে। তাই আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের নামানুসারে কুরআন মজিদের একটি সুরার নাম রয়েছে সরাতুল কদর এবং এতেই বিধৃত রয়েছে কদরের অপরিসীম মাহাত্মের কথা। এ সুরাতে কুরআন এবং পবিত্র এ রাত স¤পর্কে ঘোষনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- তোমরা কি জান, আমি কুরআনকে কদরের পবিত্র নিশিতে নাজেল করেছি। তাই এ রাতকে করেছি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর। এ রাত ফেরেস্তাকুল এবং হযরত জিব্রাইল আল্লাহতায়ালার অনুমতিক্রমে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। তাই রাতটি পুরোপুরি শান্তিময়। ভোর পর্যন্ত মাটির মানুষের উপর রহমতের বারি বর্ষণ করা হয়। ইচ্ছা করে থাকলে যে কোনও মানুষই এ রাতে পূণ্যস্নাত হতে পারে।
সৃষ্টিলোককে আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনা মাফিক পরিচালনা করেন। সে পরিকল্পনা বাস্তাবায়নের ক্ষেত্রে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে একটি দিনকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। সে সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী দিনকে লাইলাতুল কদর বলে অভিহিত করা হয়েছে, সৃষ্টিলোক পরিচালনার যাবতীয় সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত রূপ নেয় এ রাতে এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব আল্লাহ ফেরেস্তাদের উপর অর্পন করেন। আর আল্লাহতায়ালার সমস্ত সিদ্ধান্তকে কার্যক্ষেত্রে রূপায়িত করেন, তাই তারই সদা অনুগত ফেরেস্তারা।
কুরআন নাজেলের জন্য শবে-কদরের রাত হয়েছে মহিমামন্ডিত। এছাড়া আরও কিছু কারণ এ রাতের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন- এ রাতেই ফেরেস্তা সৃষ্টি করা হয়। এ রাতেই আদি পিতা হযরত আদমের সৃষ্টির মূল উপাদান সমূহ সংগ্রহ করা হয়। এরাতেই বেহেস্তে বৃক্ষরোপণ করা হয় এবং হযরত ঈসাকে আকাশে উত্তোলিত করা হয়। এ রাতেই বনী ই¯্রাইলের তওবা আল্লাহতায়ালা কবুল করেছিলেন। তাই যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে পূণ্য লাভের উদ্দেশ্যে এবাদত করবে আল্লাহ সে ব্যক্তির অতীতের সমস্ত সগিরাহ গোনাহ সন্তোষচিত্তে মার্জনা করে দেন বলে হযরতে আবু হোরায়রা হতে বর্ণিত আছে।
ফজিলত রহমত ও বরকতময় রাতের সঠিক তারিখ সবার অজ্ঞাত থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রমজানের শেষ দশদিন এতেকাফে নিমগ্ন থাকেন। শবে-কদর অনুসন্ধানই এতেকাফের মুখ্য উদ্দেশ্য। কোনও নীরব স্থানে নিরালায় বসে নিবেদিতচিত্তে মহৎ সাধনায় ধ্যানমগ্ন হওয়ার নাম এতেকাফ। ইসলামের পারিভাষিক অর্থে ইবাদতের উদ্দেশ্যে যাবতীয় সাংসারিক কাজকর্মসহ পার্থিব চিন্তা-ধান্দা ছেড়ে মসজিদে পারলৌকিক চিন্তায় বিভোর থাকাকে বলা হয় এতেকাফ।
রমজানের কুড়ি তারিখ সন্ধ্যায় এতেকাফের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে প্রবেশ করেন আর ঈদের নতুন চাঁদ দেখার পর ভঙ্গ করেন এতেকাফের কঠোর সাধনা। রমজানের বিশ্ব তারিখ থেকে শেষ রমজান পর্যন্ত এতেকাফ সুন্নতে মোয়া কায়দা। কারণ রমজানের শেষ দশদিন বিশ্বনবী এতেকাফ পালন করতেন। এতেকাফ মানুষকে আত্মবিশ্লেষণ এবং আত্মজিজ্ঞাসার সুযোগ দেয়। এতেকাফকারীর সমস্ত পাপ মার্জনা করার জন্য আল্লাহতায়ালা দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। এতেকাফ করে অসহায় মানুষ সর্বতোভাবে সকল সাংসারিক কাজকর্ম ত্যাগ করে আত্মনিবেদন করে তার প্রতিপালকর চরণতলে। তাই এতেকাফকারীর শয়ন-স্বপ্ন সব কিছুই এবাদতের মধ্যে গণ্য হয়। কারণ আল্লাহ বলেছেন যে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় আমি তার জন্য দু হাত অগ্রসর হই আর যে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।
মানুষ বৈষয়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে অখন্ড মনোযোগের সঙ্গে মহাপ্রভুর ধ্যানে লিপ্ত হোক, আল্লাহ এটাই বেশি পছন্দ করেন। জীবন ধারণের তারতম্য রেখা বজায় রেখে মানুষের চলার সার্বক্ষণিক অনুভ‚তিকে সতেজ রাখে উপাসনা। এতেকাফ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআনে এরশাদ করেছেন যে নিশ্চয়ই রাত্রি জাগরণ অসৎ প্রবণতা দূরীকরণ ও কুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি সহজ উপায়। বলা হয়, হে মানব, দিনের বেলা থাকে তোমার বহু কর্মব্যস্ততা। সুতরাং নীরব রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশে তোমার প্রভ‚কে একান্তে স্মরণ কর আর আত্মা-মন-হƒদয়কে নির্দ্বিধায় সমর্পণ কর বিশ্ব প্রভুর পদতলে।
তাই অসীম পুণ্যসঞ্চয় এবং শবে-কদরের মহান রাতের সন্ধানে মুসলমানরা রমজানের শেষ দশদিন এতেকাফ পালন করেন। এবাদতের মাধ্যমে মহিমাময় শবে-কদর অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহ যেন পবিত্র শবে-কদরের রাতের রহমত থেকে কাউকে বঞ্চিত না করেন। মহান রমজানের শুভক্ষণে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে রহমত প্রাপ্তির আশায় থাকে। শবে-কদরের বর্ষিত রহমত অগ্নিগর্ভ পৃথিবীকে করুক সুশীতল। গড়ে উঠুক শান্তি-সম্প্রীতি ও সোহার্দের মুক্ত বাতাবরণ। সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..