1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

বিশ্ব ওজোন দিবস ২০২৩

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১২৩ বার পঠিত
‘মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়ন করি - ওজোনস্তর রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করি’
দীপংকর বর

 

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ১০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত উচ্চতায় ওজোন নামক একটি গ্যাস বেশি পরিমাণে থাকায় স্তরটিকে ওজোনস্তর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই স্তরের পুরুত্ব স্থানভেদে এবং মৌসুমভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। ওজোন স্তর সূর্য থেকে বিকিরিত হয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবী ও তার জীবজগৎকে রক্ষা করে চলেছে। ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের ক্যান্সার, চোখে ছানি পড়া রোগ বৃদ্ধিসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। কৃষিজ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ভূ-পৃষ্ঠে অতিবেগুনি-বি রশ্মির মাত্রাধিক উপস্থিতি মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদজগৎ, অণুজীব ও বায়ুর গুণগতমানের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।
ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি), হ্যালন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফর্ম, মিথাইল ব্রোমাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, হাইড্রোব্রোমোফ্লোরোকার্বন ইত্যাদি গ্যাসের প্রভাবে দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে এই ওজোন স্তর। যার ফলে তৈরি হচ্ছে ওজোন হোল বা গর্ত। প্রায় সকল ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য(ওডিএস)ই অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিন হাউস গ্যাস হিসাবে চিহ্নিত। ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য ও এর বিকল্পসমূহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এ গ্যাসগুলো সাধারণতঃ রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমে, এ্যাজমা চিকিৎসায় উৎপাদিত ইনহেলারে, ফ্যান, প্লাস্টিক ফোম তৈরি ও মাইক্রোইলেকট্রিক সার্কিট পরিস্কার করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষার জন্য ওজোনস্তর রক্ষায় কাজ করা একান্ত প্রয়োজন। তাই ওজোনস্তরের ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার কমাতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ধরিত্রীকে রক্ষার লক্ষ্যে ওজোনস্তর রক্ষায় জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে ‘ভিয়েনা কনভেনশন’ গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে “মন্ট্রিল প্রটোকল” নামে এক যুগান্তকারী চুক্তি গৃহীত হয়।
ওজোনস্তর রক্ষায় গৃহীত মন্ট্রিল প্রটোকলের সর্বশেষ সংশোধনী কিগালি সংশোধনী নামে পরিচিত। এই সংশোধনীতে অধিক বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ক্ষমতাসম্পন্ন ১৮ ধরনের হাইড্রোফ্লোরোকার্বনের (এইচএফসি) ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রাথমিকভাবে প্রটোকলে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী ৮টি দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধাস্ত গৃহীত হয়। এ পর্যন্ত প্রটোকলে ১৯৯০ হতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোট ৬ বার সমন্বয় করা হয়। এ সকল সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমানে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী ৯৬টি দ্রব্যের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি রহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে মন্ট্রিল প্রটোকল ২৪টি রাষ্ট্র স্বাক্ষর করে এবং পরে জাতিসংঘভুক্ত সকল সদস্য রাষ্ট্র তথা ১৯৭টি রাষ্ট্র এ প্রটোকল ও এর সংশোধনীসমূহ অনুস্বাক্ষর করে। আজ এটি সার্বজনীন প্রটোকলের মর্যাদা লাভ করেছে।
১৯৯০ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল স্বাক্ষরের পর ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস এবং পর্যায়ক্রমে এর ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিবেশ অধিদপ্তরে ওজোন সেল গঠন করে এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এযাবৎ প্রায় ৯৩ শতাংশ ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। পরবর্তীতে এইচসিএফসি নিয়ন্ত্রণে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ব্যবহার বন্ধ করতে সক্ষম হয়। এসিআই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ্যারোসল সেক্টর ওডিএস মুক্ত করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে প্রণীত বিধিমালার আওতায় ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে; ন্যাশনাল ওডিএস ফেজ-আউট প্ল্যান-এর আওতায় রেফ্রিজারেশন সেক্টরে নিয়োজিত টেকনিশিয়ানদের জন্য রিকভারি ও রিসাইক্লিং যন্ত্র সরবরাহ; প্রশিক্ষণ প্রদান ও রেট্রোফিট কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিএফসি-১২ ভিত্তিক রেফ্রিজারেটরকে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোকার্বনভিত্তিক রেফ্রিজারেটরে রূপান্তর করা হয়েছে। ঔষধ শিল্পে ইনহেলার প্রস্তুতের ক্ষেত্রে সিএফসি ব্যবহার রোধের লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফোম সেক্টরে এইচসিএফসির ব্যবহার রোধকল্পে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে।
ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের আমদানি ও চোরাচালান রোধের লক্ষ্যে কাস্টমস কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রয়োজনীয় শনাক্তকরণ যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। বর্তমানে মন্ট্রিল প্রটোকলের আওতায় সর্বশেষ ওডিএস এইচসিএফসি ফেজ-আউটের লক্ষ্যে এইচএফসি ফেজ-আউট ম্যানেজমেন্ট প্লান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে এসি ও চিলার উৎপাদনে এইচএফসির ব্যবহার রোধ করা হবে। এছাড়া, উক্ত প্রকল্পের আওতায় টেকনিশিয়ানের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের জন্য কোড অফ প্রাকটিস প্রণয়ন, ইত্যাদি কার্যক্রম রয়েছে। উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রটোকল নির্ধারিত ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৬৭.৫০ শতাংশ এইচসিএফসি ব্যবহার হ্রাস সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ওজোনস্তর রক্ষায় সফলতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি কর্তৃক ২০১২, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য শুধুমাত্র ওজোনস্তরই ধ্বংস করে না, বিশ্বময় তাপমাত্রাও বৃদ্ধি করে। তাই বিকল্প দ্রব্য ও প্রযুক্তি যেন ওজোনস্তর ক্ষয় না করে; বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি না করে এবং শক্তি সাশ্রয়ী হয়, এসব বিবেচনা করে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এইচএফসি ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অতিশীঘ্রই জরীপ কাজ পরিচালনা করা হবে ও কিগালি সংশোধনী বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে টেকসই প্রযুক্তি নির্বাচন করে আমরা ভবিষ্যতে টেকসই উন্নয়নের দিকে আরো অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে।
ওজোনস্তর ক্ষয়রোধে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমানে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রেফ্রিজারেটর বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে সিএফসিমুক্ত ইনহেলার উৎপাদিত হচ্ছে। তাই এ্যাজমা রোগী, ডাক্তার এবং ঔষধ বিক্রেতাগণ এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে নন-সিএফসি ইনহেলার ব্যবহার করছে। যারা ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য ব্যবহার করেন, তারা এ সংক্রাস্ত সুস্পষ্ট তথ্য পণ্যের গায়ে লিপিবদ্ধ করছেন। আমাদের মা বোনেরা দেখা যায় পরিবারে ফ্রিজ বা এসি কেনার সময় সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। তারা এ বিষয়ে সচেতন হলে ফ্রিজ ও এসি কেনার সময় সিএফসি মুক্ত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ফ্রিজ ও এসি কিনতে পারেন। টেকনিশিয়ানগণ বায়ুতে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য নির্গমণ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে পারেন। আমাদের ব্যবহার্য্য যন্ত্রাদি সঠিক সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি। ওজোনস্তরের গুরুত্ব ও এর রক্ষা কিভাবে করা যায় তার জন্য যথাযথ জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জনগণের মধ্যে ওজোনস্তর রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৯৯৪ সালে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ওজোন দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ১৯৯৫ সাল থেকে দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। এবারের বিশ্ব ওজোন দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়ন করি – ওজোনস্তর রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করি’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষ্যে দৈনিক পত্রিকায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় উপমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের বাণী সম্বলিত ক্রোড়পত্র প্রকাশ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও রেডিও-তে এ বিষয় প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণে বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষ্যে একটি সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, টেলিভিশনে স্ক্রল, মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা প্রেরণের মাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জনসচেতনার জন্য সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিনকে প্রধান অতিথি করে একটি সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওজোনস্তর রক্ষায় আমদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এলক্ষ্যে ওজোনস্তরের ক্ষয়কারী সিএফসি, এইচএফসি গ্যাসসমৃদ্ধ যন্ত্রপাতির ব্যবহার বন্ধ করলে আমাদের সকলের মঙ্গল।
লেখক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র তথ্য অফিসার হিসেবে কর্মরত।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..